বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)

যে দুই বিসিএস এখন পিএসসির কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে

বিসিএসের ফল দেওয়ার জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দুটি বিসিএসকে প্রধান্য দিচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ বছরের মধ্যে ফল প্রকাশ করে অনেকটাই নির্ভার হয়ে অন্য বিসিএসের ফলও দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে পিএসসির। এই দুই বিসিএস হচ্ছে ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএস। ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা শুরু হয়েছে আর ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখছেন দ্বিতীয় পরীক্ষক। 

সম্প্রতি পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসকে তিনি গুরুত্ব দিয়ে এই দুই বিসিএসের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। 

পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বিসিএস শেষ পর্যায়ে এসে গেছে। ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা চলছে আর ৪৫তম বিসিএসের খাতা দেখা চলছে। এ দুটি শেষ করার বিষয়ে আমাদের বিশেষ মনোযোগ রয়েছে।’ এ দুটির ফল দ্রুত দেওয়া গেলে অন্য বিসিএসের কার্যক্রমে গতি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

৪৫তম বিসিএসে প্রথম পরীক্ষকের খাতা দেখা শেষ। অনেকে যাচাই-বাছাইও শেষ করেছে। সেগুলো এখন দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে গেছে। কিছু কিছু পরীক্ষক তো দ্বিতীয় পরীক্ষকের খাতা জমাও দিচ্ছেন
পিএসসি পরীক্ষা শাখার কর্মকর্তা

কী অবস্থায় ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা

৪৪তম বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষার তারিখ ও ভাইভার সিডিউল প্রকাশ করেছে পিএসসি। ভাইভা শুরু হয়েছে গত ৮ মে। উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা চলছে। প্রথমে সাধারণ ক্যাডারের প্রার্থীদের ভাইভা নেওয়া হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ৯০ জন করে প্রার্থীর ভাইভা হচ্ছে। আগামী ৯ জুলাই থেকে প্রতিদিন ১৮০ জন প্রার্থীর ভাইভা নেবে পিএসসি, চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।

৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৪তম বিসিএসের অনলাইন আবেদন শুরু হয়, আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি। পরে তা বাড়িয়ে ২ মার্চ নির্ধারণ করে পিএসসি। এরপর ২০২২ সালের ২৭ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ২৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের মাধ্যমে রেকর্ড করে পিএসসি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৭০৮ পরীক্ষার্থী পাস করেন।

৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১০, আনসার ক্যাডারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ক্যাডারে ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।

দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে ৪৫তম বিসিএসের খাতা

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ করেছে প্রথম পরীক্ষক। সেগুলো পরীক্ষা করে তা দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো শুরু করেছে পিএসসি। পিএসসি জানিয়েছে, দ্রুতই ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এখন এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার কার্যক্রম চলছে। খাতার অবস্থান কোথায় বা কার কাছে আছে, এ ছাড়া কাদের কাছে খাতা আছে, সে বিষয়ে সবশেষ তথ্য জানিয়েছে পিএসসি। খাতা দেখার কার্যক্রমের বিষয়ে এবার কিছুটা কঠোর হয়েছে পিএসসি। পরীক্ষকদের সময়ের মধ্যেই খাতা জমা দেওয়ার বিষয়ে জোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পিএসসি সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি পরীক্ষা শাখার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ৪৫তম বিসিএসে প্রথম পরীক্ষকের খাতা দেখা শেষ। অনেকে যাচাই-বাছাইও শেষ করেছে। সেগুলো এখন দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে গেছে। কিছু কিছু পরীক্ষক তো দ্বিতীয় পরীক্ষকের খাতা জমাও দিচ্ছেন। এবার কঠোর বার্তা দেওয়ার কথা বলে ওই কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষকদের সময়ের মধ্যে খাতা দেখা শেষ করার তাগিদ দেওয়া আছে। ব্যত্যয় হলে পিএসসি আর তাঁদের খাতা দেবে না। ৪৫তম বিসিএসের খাতা যথাসময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ওই কর্মকর্তা।

২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। গত বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। লিখিত পরীক্ষা ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়, শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আবেদনকারী ৩ লাখ ৪৬ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন। পরীক্ষা দেননি ৭৮ হাজার ৮০৩ জন। উপস্থিতির হার ৭৭ দশমিক ২৪।

৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জন। ৪৫তম বিসিএসে ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪ ও প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।