৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর শুরু। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ তৃতীয় পর্বে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন

প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য ১০০ নম্বর বরাদ্দ। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে খুব বেশি না লিখেও এই বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

ধারণাগত বিষয়াবলি

এই ভাগে ১০টি প্রশ্ন দেওয়া থাকবে। সব কটির উত্তর করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্ন ৪ নম্বর করে মোট ৪০ নম্বর থাকবে। সিলেবাসের সাতটি অধ্যায় থেকে সাধারণত এই প্রশ্নগুলো আসে। তবে দুই বা তিনটি প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বরাজনীতির সাম্প্রতিক অংশ থেকেও আসতে পারে। সাতটি অধ্যায়ের মধ্যে বিশ্বের ক্ষমতা ও নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক—এই তিনটি অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। অপেক্ষাকৃত অল্প কথায় উত্তর করতে হবে। যেহেতু ৪ নম্বরের প্রশ্ন, তাই কোনো ভূমিকা-উপসংহারে না গিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে।

কিছু প্রশ্নের উত্তরে একাধিক প্রামাণ্য সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনীয় তথ্য থাকা উচিত এবং তথ্য-উপাত্তের সূত্র উল্লেখ করতে হবে। এই অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে—আন্তর্জাতিক সম্পর্ক; আন্তর্জাতিক রাজনীতি; ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক; হান্টিংটনের থিসিস; আধুনিক রাষ্ট্র; রাষ্ট্রের উপাদান; রাষ্ট্রের প্রকারভেদ; অ-রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড; বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা; সংগঠন ও জোট; জাতীয় শক্তি ও ক্ষমতা; সফট পাওয়ার; হার্ড পাওয়ার; আধুনিকতাবাদ ও উত্তর আধুনিকতাবাদ; সাম্রাজ্যবাদ; নব্য-উপনিবেশবাদ; নয়া বিশ্বব্যবস্থা; একমেরু ও দ্বিমেরু; পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ অর্থনীতি। এই অংশে ভালো করার জন্য আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির বিখ্যাত কোনো লেখকের বই অনুসরণ করা যেতে পারে।

গবেষণামূলক বিষয়গুলো

সম্প্রতি আলোচিত আন্তর্জাতিক যেকোনো চারটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। সেগুলোর মধ্যে তিনটির উত্তর দিতে হবে। প্রতি প্রশ্ন ১৫ নম্বর করে মোট ৪৫ নম্বর থাকবে। বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত উত্তর লিখতে হবে। শুরুতেই সূচনা, ঘটনার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে মাঝে বিস্তারিত বিবরণ লিখতে হবে এবং উপসংহারে বক্তব্য গুছিয়ে লিখতে হবে। তথ্য-উপাত্তও উপস্থাপন করতে হবে।

প্রয়োজনীয় চিত্র, চার্ট, সারণি, মডেল, মানচিত্র, উদ্ধৃতি ও পাদটীকা যত বেশি দেওয়া যাবে, ততই ভালো নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি, অর্থনীতিসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মানচিত্র দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এই অংশে ভালো করার জন্য নিয়মিত দৈনিক পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা, উপসম্পাদকীয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কলাম পড়তে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন, ন্যাটো–সংশ্লিষ্ট ঘটনা কিংবা মার্কিন-চীন সম্পর্ক–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিবেদন পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

তথ্যগুলো প্রয়োজনে নোট করে রাখতে হবে এবং ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিদেশি পত্রিকা থেকেও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এই অংশের জন্য পড়তে হবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পটভূমি, অঙ্গসংগঠন, কার্যাবলি, সনদ, শান্তিরক্ষা মিশন ও নিরাপত্তা পরিষদ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতি, ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব, সুনীল অর্থনীতি, এলডিসি থেকে উত্তরণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চ্যালেঞ্জ, বিদেশের বাজারে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণ, বাংলাদেশ-মিয়ানমার, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, ভারতের সঙ্গে পানি ও সীমান্ত সমস্যা, রোহিঙ্গা ইস্যু ও ভারত মহাসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব ভালোভাবে জানতে হবে।

সমস্যা সমাধান

১৫ নম্বরের একটি প্রশ্ন থাকবে এবং সেটির সমাধানসহ লিখতে হবে অথবা একটি নীতিপত্র তৈরি করতে বলা হবে। প্রথমেই সমস্যার প্রেক্ষাপট, বর্তমান গতি-প্রকৃতি উল্লেখ করে সমস্যার সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ, সমস্যা সমাধানে করণীয় এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয়গুলো পয়েন্ট আকারে যুক্তিযুক্ত উপায়ে উপস্থাপন করতে হবে। যেকোনো একটা গাইড বই থেকে নীতিপত্র লেখার সঠিক পদ্ধতি জেনে নিতে হবে। সমসাময়িক দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা, সাময়িকী নিয়মিত পড়ার অভ্যাস থাকলে এই অংশে ভালো করার সুযোগ থাকবে।

তথ্য-উপাত্তসহ সারণি, চার্ট, মানচিত্র ও সূত্র উল্লেখ করে সমাধান পেশ করলে প্রত্যাশিত নম্বর পাওয়া সহজতর হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক সাহায্য, বৈশ্বিক পরিবর্তন, জনশক্তি রপ্তানি, বাণিজ্য ঘাটতি, আঞ্চলিক সংহতি, রিজার্ভ–সংকট, আইএমএফের লোন, এলডিসি থেকে উত্তরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ–সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক আলোচিত-সমালোচিত যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন আসতে দেখা গেছে।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে পড়তে হয় আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, সামরিক ও বিভিন্ন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ইতিহাস। জানতে হয় বিশ্বের নানা ধরনের সংগঠন, কূটনৈতিক অবস্থান ও ভূরাজনীতি সম্পর্কে। তথ্যবহুল লেখা ও মার্জিত উপস্থাপনা বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করবে। সবার জন্য শুভকামনা।