৪৪তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা চলবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এখন প্রতিদিন ৯০ জনের ভাইভা হচ্ছে। ৯ জুলাই থেকে প্রতিদিন ১৮০ প্রার্থীর ভাইভা নেবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ অষ্টম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত (মেধাক্রম ৫৬) এ টি এম রুহুল আমিন।
বর্তমানে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন/মানবসম্পদ) হিসেবে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এ কর্মরত আছেন এ টি এম রুহুল আমিন। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ৪৩তম বিসিএসের ভাইভা দেন। এ বিসিএসে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন ক্যাডার, দ্বিতীয় পুলিশ ক্যাডার। ভাইভায় অধিকাংশ প্রশ্নই ছিল আলোচনামূলক। তাঁকে ১৩-১৪টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮-৯টির সঠিক উত্তর দিতে পারেন।
এ টি এম রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইভার দিনে আমার ক্রমিক নম্বর ছিল ১৪। চেয়ারম্যান স্যার আগের প্রায় সবাইকে নিজ নিজ বিষয় থেকে প্রশ্ন করেছিলেন। আমার নিজের বিষয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তাই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ১৫-১৬ মিনিট ভাইভা হয়।’
এ টি এম রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার ভাইভা তুলনামূলক কঠিন ছিল। প্রশ্নের প্যাটার্ন দেখে অ্যাটাকিং মনে হলেও আমার বিশ্বাস আমি খুব ভালোভাবেই উত্তর দিতে পেরেছিলাম। আমার উত্তর শুনে বোর্ডের স্যারদের মোটামুটি সন্তুষ্ট মনে হচ্ছিল। কঠিন ভাইভা ফেস করতে এটি অনেক প্রার্থীকে সাহস জোগাবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতক করেন এ টি এম রুহুল আমিন। তাই ভাইভার শুরুতেই মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
‘আপনি কি নিজেকে নেসকো–ডেসকোর কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি যোগ্য মনে করেন?’ রুহুল আমিন ‘হ্যাঁ–সূচক’ উত্তর দিলে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ‘কেন মনে করেন?’ তখন তিনি উত্তর দেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ একদম মার্জিনাল লেভেলে গ্রাহকসেবা দেয়। এখানে প্রান্তিক মানুষকে সেবা দিতে হয় এবং তাদের সাথে ডিল করা নেসকো–ডেসকোর গ্রাহকদের ডিল করার থেকে অধিক দক্ষতার দাবি রাখে।’
‘মাইক্রোবায়োলজি থেকে কি প্যাথোলজিতে যাওয়ার সুযোগ নেই?’ এমন প্রশ্নে রুহুল আমিন বলেন, ‘স্যারের কথা কিছুটা কম স্বরে শোনা যাচ্ছিল। ভেবেছিলাম, তিনি জিজ্ঞেস করছেন, মাইক্রোবায়োলজিতে প্যাথোলজি পড়ানো হয় কি না। তাই বলি, “জি স্যার, প্যাথোলজি পড়ানো হয়।” এরপর স্যার বলেন, “প্রশ্ন শোনার আগেই উত্তর করছেন কেন?”’
এ টি এম রুহুল আমিন বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে মাইক্রোবায়োলজিস্ট থাকেন। তবে সাধারণত চিকিৎসকদের নিয়োগ করা হয়।’ পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ‘সুযোগ আছে কি না, সেটা বলেন।’ তিনি উত্তর দেন, ‘থিওরেটিক্যালি সুযোগ থাকলেও বাস্তবে সুযোগ সীমিত।’
সম্পূরক প্রশ্ন করা হয়, ‘তাহলে মাইক্রোবায়োলজিস্ট না হওয়া আপনার জন্য অপচয় না?’ রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার স্নাতকের বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরিতে যেতে পারলে নিশ্চয় অর্জিত জ্ঞানের পূর্ণ ব্যবহারের সুযোগ থাকত। তবে ক্যারিয়ার বিবেচনায় আমি অপচয় মনে করছি না।’
‘প্রশাসন ক্যাডারে কেন আসতে চান?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘ভালো ক্যারিয়ার এবং জনসেবা করার ইচ্ছা থেকে এ ক্যাডারে আসতে চাই।’ বোর্ড থেকে এ সময় জানতে চাওয়া হয়, ‘কোচিং সেন্টারের শেখানো উত্তর বলেন কেন? বাজে জায়গায় পোস্টিং দিলে তো জনসেবা ভুলে বলবেন, এখানে কেন পোস্টিং দিল?’
এ টি এম রুহুল আমিন উত্তর দেন, ‘আমি চাকরিরত থাকায় কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। আর দেশের যেকোনো জায়গায় চাকরি করার মতো মানসিক প্রস্তুতি আছে আমার।’
‘আমরা কি খাদ্য আমদানি করি? সিরিয়াল কী?’ উত্তরে রহুল আমিন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা খাদ্য আমদানি করি। আর সিরিয়াল মানে কোনো কিছুর ক্রম।’ তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হয়, ‘সিরিয়াল কী?’ তিনি বলেন, ‘সিরিয়াল বলতে কোনো কিছুর তালিকায় অগ্রাধিকারক্রমকে বুঝায়।’ বোর্ড আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি সিরিয়াল বুঝতেছেন না?’ তিনি সরি বলেন। তখন বোর্ড প্রশ্ন করে, ‘খাদ্যের মধ্যে সিরিয়াল (Cereal) কী?’ রুহুল আমিন বলেন, ‘উচ্চারণ বুঝতে কষ্ট হওয়ায় আমি প্রশ্ন বুঝতে পারিনি। সিরিয়াল বলতে দানাশস্যকে বোঝায়।’
‘আমাদের গম কতটুকু আমদানি করতে হয়?’ উত্তরে বলেন, ‘৫০ লাখ থেকে ৭০ লাখ টন।’ ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত আমাদের?’ উত্তর দেন, ‘৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।’ ‘এটার মানে কী?’ তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরের চেয়ে আমাদের জিডিপি ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘এর ফ্যাক্টরগুলো কী কী?’ তিনি বলেন, ‘স্যার, আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক (উত্তর শেষ করার আগেই পরের প্রশ্নে চলে যান)।
বোর্ড তাঁকে প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা ধরুন, একজনের আয় ২ হাজার টাকা,আরেকজনের ১ লাখ টাকা। এতে কি মাথাপিছু আয় রিফ্লেক্ট করে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘না স্যার। এখানে আয়বৈষম্য স্পষ্ট, অর্থাৎ গিনি সহগের মান উচ্চ।’ ‘আমাদের জনসংখ্যা আমাদের জন্য বোঝা না সম্পদ?’ তিনি বলেন, ‘প্রপার ইউটিলাইজ করতে পারলে সম্পদে পরিণত হবে।’ ‘ক্লিয়ারলি বলেন, বোঝা না সম্পদ?’ রুহুল উত্তর দেন, ‘যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে অবশ্যই সম্পদ।’
বোর্ড প্রশ্ন করে, ‘আপনি যে বললেন, বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে এসে জনসেবা করতে চান, এটা তো রাজনীতি থেকেও করা যায়, তাহলে রাজনীতি করেননি কেন?’ উত্তরে রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি প্রথমে নিজেকে একাডেমিক্যালি সাউন্ড করতে চেয়েছি।’
সম্পূরক প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি কি বলতে চান, রাজনীতিবিদেরা একাডেমিক্যালি সাউন্ড না?’ তিনি বলেন, ‘তা না স্যার। অবশ্যই আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ উচ্চশিক্ষিত। তবে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পড়ালেখাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হয়।’
‘কেন রাজনীতিবিদেরা কি সব বড়লোক পরিবার থেকে আসেন?’ তিনি বলেন, ‘না স্যার। তবে রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা বেশি।’ এরপর বোর্ড রুহুল আমিনকে বলেন, ‘আপনি চ্যালেঞ্জ নিতে চাননি, সেটা বলেন।’ তিনি উত্তর দেন, ‘জি স্যার, আমার পারিপার্শ্বিকতায় তা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং।’
‘তাহলে চাকরিতে চ্যালেঞ্জ নেবেন কীভাবে?’ রুহুল আমিন উত্তর দেন, ‘আমার বিশ্বাস উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আমাকে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’
‘আচ্ছা, আপনি যে বললেন, প্রপার ইউটিলাইজেশন করলে জনসংখ্যা সম্পদ হবে। প্রপার ইউটিলাইজেশন কেন হচ্ছে না?’ এমন প্রশ্নে রুহুল বলেন, ‘সত্যি বলতে আমাদের সরকার যে পলিসিগুলো গ্রহণ করে, রুট লেভেলে সেগুলোর শতভাগ বাস্তবায়ন হয় না।’ তখন বোর্ড বলে, ‘না, না, রুট লেভেল না, বলেন, পলিসি ইন্টারভেনশনটা কোথায় হচ্ছে?’ রহুল বলেন, ‘সরি স্যার...আমি গুছিয়ে বলতে পারছি না।’
‘বিদ্যুতের ডিসট্রিবিউশন সিস্টেম সম্পর্কে বলেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘প্রথমে পিডিপিসহ জেনারেশন কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। পিজিসিবি তা ট্রান্সমিশন করে। আর ছয়টি ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থা তা গ্রাহকপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।’
‘আপনি কি নিজেকে নেসকো–ডেসকোর কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি যোগ্য মনে করেন?’ রুহুল আমিন ‘হ্যাঁ–সূচক’ উত্তর দিলে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ‘কেন মনে করেন?’ তখন তিনি উত্তর দেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ একদম মার্জিনাল লেভেলে গ্রাহকসেবা দেয়। এখানে প্রান্তিক মানুষকে সেবা দিতে হয় এবং তাদের সাথে ডিল করা নেসকো–ডেসকোর গ্রাহকদের ডিল করার থেকে অধিক দক্ষতার দাবি রাখে।’
‘এআই এলে আমরা কীভাবে এটা ফেস করব?’ তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে আমাদের প্রায় সব জনগণ এখন প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিয়েছে। আমাদের মঞ্চ প্রস্তুত। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।’
‘আচ্ছা, মাইক্রোবায়োলজিতে কার কার বই পড়েছেন? ব্যাকটেরিয়ার টেস্ট গ্রাম স্ট্যাইনিং কেন করা হয়?’ এসব প্রশ্নের উত্তরে রুহুল বলেন, ‘দ্যুবে, টরটরা, অ্যাটলাস-বার্টার বই পড়েছি। ব্যাকটেরিয়াকে ভাগ করার জন্য গ্রাম স্ট্যাইনিং করা হয়।’
বোর্ড পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘ব্যাকটেরিয়াকে ভাগ করে লাভ কী?’ উত্তর না জানায় সরি বলেন তিনি। ই.কোলাই সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, ‘রড শেইফড গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া...মোস্টলি স্টাডিড ব্যাকটেরিয়া...আধুনিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এই ব্যাকটেরিয়ার ওপর গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।’ তখন তাঁর কাছে এর প্রপাগেশন জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘সাধারণত বাইনারি ফিশন বা বাডিং।’
‘সালফোড্রাগ কিসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়?’ উত্তর না জানায় সরি বলেন। বোর্ড তাঁকে অপশন দেয়—ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া/ফানজিতে ব্যবহার করা হয়। তিনি আন্দাজ করে ফানজি বলেন। তখন বোর্ড বলে, ‘কনফিউজড কেন? এত তাড়াতাড়ি কনফিউজড হয়ে গেলে চলবে?’