৪৪তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ ১২তম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করা মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমানের ৪৩তম বিসিএস ছিল দ্বিতীয় বিসিএস। এ বিসিএসে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার এবং দ্বিতীয় পছন্দ ছিল পুলিশ ক্যাডার এবং তৃতীয় পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার।
মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান প্রথম আলোকে বলেন, আনুমানিক ২০-২২টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। বেশির ভাগ প্রশ্নে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। সবগুলোতে নিজস্ব মতামত দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান বলেন, ভাইভার দিন ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে আমার সিরিয়াল ছিল ১৪তম। সকাল ১০টায় ভাইভা শুরু হয়ে যায়। আমার সিরিয়াল আসতে আসতে প্রায় বেলা ২টা বেজে যায়। ইতিবাচক মনোভাব রাখার চেষ্টা করেছি। যেগুলো পড়িনি বা জানি না সেগুলো নিয়ে চিন্তা না করে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিলাম। ৪১তম বিসিএসে কারিগরি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ছিলাম। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছি এসব বিষয় কিছুটা স্বস্তিদায়ক ছিল এবং চিন্তার ভার অনেক কমিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল।
মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে সালাম দিয়ে প্রবেশ করার পর সাদমানকে জিজ্ঞেস করা হয় রুয়েটে পড়েছেন, ৪১তম বিসিএসে গণপূর্ত ক্যাডারে আছেন। তাহলে সাধারণ ক্যাডারে আসতে চাচ্ছেন কেন? রাষ্ট্রদূত হিসেবে কী কী গুণ আছে আপনার? উত্তরে সাদমান বলেন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেওয়া আমার স্বপ্ন। আমি মনে করি আমি সব ধরনের মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারি। এ বিষয়টি পররাষ্ট্র ক্যাডারে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের বেশির ভাগ প্রবাসী নিম্ন আয়ের মানুষ।
আর কী কী গুণ আছে, এমন প্রশ্ন করা হলে মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারি। তারপর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যোগ্যতা আছে।
নেতৃত্বদানের গুণাবলি দরকার আছে কি না মনে করেন? উত্তরে মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান বলেন, ‘আমার যেসব গুণ আছে সেগুলোর মধ্যে এটি একটি। আমি নেতৃত্বদানে পছন্দ করি। কারণ মানুষকে অর্ডার দেওয়ার চেয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে সে কাজ ভালো হয় এবং সবাই অনুসরণ করে।’
অর্ডার অব প্রিসিডেন্স বলতে কী বোঝেন? রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে দেশের প্রধান কে? মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান উত্তর দেন, অর্ডার অব প্রিসিডেন্স বলতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের পদক্রম বোঝায়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে দেশের প্রধান জাতীয় সংসদের স্পিকার।
আপনি তো গণপূর্ত ক্যাডার পেয়েছেন। জেনারেলে আসতে চাচ্ছেন। এখানে অ্যাডমিনে তো অনেকে আসবে, ইংরেজি, অর্থনীতি সব বিষয়ের মানুষ। আপনার ইনপুটটা কী হবে? উত্তরে সাদমান বলেন, আমার প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল আলিম আমাদের বলেছিলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তোমাকে সূত্র ইকুয়েশন এসব মুখস্থ করাবে না, শেখাবে কীভাবে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।
আপনার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জ্ঞান আপনি এখানে কীভাবে কাজে লাগাবেন? এটা তে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান লাগবে আপনার? মো. আব্দুল্লাহ আল সাদমান উত্তর দেন, বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের মতে, পৃথিবীতে কোনো মিরাকল নেই। যে কেউ যেকোনো বিষয়ে যথেষ্ট শ্রম ও সময় দিলে সেটিতে দক্ষ হওয়া সম্ভব। আমি নিয়োগপ্রাপ্ত হলে স্বপ্নের দেশ গড়তে সবটুকু দিয়ে পরিশ্রম করব।
আপনি যা শিখেছেন, যেমন আপনি জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে থিসিস করেছেন? এসব জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগাবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে যে কোনো কিছু দিলে আমি সে বিষয়ে যথেষ্ট শ্রম দিলে মনে করি আমার সেটাতে দক্ষতা অর্জনের যোগ্যতা রয়েছে। জিওটেকের খুব বেশি কিছু আমাকে সাহায্য করবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। সত্যি কথা বলতে, দুটি খুবই ভিন্ন, তবে যেহেতু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট রয়েছে, এটা কাজে লাগতে পারে বলে মনে করি।
আপনি তো বাংলাদেশ ব্যাংকে আছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে বলে আপনার মনে হয়? সাদমান উত্তর দেন, যেকোনো টাইম ফ্রেম নিলে আমরা কিন্তু কোনোটাতেই জিডিপি গ্রোথ ছাড়া হ্রাস দেখতে পাব না। ব্যক্তিগতভাবে আমি নম্বরের চেয়ে দৃশ্যমান পরিবর্তনে বিশ্বাস করি।
এ বিষয়টা কেমন, সেটি ব্যাখ্যা করুন। সাদমান ব্যাখ্যায় বলেন, আমি যেকোনো একটা এলাকা নিই, তারপর বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। ১০ বছর আগে ওই এলাকা কেমন ছিল, মানুষ কেমন ছিল। আমি দেখি সামগ্রিকভাবে একটা উন্নতির চিত্র ফুটে ওঠে। সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারটিতেও দেখা যায় বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম তো অবশ্যই আছে। শতভাগ দারিদ্র্য নির্মূল হয়ে গেছে বললে মিথ্যা বলা হবে। তবে সামগ্রিক উন্নতির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করি এবং তা ত্বরান্বিত করতে অবদান রাখতে আমার মেধা বিনিয়োগ করতে পারব বলে আশা রাখি।