বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির দরকারি নানা তথ্য

মানসম্মত কাজের পরিবেশ বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির অন্যতম বৈশিষ্ট্য
ছবি: প্রথম আলো

উচ্চ বেতন, দ্রুত পদোন্নতি, সামাজিক মর্যাদা ও চাকরির নিরাপত্তা বিবেচনায় বর্তমানে তরুণ-তরুণীরা বেসরকারি ব্যাংকে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন। বেসরকারি ব্যাংক করপোরেট সেক্টরের অন্যতম বড় চাকরির বাজার। বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি পেতে দরকার চাকরি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশোনা। বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির পদ-সোপান, বেতন, পদোন্নতি , কর্মপরিবেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো। 

নিয়োগের ধরন

শর্ট লিস্ট, প্রিলি, লিখিত ও একাধিক ভাইভার মাধ্যমে বেসরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন পদে প্রার্থী নিয়োগ করা হয়। অধিকাংশ ব্যাংকে স্থায়ী, অস্থায়ী, এইচআর কন্ট্রাকচুয়াল বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরির ধরন ও ব্যাংকভেদে এক বা দুই বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে স্থায়ী হতে হয়। জেনারেল ব্যাংকিং ও ক্যাশ মূলত এই দুই সেক্টরে বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু টেকনিক্যাল পদ যেমন আইটি, লিগ্যাল, অডিট, এইচআর ইত্যাদি সেকশনেও প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়। 

যেসব পদে নিয়োগ 

বেসরকারি ব্যাংকে নিয়োগযোগ্য চাকরির পদগুলো হলো অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেইনি অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট  ক্যাশ অফিসার, জুনিয়র ট্রেইনি অফিসার বা জুনিয়র ক্যাশ অফিসার, অফিসার, প্রবেশনারি অফিসার (পিও) বা ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (এমটিও)। তবে ব্যাংকভেদে এই পদগুলোর নামে  ভিন্নতা দেখা যায়। সিনিয়র অফিসার থেকে এমডি পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। উচ্চ পদগুলোতে নিজ ব্যাংকের অভিজ্ঞ যোগ্য প্রার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। 

বেতন  

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ব্যাংকের এইচআর থেকে নিয়োগকৃত শিক্ষানবিশ বা স্থায়ী কোনো জেনারেল ব্যাংকিংয়ের অফিসারের বেতন ২৮ হাজার টাকার নিচে দেওয়া যাবে না এবং অফিসার ক্যাশ পদে বেতন ২৬ হাজারের নিচে দেওয়া যাবে না। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেইনি অফিসারদের বেতন সাধারণত ২৮-৩৫ হাজার হয়ে থাকে। অফিসারদের বেতন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং এমটিও বা পিওদের বেতন ৪৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে অনেক ব্যাংক থার্ড পার্টির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে এই ন্যূনতম বেতনের কম দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে এক, দুই বা তিন বছর থার্ড পার্টির মাধ্যমে চাকরি করার পর যোগ্যতা ও পারফরম্যান্স অনুযায়ী কর্মরত ব্যাংকে চাকরি স্থায়ী করা হয়।

পদোন্নতির ধাপ

অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার/জুনিয়র অফিসার থেকে অফিসার, অফিসার থেকে সিনিয়র অফিসার এভাবে চলতে থাকে। ব্যাংকভেদে পদোন্নতির সময়ের ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণত প্রতিটি পদে দুই থেকে পাঁচ বছর চাকরি করলে পরের ধাপে পদোন্নতি হয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সিনিয়র অফিসার থেকে পরবর্তী পদে পদোন্নতি পেতে নির্দিষ্ট সময় পার করার পাশাপাশি ব্যাংকিং ডিপ্লোমা থাকতে হবে। ব্যাংকগুলোতে এসিআর বা কেপিআই অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়েও পদোন্নতি হয়ে থাকে। 

কাজের চাপ ও পরিবেশ

মানসম্মত কাজের পরিবেশ বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সুশৃঙ্খল, প্রফেশনাল ও প্রতিযোগিতামূলক সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে বেসরকারি ব্যাংক। পেশাদার কর্মী হতে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দেয়। কাজের পরিবেশ মোটামুটি সব বেসরকারি ব্যাংকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর। কাজের চাপ নির্ভর করে কাজের ধরন, ব্যাংকের শাখা, স্থান ও ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী। তবে কাজের চাপ আছে, টার্গেট আছে। 

অন্যান্য সুবিধা

মোট বেতন নির্ধারণ করা হয় বেসিক স্যালারির সঙ্গে নির্দিষ্ট শতাংশ বাড়িভাড়া, মেডিকেল ভাতা, টিএ-ডিএ, মোবাইল বিল ইত্যাদি একত্রে যোগ করে। এ ছাড়া ঈদ বোনাস, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেতন ইনক্রিমেন্ট, ইনসেনটিভ, হাউস লোন, কার লোন, চার্জ ফ্রি ক্রেডিট কার্ড, উচ্চশিক্ষা, বিদেশ ভ্রমণ ও নববর্ষ ভাতা ইত্যাদি সুবিধা পেয়ে থাকেন ব্যাংকাররা। তবে এই সুবিধাগুলো ধাপে ধাপে ও নির্দিষ্ট সময় পার হলে পেয়ে থাকেন এবং ব্যাংকভেদে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়।   

লেখক দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডে কর্মরত