সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। চাকরি পেতে নিতে হবে কার্যকর প্রস্তুতি। অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার মতো বেসরকারি ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক ও কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিলে সফল হওয়া যাবে, অভিজ্ঞতা থেকে সে বিষয়ে পরমর্শ দিয়েছেন দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের অফিসার মো. নাহিদুল ইসলাম।
বেসরকারি ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষায় সাধারণত একই দিনে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের ব্যবহারিক পরীক্ষা আলাদা দিনে বা মৌখিক পরীক্ষার দিনে হয়ে থাকে। তবে কিছু ব্যাংকের পলিসিতে ভিন্নতা থাকায় কিছু পরীক্ষার ধরনের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকে। তবে প্রায় সব ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষায় শর্টলিস্ট, অনলাইন টেস্ট বা প্রাথমিক ভাইভার মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়।
সাধারণত ৮০-১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৫০-৮০ নম্বরের এমসিকিউ ও ২০-৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার হয়। ইংরেজি, গণিত ও কম্পিউটারে দক্ষ হলে বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকবেন।
সাধারণত একই প্রশ্নপত্রে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়া হয়। প্রিলির এমসিকিউ টাইপের জন্য ওএমআর শিট এবং লিখিত অংশের জন্য নির্দিষ্ট ফরম্যাটের খাতা দেওয়া হয়। এমসিকিউ শেষ করে লিখিত অংশ শুরু করতে হয়। সময় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। ব্যাংকভেদে সময় ও প্রশ্নের ধরনের বড় পরিবর্তন থাকে। তবে এমসিকিউয়ের জন্য সময় ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা এবং লিখিত অংশের জন্য ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট সময় থাকে। অনেক সময় এমসিকিউ শেষ করেই লিখিত শুরু করতে পারবেন। আবার ক্ষেত্রভেদে প্রিলির জন্য নির্ধারিত সময় পার হলেই শুধু লিখিত অংশ শুরু করতে হবে।
প্রিলিমিনারির জন্য ইংরেজি, গণিত ও মানসিক দক্ষতা, কম্পিউটার, আইসিটি ও সাধারণ জ্ঞান এ অংশগুলো থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। একেক ব্যাংকের প্রশ্নকর্তা একেক প্রতিষ্ঠানের হওয়ায় প্রশ্নের মান, মানবণ্টন ও বিষয়ে পরিবর্তন থাকে। যেমন কোনো পরীক্ষায় বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্যের ১০-১৫টা প্রশ্ন আসে আবার কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলা পুরোপুরি বাদ দিয়ে থাকে। তাই প্রতিটি সেকশনের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান রাখতে হবে। ইংরেজি ও গণিতে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং বাকি বিষয়গুলোর মৌলিক তথ্যগুলো জানা থাকতে হবে। ভালো প্রকাশনীর যেকোনো একটা বই ভালো করে রপ্ত করতে হবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি বা সাধারণ জ্ঞানের কমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো থেকে প্রশ্ন প্রায়ই আসে। এ বিষয়গুলো ভালো করে মাথায় রাখতে হবে এবং পরীক্ষার হলে ভুল করা যাবে না। মনে রাখবেন, কমন প্রশ্ন ভুল করলে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না। প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি তথ্যভিত্তিক। তাই নিয়মিত রিভিশন দেবেন। পরীক্ষার আগের সপ্তাহে অবশ্যই প্রিলির নোট খাতা বা বইয়ের দাগানো অংশ মনোযোগ দিয়ে রিভিশন দেবেন।
লিখিত অংশ ফোকাস রাইটিং নামে পরিচিত। পরিচিত বা অপরিচিত কোনো একটা বিষয়ের ওপর ফোকাস করেই লিখতে হয়। গণিত, ফোকাস রাইটিং (ইংরেজি ও বাংলা), অনুবাদ (ইংরেজি ও বাংলা) লিখিত অংশের প্রধান বিষয়। এককথায় উত্তর সাধারণ জ্ঞানও আসতে পারে। তবে দুটি গণিত, একটা বাংলা ফোকাস রাইটিং, একটা ইংরেজি ফোকাস রাইটিং, ইংরেজিতে একটি আর্গুমেন্ট ও বাংলা থেকে ইংরেজি বা ইংরেজি থেকে বাংলার একটি অনুবাদ থাকে লিখিত পরীক্ষায়। নিয়মিত গণিত চর্চা, ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং ও অনুবাদে দক্ষ হলে এই সেকশনে ভালো করতে পারবেন। উত্তরগুলো ধারাবাহিকভাবে লেখার চেষ্টা করবেন।
বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ হওয়া উচিত। বেশি লিখলে বেশি নম্বর পাবেন বা খাতা ওজন করে নম্বর দেওয়া হয়—ওই দিন শেষ। প্রাসঙ্গিক উক্তি, তথ্য ও গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। বাংলা ও ইংরেজি বানানে সতর্ক হন। মনে রাখবেন, যতই ভালো লেখেন না কেন বানান ভুল পেলে পরীক্ষকেরা খাতা দেখে বিরক্ত হন। ফলে নম্বর কমে যায়। পৃথিবীর সবকিছুই মুখস্থ করতে যাবেন না। এখানে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং গুরুত্বপূর্ণ। নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে বাংলা ও ইংরেজি অংশে নিজের মতো করে বিভিন্ন বিষয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিছু টেম্পলেট মুখস্থ রাখতে পারেন।
যেমন অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসলে কোনো উক্তি বা কবিতা দিয়ে শুরু করলে উত্তরটা যথাযথ হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে পারেন। প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি বাংলাদেশ সংবিধান কোন ধারায় থাকলে, তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না। অর্থনৈতিক সমীক্ষা বা বিবিএসের কোনো তথ্য জানা থাকলে তা প্রয়োগ করুন। লেখায় কালো কালির কলম ব্যবহার করুন। তবে উক্তি বা বিশেষ কোনো তথ্যে নীল রং ব্যবহার করতে পারেন। মানচিত্র বা ডায়াগ্রাম যথাযথ না পারলে এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে ভুল মানচিত্র বা ডায়াগ্রাম না দেওয়াই ভালো।
ধারাবাহিক সমজাতীয় তথ্যের ক্ষেত্রে পাই চার্ট বা অন্য কোনো চার্ট ব্যবহার করতে পারেন। গুগল করলেই অনেক চার্ট পাবেন। কোন ধরনের তথ্যের জন্য কোন চার্ট ব্যবহার করবেন, তা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখুন, এত করে পরীক্ষার হলে চাপ কমবে।
মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, বাচনভঙ্গি, ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা, কম্পিউটারের জ্ঞান, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের বিষয়ের মৌলিক জ্ঞান ইত্যাদি যাচাই করা হয়। চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে যে বিষয়ে কাজ করেছেন, তা ভালোভাবে জেনে যাবেন। কেন ছাড়তে চান, এই প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি কোনো নেগেটিভ উত্তর দেবেন না। কোনো অভিযোগ বা যথাযথ কারণ থাকলে তা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন। কোনো মুখস্থ উত্তর দিতে যাবেন না। প্রশ্ন ভালো করে শুনে নিজের বিবেক, বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিকতা পরিহার করে প্রাসঙ্গিক উত্তর দিন। পুরুষ বা নারী যেই প্রশ্ন করুক ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করুন। উত্তর জানা না থাকলে সরাসরি ‘দুঃখিত’ বলবেন। জানার ভান করবেন না। তবে পরিসংখ্যান জানতে চাইলে মনে না থাকলে বলতে পারেন এই মুহূর্তে মনে আসছে না। ভাইভা বোর্ডে তর্কে জড়াবেন না, উত্তপ্ত হবেন না। তবে প্রাসঙ্গিক যুক্তি থাকলে অনুমতি নিয়ে বিনয়ের সঙ্গে বলতে পারেন।