চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছেন, মনে রাখুন এই ৫ বিষয়

ক্যারিয়ারের নানা বাঁকবদলের জন্য অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেন। কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আর মানিয়ে চলা অসম্ভব বা অন্য প্রতিষ্ঠানে মোটা বেতনে চাকরির অফারসহ নানা কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেন বা চিন্তা করেন। চাকরি পরিবর্তন জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি হতে পারে আর্থিক। আবার তা ব্যক্তিগত জীবনেও ফেলে অনেক প্রভাব। তাই চাকরি পরিবর্তনের কথা ভাবলে বা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হয় চাকরিজীবীকে। চাকরি ছেড়ে দেওয়া জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আর্থিক স্থিতিশীলতা, ক্যারিয়ারের গতিপথসহ নানা দিক এতে প্রভাবিত হতে পারে। কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাই বিবেচনা করতে হবে পাঁচটি বিষয়। জেনে নেওয়া যাক সেসব বিষয়।

১. আর্থিক প্রস্তুতি

চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি পেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু এ সময় তো নিত্যদিনের খরচ বন্ধ থাকবে না। তাই জমানো অর্থকড়ি কেমন আছে, তা দেখে নিন। তাড়াহুড়া করে বর্তমান চাকরি ছেড়ে দেবেন না। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আগে জীবনযাত্রার খরচ অন্তত তিন থেকে ছয় মাস করা যায়, এমন যথেষ্ট সঞ্চয় আছে, তা নিশ্চিত হয়ে নিন। এ অর্থ আপনাকে আপনার প্রতিদিনের খরচ পরিচালনা করতে সাহায্য করবে, যখন আপনি উপযুক্ত নতুন চাকরি খুঁজছেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন, কিন্তু হাতে কোনো চাকরির অফার নেই—এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিমা, অবসর গ্রহণের পর কী কী পাবেন এবং অন্য সুবিধাগুলো মূল্যায়ন করুন।

২. ক্যারিয়ারে প্রভাব

চাকরির–বাজার নিয়ে গবেষণা করুন। সুযোগগুলো নিয়ে আপনার কাজের প্রোফাইলের সঙ্গে বেতন এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে ভাবুন। এ প্রক্রিয়া আপনাকে সঠিক চাকরি ও বেতনের প্যাকেজ খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে। তাড়াহুড়া করে বর্তমান চাকরি ছেড়ে দেবেন না; পরিবর্তে কীভাবে আপনি পেশাগতভাবে উন্নতি করতে চান বা এটি কর্মজীবনে নিজেকে সেট করতে পারেন, সেটা নিয়ে ভাবুন।

৩. ব্যক্তিগত সুস্থতা

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বর্তমান কাজের প্রভাব মূল্যায়ন করুন। যদি চাকরির কারণে মানসিক চাপ বা স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে পড়েন, তাহলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি চাকরি ছেড়ে দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ছাড়া চাকরি কীভাবে আপনার ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সুসম্পর্ককে প্রভাবিত করে, তা বিবেচনা করুন। আপনার কাজের কারণে যদি বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের জন্য সময় বের না করে আপনাকে নিঃসঙ্গ করে তোলে, তাহলে এটি ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করা যেতেই পারে। এরপর এমন একটি চাকরি খোঁজা আপনার উচিত, যেন আপনার কর্মজীবনের ভারসাম্যকে রক্ষা করে চলে।

৪. কাজের পরিবেশ

আপনি যদি মনে করেন, আপনার বর্তমান কাজের জায়গাটির পরিবেশ ভালো নয় বা অনেক অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে, যা আপনাকে মানসিক ও ভাবাবেগে প্রভাবিত করছে বা আপনার কর্মজীবনের বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করছে, তাহলে পরিবর্তনের পরিকল্পনা ভালো বিকল্প হতে পারে। কিন্তু যে চাকরি ছেড়ে নতুন সংস্থায় যাচ্ছেন, সেখানকার পরিবেশ কেমন, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। যে অসুবিধার জন্য চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা ছাড়ছেন, একই সমস্যা যদি নতুন জায়গাতেও থাকে, তাহলে আর লাভ কী। পাশাপাশি চাকরি ছাড়ার আগে চাকরির বিকল্পের বিষয়েও ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। আর যথাযথ নোটিশ দেওয়া এবং আপনার দায়িত্বগুলো সম্পূর্ণ করাসহ স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

৫. বিকল্প কি

চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বর্তমান সংস্থা বা চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে অন্য ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে কি না, তা ভেবে দেখার চেষ্টা করুন। টাকা যদি আপনার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে থাকে, তাহলে নিয়োগকর্তার সঙ্গে আপনার উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করার কথাও বিবেচনা করুন। কখনো কখনো বেতন ও কাজের চাপ বা কাজের দায়িত্বের মতো সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

চাকরি ছাড়লে আপনার ক্যারিয়ারে কী প্রভাব ফেলতে পারে, সেদিকে অবশ্যই চিন্তাভাবনা করতে হবে। হঠাৎ চাকরি ছাড়ায় যাতে অন্য কোনো বিষয়ে প্রভাব না পড়ে, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। চাকরি ছাড়ার কারণে পারিবারিক জীবনেও কোনো প্রভাব না ফেলে, সেদিকেও বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিলেন, রোজগার বন্ধ, এর জেরে পরিবারের লোক অসুবিধায় পড়ে গেল—এ কাজ মোটেই কাম্য হতে পারে না।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও লিংকডইন