৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনে আজ নবম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা (অর্থনীতি) ক্যাডারে (প্রথম) সুপারিশপ্রাপ্ত জান্নাত রাহাত জুঁই।
বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগে পড়া জান্নাত রাহাত বলেন, শিক্ষকতা পেশা আমার অন্যতম পছন্দের পেশা, তাই সাধারণ শিক্ষা ছিল আমার পছন্দক্রমের শুরুর দিকে। ভাইভার ক্ষেত্রে ক্যাডার পছন্দক্রম বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। বিশেষ করে আপনার পছন্দক্রমের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাডার এবং আপনী যে বিষয়ে (স্নাতক) পড়াশোনা করেছেন, সে বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে বোর্ডে যেতে হবে। আমি যেহেতু অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি, তাই এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েই আমি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনার পাশাপাশি দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, সমসাময়িক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর উৎপত্তির কারণ, এর ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো কী কী হতে পারে এবং অর্থনৈতিক এ ধরনের সমস্যা হতে উত্তরণের উপায় ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণপূর্বক জানার চেষ্টা করেছিলাম। আমি যেহেতু উভয় (বোথ) ক্যাডারে ভাইভা দিয়েছি, তাই উপরোল্লিখিত বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বিভিন্ন ক্যাডারের কর্ম পরিধি, কার্যক্রম ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।
এ ছাড়াও নিয়মিত পত্রিকা পড়া আপনার সাম্প্রতিক বিষয়াবলির পর জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। বিসিএস পরীক্ষার শুরু হতে আমি দুটি পত্রিকা (বাংলা এবং ইংরেজি) পত্রিকা নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করেছি। পত্রিকা পড়ার পাশাপশি সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর বিষয়ে ইন্টারনেট হতে বিশদভাবে জানার চেষ্টা করতাম। পড়াশোনা করে নিজেকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি আমি মনে করি, মক ভাইভায় অংশগ্রহণ করা খুবই উপকারী। আপনার বন্ধুরা একে অন্যের ভাইভা নিতে পারেন, যা আপনাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক হবে।
ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ থেকে শুরু করে চেয়ারে বসার পূর্ব অবধি কিছু শিষ্টাচার যেমন; ভাইভা কক্ষে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করা, কক্ষে প্রবেশের পর সালাম বিনিময় করা এবং বোর্ডের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো বিজ্ঞ সদস্য বসতে বলার আগে না বসা ইত্যাদি বিষয়গুলো পরিপালন করা উচিত। এ ধরনের শিষ্টাচার ভাইভা বোর্ডে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হয়ে থাকে। আমার ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ আরও দুজন এক্সটার্নাল উপস্থিত ছিলেন। ভাইভা বোর্ডের সবাই অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। যার ফলে আমি সহজেই নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। প্রায় ২০ মিনিটের ভাইভাতে আমাকে অনেক প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল—
১.
আপনার পছন্দক্রম বলুন?
২.
আপনার অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট জ্ঞান পছন্দক্রমের প্রথম ক্যাডারের সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত বলে মনে করেন?
৩.
বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটর কয়টি এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী কত?
৪.
সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত?
৫.
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোথায় অবস্থান করছেন এবং তিনি সেখানে কেন গিয়েছেন?
৬.
এলডিসি থেকে বের হয়ে আসলে আমাদের কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে?
৭.
বর্তমান বাজেটের আকার কত? বাজেটে সরকারের আয়–ব্যয় ছাড়া আর কী দেখানো হয়? প্রতিবছর বাজেটের আকার কী হারে বাড়ানো হয়?
৮.
আমাদের দেশে অনেকগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে, তারপরও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কেন গ্রহণ করা হয়েছে?
৯.
সরকার জ্বালানির দাম কেন বৃদ্ধি করেছে?
১০.
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুদিন আগে কী ধরনের মনিটারি পলিসি গ্রহণ করেছে?
১১.
SLR এবং CRR কী?
১২.
নারীর ক্ষমতায়ন কী এবং নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী?
১৩.
বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?
১৪.
রূপকল্প ২০৪১ কী? এতে কী কী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে?
১৫.
বর্তমান সরকার কি দরিদ্রতা হ্রাস করতে পেরেছে?
১৬.
ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছে এটা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয় অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করুন।
১৭.
সরকার ফিসক্যাল পলিসি কেন নেয়?
১৮.
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কী এবং বাংলাদেশের বর্তমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট পরিস্থিতি কেমন?
একটি প্রশ্ন ব্যতীত প্রায় সব কটি প্রশ্নের উত্তরই বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দিতে পেরেছিলাম। চেয়ারম্যান মহোদয়সহ অন্য দুজন এক্সটার্নাল আমার প্রশ্নের উত্তরে সন্তুষ্ট বলে মনে হয়েছে। ভাইভার শেষে চেয়ারম্যান মহোদয় আমাকে শুভকামনা জানিয়েছিলেন।