দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে আগ্রহী প্রার্থীদের নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের লক্ষ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক আয়োজিত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। তাতে আবেদনের রেকর্ড হয়েছে। এতে ১৮ লাখের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। এত বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর আবেদন করার মাধ্যমে দেশের বেকারদের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। এনটিআরসিএ বলছে, এই আবেদন অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. এনামুল কাদের খান আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা।
এতে প্রায় ১৮ লাখ ৬৫ হাজার চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার আগে আগে আমরা শূন্য পদ বাছাই করি। সে অনুসারে এখনই পদের সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।’ পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল কাদের বলেন, নির্বাচনের পরে সুবিধাজনক সময়ে এটি নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারিক মনজুর প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি এমনই হওয়ার কথা। কারণ, প্রতিবছর নিয়মিতভাবে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হচ্ছে না। তা ছাড়া দেশে বর্তমানে সব ধরনের বেকারের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। যেকোনো ধরনের সহজ সুযোগকে তাঁরা কাজে লাগাতে চাইছে।
এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের আবেদন অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। তবে আবেদন করলেই শেষ কথা নয়; এর মধ্যে অনেকের বয়স নেই, তিনিও আবেদন করে থাকতে পারেন। এ ছাড়া যোগ্যতা নেই—এমন প্রার্থীর আবেদনও এখানে আসতে পারে। এ ছাড়া নানা ধরনের কারিগরি ভুলও করেন প্রার্থীরা। আমরা এগুলো যাচাই–বাছাই করি। সেখান থেকে কিছু প্রার্থী বাদ পড়তে পারেন। পরীক্ষার প্রবেশপত্র জারির পরে ও তা ডাউনলোডের পর প্রকৃত প্রার্থী জানা যাবে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে গত ৯ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে প্রার্থীরা আবেদন করা শুরু করেন। আবেদন শেষ হয় ৩০ নভেম্বর। আবেদনকারী যোগ্য প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ, স্থান ও সময়সূচি পরবর্তী সময়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীদের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ ধরনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার পূর্ণ সময় এক ঘণ্টা। এ পরীক্ষায় মোট ১০০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য এক নম্বর পাবেন, তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর থেকে ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পাস নম্বর ৪০। তিনটি পর্যায়ে অর্থাৎ স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ ও কলেজ পর্যায়ে পৃথক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার্থীদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
শ্রমশক্তি জরিপ: ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় দেশে বেকার ২ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। ২০২৩ অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার।
২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় স্কুল-২, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মোট ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭৮ জন পরীক্ষার্থী আবেদন করেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৬ লাখ ৮ হাজার ৪৯২ জন। এর মধ্যে স্কুল-২ পর্যায়ের পরীক্ষার্থী ৯০ হাজার ১৯১ জন, স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষার্থী ৩ লাখ ২ হাজার ৪২২ জন এবং কলেজ পর্যায়ে পরীক্ষার্থী ছিলেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৮৭৯ জন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৩৬ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে স্কুল-২ পর্যায়ে ১৫ হাজার ৩৭৯ জন, স্কুল পর্যায়ে ৬২ হাজার ৮৬৪ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ৭৩ হাজার ১৯৩ জন।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আগের তিন মাস, অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশে বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সেই সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। গত মে মাসে বিবিএস এই প্রথম প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করেছে, সেখানে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট বেকার মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার।