সহকারী জজ নিয়োগে গেজেট হয়নি ১৫ ব্যাচের, তবু ১৬ ব্যাচকে সুপারিশ

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) অধীন সহকারী জজ নিয়োগের ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ফলে ১০৪ প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সাময়িকভাবে সুপারিশ করা হয়।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ১৫তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে ১০৩ প্রার্থীকে সাময়িকভাবে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আট মাস হলেও তাঁদের নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। গেজেট না হওয়ায় চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না তাঁরা। এ কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীরা।

১৫তম বিজেএসের সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এভাবে একসঙ্গে দুই ব্যাচকে সুপারিশপ্রাপ্ত না রেখে তাঁদের গেজেট দ্রুত আশা করেছিলেন। তাঁদের গেজেট আগে হয়ে গেলে পরের ব্যাচের গেজেটও দ্রুত হতো। এতে দুই ব্যাচের প্রার্থীরা উপকৃত হতেন। আগে প্রায় সব বিজেএস পরীক্ষার উত্তীর্ণদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এক ব্যাচের নিয়োগ দিয়ে পরের ব্যাচকে সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও গেজেট না হওয়ায় বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১৫তম ব্যাচের ১০৩ জনকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৫তম বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত এক প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনেও গেজেট না হওয়ায় পরিবার ও সমাজের লোকজনের কাছে কটু কথা শুনতে হচ্ছে। সত্যিই চাকরি পেয়েছি কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে তারা। চাকরি নিয়ে মিথ্যা বলেছি বলে অপবাদ শুনতে হচ্ছে। অনেক দ্রুত প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা নেওয়ার পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গেজেট আটকে আছে। এই বিচারকদের দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হলে মামলাজট কমাতে অবদান রাখতে পারত। গেজেটের জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের!’

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ১৫তম বিজেএসের মাধ্যমে সহকারী জজ নিয়োগের জন্য গত বছরের ১২ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গত বছরই প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা নেয়। গত ১৯ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এ ফল প্রকাশের আট মাস পেরিয়ে গেলেও গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।

১৬তম বিজেএসের মাধ্যমে ১০০ সহকারী জজ নিয়োগের জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত ২৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। ৯৯ থেকে ১০৪তম মেধা অধিকারী প্রার্থী একই নম্বর পাওয়ায় নিয়োগসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ১০০ প্রার্থীর সঙ্গে অতিরিক্ত ৪ জনসহ মোট ১০৪ জনকে সাময়িকভাবে সুপারিশ করা হয়।

সহকারী জজ নিয়োগের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর ২০০৭ সালে এ কমিশন গঠিত হয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, নিম্ন আদালতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বলছেন, নিম্ন আদালতে মামলাজট তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ নতুন বিচারক নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা দ্রুত চাকরিতে যোগ দিতে পারলে এ জট কমত।

বিজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ও চতুর্থ বিজেএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দুই থেকে চার মাসের মধ্যে যাচাই প্রতিবেদন শেষ হয়েছিল। তাই দুবার কম সময়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকে পুলিশি যাচাই প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সময় বেশি লাগছে, এ জন্য নিয়োগপ্রক্রিয়ার সময় বাড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ১৫তম ব্যাচের গেজেট প্রকাশের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত গেজেট প্রকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুটি ব্যাচ সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় নিয়োগপ্রক্রিয়া বিলম্ব হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক ব্যাচের কারণে আরেক ব্যাচের নিয়োগে বিলম্ব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আগের মতোই যথাসময়ে গেজেট প্রকাশিত হবে।