বর্তমানে করোনার প্রভাবের পর কর্মসংস্থানের ওপর বিশাল প্রভাব পড়েছে। বদলে যাচ্ছে চাকরির বাজার ও ধরন। নতুন সম্ভাবনাও সৃষ্টি হচ্ছে। শিখতে হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। এখন আর অফিসের কনফারেন্স রুমে মিটিং না হলেও নিয়মিত মিটিং হচ্ছে জুম কিংবা গুগল মিটিং সফটওয়্যারে।
এই করোনা পরিস্থিতি অনেক কোম্পানিকেই বুঝিয়েছে ডিজিটাল ডেটার প্রয়োজনীয়তা। যাঁরা আগে সবকিছু কাগজে-কলমেই হিসাব কষতেন, তাঁরা এখন ভাবছেন সফটওয়্যার ব্যবহারের কথা, যা নিঃসন্দেহে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজের ওপর এক অনবদ্য প্রভাব ফেলবে।
অনেকেই এখন ঝুঁকছেন নতুন স্কিল ডেভেলপ করার জন্য। সময়টাই এমন। প্রযুক্তির প্রভাব এতটাই পড়েছে যে সিনেমা হল বন্ধ হলেও ব্যবসাসফল ইন্টারনেটভিত্তিক সিনেমা ও সিরিজ দেখার মাধ্যম নেটফ্লিক্স, যাদের এই করোনার সময়ে নতুন গ্রাহক বেড়েছে ৩০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
সবকিছুই এখন অটোমেশনের দিকে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সবার প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, এআই কী? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মেশিন ইন্টেলিজেন্সও বলা হয়। কম্পিউটার সায়েন্সের উৎকৃষ্টতম উদাহরণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কী করে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—কথা শুনে চিনতে পারা, নতুন জিনিস শেখা, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা করা। বর্তমানে আমরা অনেকেই নিয়মিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছি, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আইফোনের সিরি কিংবা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্স। বর্তমানে বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্মার্ট সিটি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সবকিছুতেই টেকনোলজি ও ইমার্জিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখন আসা যাক কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলছে? এ মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কনটেন্ট ডেভেলপার এবং বিপণনকারীরা ব্যাপক সুবিধা পাবে। এমনকি এআই কনটেন্ট মার্কেটিংকে আমূল পরিবর্তন করে দেবে। কেননা এআই কনটেন্টকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবহারকারীর চাহিদা মেটাতে পারবে। এ ছাড়া এসইওদের কনটেন্ট ফরম্যাটে সাহায্য করবে এআই এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু আবিষ্কার করবে ও ব্যবহারকারীর কাছে সরবরাহ করবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময় নিজেকে নতুন প্রযুক্তির উপযোগী করে তোলা এখন সময়ের দাবি।
আমি কি পারব? নতুন কিছু শিখতে প্রথমে খানিকটা বেগ পেতে হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে অবশ্যই সম্ভব। কোথায় এবং কীভাবে শিখব এসব?
যা যা শিখতে হবে
আইটি সেক্টরে প্রার্থীর একাডেমিক ডিগ্রির চেয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে বেশি কদর করা হয়—ব্যাচেলর ডিগ্রির পাশাপাশি টেকনিক্যাল স্কিল, যেমন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (সি, সি++, জাভা, পাইথন, আর), লিনিয়ার অ্যালজেবরা, প্রোবাবিলিটি এবং পরিসংখ্যান দক্ষতা, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি)। আমরা কম্পিউটার বা মেশিন যা–ই বলি না কেন, এদের নিজেদের কোনো বোধশক্তি নেই। এদের যা নির্দেশনা দেওয়া হয়, এরা সেই নির্দেশনামতো (command) কাজ করে শুধু। আমরা মানুষেরা সাধারণত যে ভাষায় কথা বলি, তা এরা বুঝতে পারে না। কম্পিউটারকে মানুষের ভাষা ঠিকমতো বোঝানোর জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্তর্গত এই শাখার নাম হলো ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, সংক্ষেপে এনএলপি।
এর পাশাপাশি মজবুত করতে হবে নন–টেকনিক্যাল স্কিল। ইন্ডাস্ট্রিজ সম্পর্কে ধারণা, যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানো, ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং বা সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা বলতে আমি বুঝি—ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং হলো বিচারের জন্য তথ্য বিশ্লেষণ করা।
কাজের সুযোগ কেমন
আইটি/আইটিইস সেক্টর ছাড়াও বিভিন্ন সেক্টরে রয়েছে কাজের সুযোগ, যেমন এডুকেশন, সাইবার সিকিউরিটি, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, স্বাস্থ্যক্ষেত্র, ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ সুপরিচিত অনেক দূরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, যারা এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজের ধরন, তাই এখনই সময় নিজেকে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর।
রিদওয়ানুল হক, অধ্যাপক, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়