বর্তমানে প্রায় সব ধরনের সরকারি চাকরি পেতে একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এসব ধাপ অতিক্রম করতে বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকা পড়তে হয়। দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস কীভাবে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পেতে সাহায্য করে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক মো. মাজহারুল হাসান নাহিদ
বিসিএস, ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারির জন্য দৈনিক পত্রিকা পড়লে বেশ কিছু বিষয়ে ভালো করা যায়। বিসিএসের সাধারণ জ্ঞান অংশ থেকে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে থাকে ৩০ নম্বর আর আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে থাকে ২০ নম্বর। ব্যাংকের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেও সাধারণ জ্ঞান অংশে ২০ নম্বর থাকে। বিসিএস ও ব্যাংক দুটি পরীক্ষাতেই দেখা যায়, বাংলাদেশ, পৃথিবীর ইতিহাস, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিভিন্ন পুরস্কার, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, খেলাধুলা, ভৌগোলিক অবস্থান, সভ্যতা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস, যুদ্ধ, পরিবেশগত ইস্যু, খেলাধুলা, বিভিন্ন সম্মেলন, জাতিসংঘ, অর্থনীতি, ব্যাংকিং সিস্টেম ইত্যাদি থেকে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ প্রশ্ন হয়ে থাকে। নিয়মিত পত্রিকা পড়া ছাড়া এসব অংশে ভালো করা কঠিন।
সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের সাম্প্রতিক অংশ থেকে প্রতি পরীক্ষায় ৫ থেকে ৭ নম্বরের প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। সাধারণ বিজ্ঞানের আধুনিক বিজ্ঞান অংশ এবং দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি অংশ থেকেও বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বেশ কিছু প্রশ্ন হয়ে থাকে। নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এসব প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই দেওয়া সম্ভব। ইংরেজি পত্রিকা একজন পরীক্ষার্থীর ভোকাবুলারি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিনোনেম, অ্যান্টোনেম, অ্যানালজি, স্পিলিং ইত্যাদি অংশ থেকে প্রতি পরীক্ষায় ৭-৮ নম্বর চলে আসে। ইংরেজি পত্রিকা পড়ুয়া একজন পরীক্ষার্থী এসব অংশে ভালো করবে, যা তাকে অন্যান্য পরীক্ষার্থী থেকে অনেক এগিয়ে রাখবে।
চাকরি হবে কি না, সেটি অনেকটা নির্ভর করে লিখিত পরীক্ষার ওপর। অল্পসংখ্যক চাকরি বাদ দিলে ৯ম থেকে ১১তম গ্রেডের সব চাকরিতে একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারি পাস করার পর লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। প্রকৃতপক্ষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মোট নম্বর যোগ করে প্রার্থী বাছাই করা হয়।
লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলে চাকরি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ ক্যাডারে ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়াবলির ২০০ নম্বর, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ১০০ ও ইংরেজি ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি সরাসরি পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ছাড়া এ বিষয়ের মুক্তিযুদ্ধ, নির্বাচন, সমসাময়িক যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ও পত্রিকার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ১০০ নম্বরের মধ্যে ইম্পেরিক্যাল ইস্যুজ এবং প্রবলেম সলভিংয়ের ৬০ নম্বর পুরোটাই সাম্প্রতিক ঘটনার ওপর নির্ভর করে প্রশ্ন করা হয়। নিয়মিত পত্রিকা ছাড়া এ অংশে সঠিক উত্তর করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির কনসেপচুয়াল অংশের উত্তরগুলোও পত্রিকা পড়লে ভালোভাবে উত্তর করা যায়।
বিসিএসে ইংরেজির যে ২০০ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে, তার প্রথম ১০০ নম্বর হয় কম্প্রিহেনশন থেকে। ইংরেজি পত্রিকা ভালো করে পড়লে কম্প্রিহেনশন থেকে সুন্দর করে দ্রুত উত্তর করা যায়। নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে ইংরেজি রিডিং, আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ইংরেজি বিষয়ে বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলা মোট ৫০ নম্বরের দুটি ট্রান্সলেশন আসে। বাংলা বিষয়েও ১৫ নম্বরের একটি অনুবাদ আসে। এই মোট ৬৫ নম্বর ভালো করতে হলে অবশ্যই নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। ইংরেজি ও বাংলা দুটি রচনার মোট ৯০ নম্বরের বিভিন্ন আপডেট তথ্য, কোটেশন, সমস্যা, সমাধান ইত্যাদিও পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা যায়।
ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় মোট ২০০ নম্বর থাকে। এখানে বাংলা ও ইংরেজি দুটি ফোকাস রাইটিং এবং আর্গুমেন্ট মিলে থাকে ১০০ নম্বর। এই ১০০ নম্বরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো দৈনিক পত্রিকা পড়া। কারণ, ফোকাস রাইটিং সব সময় সাম্প্রতিক অংশ থেকে পরীক্ষায় আসে। এ ছাড়া সাধারণ জ্ঞানের ৩০ নম্বরের কিছু অংশ দৈনিক পত্রিকা পড়লে উত্তর করা যায়। ইংরেজি প্যাসেজ ও ট্রান্সলেশন সঠিকভাবে উত্তর করার জন্যও একজন পরীক্ষার্থীকে নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এককথায় বলা যায়, শুধু গণিত বাদে ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার প্রায় সব অংশেই দৈনিক পত্রিকা একজন পরীক্ষার্থীর জন্য অপরিহার্য। অন্যান্য সরকারি চাকরির লিখিত পরীক্ষায়ও এ ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে, সে জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস পরীক্ষার্থীকে অন্যান্য চাকরি পরীক্ষার লিখিত অংশেও ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চাকরির পরীক্ষার সর্বশেষ ধাপ মৌখিক পরীক্ষা। চাকরিভেদে মৌখিক পরীক্ষায় ১০ থেকে ২০০ নম্বর পর্যন্ত থাকে। মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর যা–ই থাকুক না কেন, মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণত পাঁচটি অংশ থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত, পরীক্ষার্থীর নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কিত, যে পদে আবেদন করেছেন, সেই পদ সম্পর্কিত, পরীক্ষার্থীর একান্ত নিজের সম্পর্কিত বিষয়াবলি এবং সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সম্পর্কিত প্রশ্ন।
মৌখিক পরীক্ষায় সব সময় সাম্প্রতিক অংশ থেকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা না পড়লে সাম্প্রতিক অংশে উত্তর করা সম্ভব নয়। একজন সরকারি চাকরিজীবী হতে হলে অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়ের সব তথ্য, ঘটনা, সমস্যা ও আলোচিত বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়ে ভালো জ্ঞান না থাকলে মৌখিক পরীক্ষায় অনেক কম নম্বর দেওয়া হয়। এমনকি মৌখিক পরীক্ষায় সাম্প্রতিক বিষয়ে জানা না থাকলে ফেল করারও নজির রয়েছে। দৈনিক পত্রিকা পড়া ছাড়া সাম্প্রতিক বিষয়াবলি জানার অন্য কোনো উপায় নেই। সাম্প্রতিক বিষয়ে পরীক্ষার্থীর জ্ঞান না থাকার কারণে চাকরির খুব কাছে গিয়েও স্বপ্ন অধরা থেকে যেতে পারে।