৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা আগামী ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নেবে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ তৃতীয় পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত শেখ রায়হানা ইসলাম।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন শেখ রায়হানা ইসলাম। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। ৪১তম বিসিএস তাঁর প্রথম বিসিএস। প্রথম বিসিএসেই সফলতা পেয়েছেন।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা দেন শেখ রায়হানা ইসলাম। যেহেতু প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, তাই বেশির ভাগ প্রশ্ন ইংরেজিতে করা হয়। ২০টির বেশি প্রশ্ন করা হয়েছিল। দু–একটি বাদে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছিলেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এবং চীন ও ভারতের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল শেখ রায়হানা ইসলামকে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা কী ছিল, সেটিও জিজ্ঞাসা করা হয় রায়হানাকে।
শেখ রায়হানা ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর স্বতন্ত্রভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, ফলে বোর্ড সন্তুষ্ট হয়েছিল। আমার রোল শেষের দিকে ছিল। ভাইভা দিয়ে প্রার্থীরা একে একে বের হয়ে যেতে থাকলে টেনশন বাড়তে থাকে। মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি, যেকোনো কিছু মোকাবিলা করার জন্য। তবে ছোটবেলা থেকে বিতর্ক, আবৃত্তি, বক্তৃতা ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে ভাইভা নিয়ে ভয় পাইনি। মৌখিক পরীক্ষায় আমার পঠিত বিষয়, সাম্প্রতিক বিষয় এবং প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।’
মৌখিক পরীক্ষায় শেখ রায়হানা ইসলামকে প্রথম প্রশ্ন করা হয়েছিল, একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনি কীভাবে ফরেন সার্ভিসে অবদান রাখতে পারেন? চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্মার্ট বাংলাদেশ, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও গবেষণায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গুরুত্ব এবং এসবের মাধ্যমে ফরেন সার্ভিসে অবদান রাখার কথা বলেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে কী কী প্রভাব পড়েছে? এর উত্তরে শেখ রায়হানা ইসলাম জ্বালানিসংকট, বিদ্যুৎ–সংকট ও রিজার্ভ কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এবং চীন ও ভারতের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা কী ছিল, সেটিও জিজ্ঞাসা করা হয় রায়হানাকে।
শেখ রায়হানা ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, খেলাধুলার সঙ্গে দেশপ্রেমের সম্পর্ক আছে কি না? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, খেলাধুলার সঙ্গে দেশপ্রেম জড়িত। আমাদের জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা যখন খেলেন, তাঁরা আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, দেশের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করেন। দেশপ্রেম থেকেই তাঁরা পেশাদারত্বের বাইরে আবেগ এবং নিজেদের সবোর্চ্চটা দিয়ে জেতার চেষ্টা করেন।’
খেলাধুলার সঙ্গে কি রাজনীতি থাকা উচিত, সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছিল? এর উত্তরে শেখ রায়হানা ইসলাম বলেন, ‘আমার মনে হয়, খেলাধুলা শুধু নির্মল আনন্দ লাভের একটি মাধ্যম। এর মধ্যে রাজনীতি না থাকাই শোভনীয়।’
বইয়ে নেই এ রকম মাঠ প্রশাসনের একটি চ্যালেঞ্জ জানতে চাওয়া হয়েছিল রায়হানা ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, একজন ম্যাজিস্ট্রেট যখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যে সমন্বয় করতে হয়, সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি উৎসাহের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।
স্নায়ুযুদ্ধ কেন হয়েছিল এবং এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। এরপর জানতে চাওয়া হয় মানসিকতা আর স্বার্থের মধ্যে কী পার্থক্য? তিনি বলেন, মানুষ ও পরিবেশ ভেদে স্বার্থ পরিবর্তিত হয়। কিন্তু মানসিকতা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের তিনজন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীর নাম জানতে চাইলে তিনি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক ও পাপিয়া সরোয়ারের নাম বলেন। এ ছাড়া তিনজন নজরুলসংগীতশিল্পীর নামও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
আগামীকাল পড়ুন: ৪১তম বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া একজনের ভাইভার অভিজ্ঞতা