৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রিয়াজ উদ্দিন।
বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। বোর্ডকে সন্তুষ্ট করে জিততে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, বিনয় ও ইতিবাচক মানসিকতা। নিজের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখুন। সব প্রতিষ্ঠানই বিনয়ী লোক চায়। তাই যেকোনো অবস্থাতেই বিনয়ী হতে হবে। তা ছাড়া আপনাকে ইতিবাচক ও স্বাভাবিক থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিশ্চয়ই অনেক ভাইভা দিয়েছেন। অন্যান্য ভাইভার মতো এটাও তেমন একটি ভাইভা। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বিসিএস ভাইভায় প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত আপনি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে যা কিছু শিখেছেন, সেই সবকিছুই পরখ করা হবে। একজন পরীক্ষার্থীর যোগাযোগদক্ষতা, আত্মবিশ্বাস, মানসিক পরিপক্বতা, অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগক্ষমতা, কাজের প্রতি নিবেদন ও জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার ক্ষমতা ইত্যাদি ভাইভায় দেখা হয়। এসব গুণ অর্জন করা ব্যক্তির জীবনযাপন প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকটা সম্পর্কযুক্ত।
মৌখিক পরীক্ষার আগে নিজের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। উপজেলা ও জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা ও কত নম্বর সেক্টরে ছিল এগুলো জানতে হবে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রতিটি জেলা সম্পর্কে একটি বই প্রকাশ করেছে, সেটা অবশ্যই পড়ে যাবেন। নিজ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল সম্পর্কে পড়বেন।
ভাইভায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রায়ই প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য নিশ্চয়ই ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন, সেগুলোই আবার রিভিশন দিন। চাইলে একটা ভালো বইও কিনে পড়তে পারেন। সংবিধান, বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি, সাম্প্রতিক হালচাল, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বাজেট ও সমীক্ষা খুব ভালোমতো পড়া উচিত। আমাকে শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ কত, তা জিজ্ঞেস
করা হয়েছিল।
স্নাতক পর্যায়ে আপনার পঠিত বিষয় সম্পর্কে ভাইভায় প্রশ্ন করা হবে। তাই পঠিত বিষয়ের মৌলিক ধারণা, লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসের অংশ এমনকি ফিল্ড ওয়ার্ক ও গবেষণাপত্র থাকলে সে সম্পর্কেও জেনে যাবেন।
মৌখিক পরীক্ষায় ইংরেজিতেও প্রশ্ন হতে পারে। তাই গ্রুপ করে নিয়মিত ইংরেজি কথোপকথন চর্চা করুন। প্রতিটি প্রশ্নের বাংলা ও ইংরেজি দুই ধরনের উত্তর প্রস্তুত রাখুন। এ ছাড়া ভাইভার দিনের বাংলা–ইংরেজি তারিখ, পত্রিকার শিরোনাম ও ঐতিহাসিক ঘটনা জেনে যাবেন। ভাইভার জন্য দু–একটা ভালো বই কিনে পড়তে পারেন। কয়েকটি মক ভাইভায় অংশ নেবেন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আপনার ক্যাডার চয়েস লিস্টের প্রথম ২–৩টি চয়েস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনার একাডেমিক বিষয়ের সঙ্গে প্রথম পছন্দের ক্যাডার কীভাবে রিলেটেড, সেটাও জেনে নিতে হবে। ভাইভায় হাসিমুখে উত্তর করা উচিত। বোর্ডের সবার সঙ্গে আই কন্ট্যাক্ট রাখা জরুরি। প্রশ্ন যিনি করবেন তাঁকে মূল ফোকাস দিয়ে সবার দিকে অন্তত একবার তাকাবেন।
মৌখিক পরীক্ষায় যেকোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৩০ সেকেন্ড সময় পাবেন। তাই প্রতিটি প্রশ্নের টু দ্য পয়েন্টে উত্তর করবেন। না পারলে সরি বলবেন। অযথা পেঁচাবেন না। আপনি যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারেন, ঘাবড়াবেন না। ন্যূনতম পাস মার্ক হলেও পাবেন। সর্বশেষ ৪১তম বিসিএসে ৬৫০ জনের মতো প্রার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই আছেন ভাইভায় অংশগ্রহণ করেননি। তার মানে ফেল করানোর হার ২-৩ শতাংশ। বোর্ডে কোনো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করলে কিংবা একেবারে নার্ভাস হয়ে গেলে আপনাকে ফেল করাতে পারে। ২০০ নম্বরের বিসিএস ভাইভা ক্যাডার পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুন। সবার জন্য শুভকামনা।