শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ষষ্ঠ থেকে ২০তম গ্রেডে ১৫১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেবে। ইতিমধ্যে আবেদনের সময় শেষ হয়েছে। এখন প্রস্তুতির পালা। বিসিক নিয়োগ কমিটি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে
জানা গেছে।
বিসিকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, প্রমোশন কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন নকশাবিদ, কারিগরি কর্মকর্তাসহ সব কর্মকর্তা পদে সাধারণত ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত পরীক্ষায় বেশির ভাগ প্রশ্ন এমসিকিউ হয়ে থাকে। এমসিকিউর সঙ্গে ১০ নম্বর ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন থাকে। নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলায় ১৫, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২০, সাধারণ জ্ঞানে ১৫ এবং কম্পিউটার বিষয়ে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকতে পারে।
বিসিকে ১১-২০তম গ্রেডে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নিয়োগবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এসব গ্রেডে ৭০ নম্বরের এসসিকিউ প্রশ্ন হয়ে থাকে। এসসিকিউ পরীক্ষায় যাঁরা পাস করেন, তাঁদের ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
১১-২০তম গ্রেডের এমসিকিউ পরীক্ষায় নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলায় ২০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২০ এবং সাধারণ জ্ঞানে ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। তবে এই নম্বর বণ্টন সব সময় নির্দিষ্ট নয়, কমবেশি হতে পারে।
বিসিক নিয়োগ পরীক্ষা সাধারণত তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রশ্ন করে থাকে। এ ছাড়া বিসিকের একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে শিল্প মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের পার্সোনেল অফিসার আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিসিকের নিয়োগপ্রক্রিয়া সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এখানে কোনো তদবির বা দুর্নীতির সুযোগ নেই। পরিশ্রমী ও মেধাবীরা বিসিকে নিয়োগ পান।
বিসিকের একজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু পরীক্ষায় এমসিকিউ এবং ব্যাখ্যামূলক দুই ধরনের প্রশ্ন থাকে, তাই প্রার্থীদের দুটির জন্যই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। পরীক্ষায় ভালো করতে সঠিকভাবে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ডের ব্যাকরণ বই পড়তে হবে। গণিতে ভালো করতে অনুশীলনের বিকল্প নেই। সাধারণ জ্ঞানের জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। বিসিএস পরীক্ষা, বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ও অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেসব প্রস্তুতিমূলক বই পাওয়া যায়, সেগুলো পড়া যেতে পারে।
এ ছাড়া কম্পিউটার অংশে যেহেতু ১০ নম্বর থাকে, তাই কম্পিউটার বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য পড়া দরকার। কম্পিউটার সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য গুগল থেকে জেনে নিতে পারেন। কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম, এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল পাওয়ার পয়েন্ট ও কম্পিউটারের ভাষা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি।
সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কাজ
শিল্পের প্রাক্বিনিয়োগ ও বিনিয়োগোত্তর পরামর্শ দিয়ে থাকেন সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া প্লট গ্রহীতাকে ব্যাংকঋণ পেতে সহায়তা, বন্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মালিকদের কারিগরি ও সাধারণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাঁরা। শিল্পনগরীতে রাস্তাঘাট, ড্রেন-কালভার্ট, পানির পাম্প এবং পানির লাইন, গ্যাস-সংযোগ, বিদ্যুৎ-সংযোগ, সংশ্লিষ্ট নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কারকাজে কারিগরি সহযোগিতা দেন তাঁরা। তরল বর্জ্য নিষ্কাশন তদারকি, চামড়াশিল্প নগরীর পরিবেশদূষণ ও তরল বর্জ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে শিল্পনগরীর কারখানাগুলোর তরল বর্জ্যের রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিশোধন তদারকি এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাব্যতা যাচাই করে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা।
শিল্পের খাত, সাংগঠনিক কাঠামো, নাম ও মালিকানা পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে শিল্পমালিকদের আবেদন বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন ও শিল্প এলাকায় সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করার কাজ করেন প্রমোশন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া সাধারণ এবং ঐতিহ্যবাহী পণ্যের উদ্যোক্তা চিহ্নিতকরণ, প্রকল্প প্রতিবেদন ও প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করার কাজও করেন তাঁরা। পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য শিল্পনগরীর কারখানাগুলোর তরল বর্জ্যের রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিশোধন তদারকি প্রশাসনিক কাজে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয় করেন প্রমোশন কর্মকর্তারা।
বিসিক শিল্পনগরীতে শিল্পকারখানার লে-আউট প্ল্যান তৈরিতে কারিগরি সহযোগিতা, নির্মাণাধীন শিল্পকারখানা অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী স্থাপিত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা, নির্মিত ভবন সম্প্রসারণে লে-আউট প্ল্যান, বিল্ডিং কোডের সব শর্ত পালন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন কারিগরি কর্মকর্তা ও ড্রাফটসম্যানরা। শিল্পনগরীতে রাস্তাঘাট, ড্রেন-কালভার্ট, পানির পাম্প, পানির লাইন, গ্যাস-সংযোগ, বিদ্যুৎ-সংযোগ, নতুন নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও সংস্কারকাজে কারিগরি সহযোগিতা দেন তাঁরা। কারিগরি কর্মকর্তা ও ড্রাফটসম্যান পদে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিপ্লোমাধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।