৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ও ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন
বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য না বুঝে মুখস্থ করবেন না। মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় সুন্দর করে লেখা কঠিন। তাই ভালোভাবে বুঝে পড়তে হবে। লিখিত পরীক্ষায় টানা ৬ দিনে ২১ ঘণ্টা লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। তাই শুরু থেকেই নিয়মিত লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন ও মডেল পরীক্ষা দিন। সময় ব্যবস্থাপনা পরীক্ষার কেন্দ্রে খুব বড় নিয়ামক। তাই সময় মেপে উত্তর লিখুন। লেখার নিজস্ব ইতিবাচক স্টাইল গড়ে তুলুন। লেখার শুরুতে আই-ক্যাচিং ভূমিকা দেওয়ার চেষ্টা করুন। পত্রিকা পড়তে হবে। প্রতিদিন বাংলা পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। গাণিতিক সমস্যা, ট্রান্সলেশন, সংবিধান/ম্যাপ প্রতিদিনের পড়ার টেবিলে রাখুন। পরীক্ষায় উত্তরপত্রে ডেটা দিলে ব্র্যাকেটে অবশ্যই তার উৎস উল্লেখ করুন।
বাংলা
মোটামুটি পরিশ্রম করলে বাংলায় ১১৫ থেকে ১২০ নম্বর পাওয়া যায়। আর ভালো করে পরীক্ষা দিলে ১৩০–এর বেশি পাওয়া সম্ভব। ব্যাকরণের ৩০ নম্বরে অল্প পরিশ্রমেই ২৬–এর বেশি নম্বর নিশ্চিত করতে পারবেন। সাহিত্য অংশে ৩০ নম্বরের জন্য প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি আরেকটু ঝালিয়ে নিলেই হয়ে যাবে। এখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ২-৩টি আপনি কমন পাবেন না। এখানে মোটামুটি ভালোভাবে পড়লে ২০–এর বেশি নম্বর পাবেন। আর ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ/সারমর্ম, সংলাপ—এগুলো দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সহায়ক বই থেকে প্রচুর রিডিং পড়বেন। মুখস্থ করবেন না। পত্রের ফরম্যাট মুখস্থ করবেন। অনুবাদ ইংরেজি বিষয়েই হয়ে যাবে, আলাদা সময় দেওয়া লাগবে না। গ্রন্থ সমালোচনায় সময় দিতে হবে। বাংলা রচনা বা ইংরেজি রচনায় ডেটা আর পয়েন্ট নোট করবেন। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং দক্ষতা আপনার রচনা বিল্ডআপ করে দেবে।
ইংরেজি
ইংরেজির বেসিক ভালো হলে কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে ভালো পরীক্ষা দিতে পারবেন। বেসিক দুর্বল হলে ভালো পরীক্ষা দেওয়া কঠিন। তাই আশা করি, প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিতে ভালো করে রুলস ও ভোকাবুলারি পড়েছেন। আর না পড়ে থাকলে লিখিত প্রস্তুতির শুরু থেকেই সহায়ক কম্প্রিহেনশন বই /ইংরেজি পত্রিকা থেকে অনুশীলন করুন। পাশাপাশি ব্যাকরণ পড়ুন। প্রতিদিন অনুবাদ চর্চা করুন।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি
এ বিষয়ের অনেক কিছুই প্রিলিমিনারিতে পড়া হয়েছে। এখন সংবিধান, বাংলাদেশের ম্যাপ ও অর্থনৈতিক সমীক্ষায় মনোযোগ দিন। এ বিষয়ে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সময় মেপে লিখবেন। যেমন ৫ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর লিখবেন মোটামুটি ৫.৫-৬ মিনিটে। লেখার মাঝে ছোট ছোট ম্যাপ, ইনফোগ্রাফ, টেবিল, ডেটা দিলে ব্র্যাকেটে সোর্স, বাংলা অথবা শুদ্ধ ইংরেজিতে কোটেশন দেবেন।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
প্রথম অংশে ৪ নম্বর করে ১০টি কনসেপচুয়াল প্রশ্ন থাকে। এর মধ্যে ২-৩টি প্রশ্ন কমন পাওয়া কঠিন। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি এ ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। আর সহায়ক বই পড়লে বেশির ভাগ প্রশ্ন কমন পাবেন। উত্তরে মনীষীদের উক্তি, উদাহরণ, পেনসিলের ব্যবহার বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করবে। বাকি ১৫ নম্বর করে ৪টি প্রশ্নের জন্য বইয়ের পাশাপাশি পত্রিকা পড়া খুব বেশি জরুরি। পত্রিকা থেকে আপডেট তথ্য নোট রাখবেন। আর সম্পাদকীয় গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন। অঞ্চলভেদে ম্যাপ আঁকার অনুশীলন করবেন। এ বিষয়ে আপনার লক্ষ্য হতে পারে ৫০-৫৫-৬০ নম্বর পাওয়া।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
গণিতে বেশির ভাগ প্রশ্ন নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বই থেকে আসে। কিন্তু প্রশ্নের সংখ্যা বেশি হয়। তাই নিয়মিত নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বই থেকে চর্চা করুন। পরীক্ষার হলে সময় নষ্ট করবেন না। উত্তরপত্রে ফলাফল বের হওয়ার পর নিচে আলাদাভাবে উত্তর উল্লেখ করবেন। মানসিক দক্ষতায় নতুন কিছু পড়া লাগবে না। সব বিষয় প্রিলিমিনারিতে পড়া হয়েছে। তাই এবার দরকার শুধু নিয়মিত চর্চা। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ৯০–এর বেশি নম্বর পেতে পারেন। বাকিরা নিয়মিত সূত্র বুঝে চর্চা করুন। ৬০ নম্বরের বেশি পাবেন।
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি
বিজ্ঞান অংশে ৬০ নম্বরের জন্য ৮ সেট (ছোট–বড় ২২-৩২টি প্রশ্নও থাকতে পারে) প্রশ্ন থাকে। তাই একদম মূল কথা উদাহরণসহ লিখে উত্তর করবেন। বিজ্ঞানের অর্ধেক বিষয় আগেই পড়েছেন প্রিলিমিনারিতে। এবার সব আবার পড়ার সময় কনসেপ্ট ক্লিয়ার করবেন। এ ক্ষেত্রে আগে বোর্ডের বই পড়ে পরে সহায়ক গাইড বই পড়তে পারেন। কম্পিউটার অংশের ২৫–এর প্রায় সব বিষয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো। তাই উত্তর করার সময় পেনসিলের ব্যবহারে জোর দিতে হবে। ইলেকট্রিক্যাল অংশের ১৫ নম্বর একটু কঠিন। এ অংশের কনসেপ্ট ক্লিয়ারের জন্য আগে বোর্ড বইয়ের সহায়তা নিতে পারেন। মুখস্থ করে বিজ্ঞানে ভালো করা যাবে না। এ বিষয়ে ৭০–এর বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব।