পুলিশে ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে লিখিত পরীক্ষার আগের শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে আগে। গত কয়েকটি ব্যাচ থেকে কয়েক ধাপে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এ পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতির বিকল্প নেই।
এসআই নিয়োগে শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাইকরণসহ শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা ১ নভেম্বর শুরু হবে। পরীক্ষা চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। শারীরিক পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে আলাদা কৌশল ও শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন। ১৬০০ মিটার দৌড়, হাই জাম্প, লং জাম্প, পুশ আপ, সিট আপ, ড্রাগিং, ক্লাইম্বিংসহ অন্যান্য ধাপে ভালো করতে হলে বিভিন্ন ধরনের পেশিশক্তি, ফোকাস, সহনশীলতা এবং স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সফলতার জন্য সঠিক প্রস্তুতি ও নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই।
এসআই নিয়োগ পরীক্ষার ১৬০০ মিটার দৌড়ে উত্তীর্ণ হতে চাইলে নিয়মিত অনুশীলন ও কিছু নির্দিষ্ট কৌশল অনুসরণ করতে হবে। শুরুতে খুব দ্রুত না দৌড়ে একটি স্থির গতিতে দৌড়ানো শুরু করুন। অনেকে প্রথমেই দ্রুত দৌড়ান, তাই মাঝপথে শক্তি হারিয়ে ফেলেন। গতি বাড়ানোর সময় দৌড়ের শেষাংশে রাখুন। দৌড়ের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকভাবে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন। নিয়মিত শ্বাস নেওয়া দৌড়ের সময় আপনার শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। পুরো ১৬০০ মিটারকে একসঙ্গে ভাবার পরিবর্তে দৌড়ের পথটিকে ছোট অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশে মনোযোগ দিন। এতে চাপ কমে এবং আপনার মাইলফলকগুলো সহজে অতিক্রম করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, দৌড়ে ভালো করতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট দৌড়ের অনুশীলন করতে হবে। প্রথমে অল্প দূরত্বে শুরু করে ধীরে ধীরে ১৬০০ মিটারে উন্নীত করুন। শক্তি বাড়াতে দীর্ঘ সময় ধরে কম গতিতে দৌড়ের অনুশীলন করুন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন। পুষ্টিকর খাদ্য, যেমন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রচুর পানি পান করুন। শর্করাসমৃদ্ধ খাবার খেলে দৌড়ের জন্য শক্তি বাড়ে। দৌড়ের আগে পর্যাপ্ত পানি পান করুন, তবে অতিরিক্ত খাবেন না। দৌড়ের দিনে হালকা স্ট্রেচিং এবং ওয়ার্মআপ করে নিন। এর ফলে পেশি শিথিল থাকবে এবং ইনজুরির আশঙ্কা কমবে। দৌড় শুরুর আগে মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।
হাই জাম্প
সঠিক ফর্ম ও টেকনিক অনুশীলন করুন। প্রথমে কম উচ্চতায় লাফানোর মাধ্যমে অনুশীলন শুরু করুন। উচ্চতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ছোট ছোট জাম্প করুন। ধীরে ধীরে উচ্চতা বাড়িয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। শুরুতে দৌড়, তারপর এক পায়ে জাম্পের সময় শরীরকে বাঁকিয়ে তুলে এক পাশে কাঁধ নিয়ে বারের ওপর দিয়ে পার হওয়া শিখুন। হাই জাম্পে ভালো করতে শরীরের নমনীয়তা বাড়ানো জরুরি। প্রতিদিন স্ট্রেচিং করার মাধ্যমে কোমর, হাঁটু এবং পায়ের পেশিগুলো নমনীয় রাখুন। এই অভ্যাস আপনাকে উচ্চতায় আরোহণ করতে সহায়ক হবে। পায়ের শক্তি ও শরীরের মধ্যভাগের (কোর) শক্তি হাই জাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো পায়ের পেশি ও কোমরের শক্তি বাড়িয়ে জাম্পের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। মনে রাখতে হবে, জাম্পের সময় শুধু উচ্চতাই নয়, সঠিকভাবে ল্যান্ড করাও গুরুত্বপূর্ণ। লাফের পর নিরাপদে ল্যান্ডিংয়ের জন্য শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখুন। মাটি স্পর্শের সময় হাঁটু বাঁকানো এবং শরীরের ভার সামলাতে প্রস্তুত থাকুন। হাই জাম্পে সঠিকভাবে দৌড়ানো এবং লাফানোর সময় সঠিকভাবে নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। দৌড়ের সময় গতি ও ভারসাম্য ঠিক রাখুন এবং বারের কাছাকাছি এসে সর্বোচ্চ জাম্পের জন্য প্রস্তুত থাকুন। সাধারণত ৫ থেকে ৭ ধাপের দৌড় ভালো ফল এনে দেয়। হাই জাম্পে মানসিক ধৈর্য ও মনোবল প্রয়োজন। জাম্পের সময় নিজের ওপর আস্থা রাখুন এবং পজিটিভ চিন্তা ধরে রাখুন। প্রতিটি জাম্পকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যান।
শক্তিশালী দৌড় এবং গতি বজায় রাখুন। লং জাম্পে দৌড় থেকে শক্তি সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। রানআপ শুরু করার সময় একটি নির্দিষ্ট গতি ধরে রাখুন এবং শেষ কয়েক ধাপে গতি বাড়ান। তবে, বেশি জোরে দৌড়ালে লাফের সময় ভারসাম্য হারাতে পারেন। তাই গতির সঙ্গে স্থিতিশীলতা বজায় রাখুন। টেক-অফের সময় শরীরের অবস্থান ঠিক রাখুন। টেক-অফ বা পা থেকে লাফানোর সময় শরীর সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখুন। সামনের দিকে ঝুঁকে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখুন এবং শক্তি কেন্দ্রীভূত রাখুন। পা ও হাত সমন্বিতভাবে ব্যবহার করলে ভালো উচ্চতা অর্জন করতে পারবেন।
হাঁটু ও পায়ের শক্তি বাড়ান। লং জাম্পের জন্য পায়ের পেশি শক্তিশালী করা অপরিহার্য। শক্তিশালী পেশি আপনাকে টেক-অফের সময় আরও জোরে ধাক্কা দিতে সাহায্য করবে। লাফানোর সময় হাতের সঠিক ব্যবহার আপনাকে দূরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। টেক-অফের সময় আপনার হাত সামনে-পেছনে সুইং করে শরীরকে আরও দূরত্ব অতিক্রমে সহায়ক করুন। হাতের সঠিক মুভমেন্ট দূরত্ব বাড়াতে সাহায্য করবে। ল্যান্ডিংয়ে সাবধানতা অবলম্বন করুন। ল্যান্ডিংয়ের সময় হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে শরীরের ভার সামলান। পা সামনের দিকে ছুড়ে দিন এবং পা মাটি স্পর্শ করলে হাত দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সঠিক ল্যান্ডিং করলে আঘাত থেকে রক্ষা পাবেন এবং পূর্ণ লাফের পরিমাণ পেতে সহায়ক হবে।
পুশ আপ
সঠিক ফর্ম মেনে চলুন। পুশ আপের সময় সঠিক ফর্ম বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। হাত কাঁধের বরাবর রেখে, পিঠ এবং কোমর সোজা রেখে পুশ আপ করুন। পা একসঙ্গে রাখুন এবং শরীরের একটি সরলরেখা ধরে রাখুন, যাতে কোমর নিচু বা উঁচু না হয়। নিয়মিত প্র্যাকটিস করুন। প্রথমে প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক পুশ আপ দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে সংখ্যাটি বাড়ান। প্রতিদিন অল্প অল্প করে রেপ বাড়ানোর মাধ্যমে আপনার সহনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। হাত ও কাঁধের শক্তি বাড়ান। পুশ আপের জন্য হাত ও কাঁধের শক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ওজন নিয়ে ট্রাইসেপস ও কাঁধের ব্যায়াম করুন। হাত শক্তিশালী হলে পুশ আপ সহজ হয়ে যাবে। শরীরের মধ্যভাগ শক্তিশালী থাকলে পুশ আপে সহজে ভারসাম্য রাখা যায়। প্ল্যাঙ্কের মতো ব্যায়ামগুলো কোর স্ট্রেন্থ বাড়াতে সহায়ক। তাই নিয়ম করে প্ল্যাঙ্ক করুন। পুশ আপের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস সঠিকভাবে নিন। নিচে নামার সময় শ্বাস নিন এবং ওপরে ওঠার সময় শ্বাস ছাড়ুন। সঠিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ পুশ আপের সময় শক্তি ধরে রাখতে সহায়ক। প্রতিদিন প্রচুর পুশ আপ করলে পেশিগুলোতে ক্লান্তি আসতে পারে।
সঠিক ফর্ম অনুসরণ করুন। সিট আপ করার সময় সঠিক ফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিঠ সোজা রেখে মাটিতে শোয়া থেকে ওপরের দিকে উঠুন এবং আবার নিচে যান। হাঁটু বাঁকা রেখে পা মাটিতে স্থির রাখুন এবং হাত কাঁধের কাছে বা মাথার পেছনে রাখুন। ফর্ম ঠিক থাকলে পেশিতে সঠিক চাপ পড়বে এবং ইনজুরি এড়ানো যাবে। নিয়মিত প্র্যাকটিস এবং রেপ বাড়ান। প্রথমে প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক সিট আপ দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সংখ্যাটি বাড়ান। প্রথমে ১০ থেকে ১৫টি সিট আপ দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সংখ্যাটি বাড়ান। এতে আপনার শরীর সিট আপের জন্য আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সিট আপের দক্ষতা বাড়াতে পেট ও কোমরের পেশিকে শক্তিশালী করুন। শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করুন। সিট আপ করার সময় শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। সিট আপের সময় শ্বাস নিন এবং নিচে যাওয়ার সময় শ্বাস ছাড়ুন। এতে শরীরের চাপ সঠিকভাবে সহ্য করতে পারবেন। পেশিগুলোকে পুনরুদ্ধারের সময় দিন। প্রতিদিন সিট আপ করলে পেশিতে ক্লান্তি আসতে পারে, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন। এতে পেশিগুলো পুনরায় শক্তি পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ফল ভালো হবে।
ড্রাগিং
নিয়মিত ড্রাগিং অনুশীলন করুন। যদি সম্ভব হয় এমন কিছু ওজনের বস্তুকে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুশীলন করুন, যেটি ড্রাগিংয়ের সময় মুখোমুখি হতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে প্রস্তুত করবে এবং ড্রাগিংয়ের সময় সঠিক ফর্ম বজায় রাখতে সাহায্য করবে। ড্রাগিং করতে অনেক সময় সহনশীলতা লাগে তাই নিয়মিত কার্ডিও এক্সারসাইজ, যেমন দৌড়ানো বা সাইক্লিং করলে স্ট্যামিনা বাড়বে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ড্রাগিং করতে পারবেন। শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ড্রাগিংয়ের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিকভাবে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভার টানার সময় নিয়মিত শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এতে আপনার শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য হবে।
শরীরের ওপরের অংশের শক্তি বাড়ান। ক্লাইম্বিংয়ের সময় মূলত হাত, কাঁধ ও পিঠের পেশির শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ জন্য নিয়মিত পুশ আপ, পুল আপ এবং চেস্ট প্রেসের মতো ব্যায়াম করুন। এতে ওপরের শরীরের পেশি মজবুত হবে এবং আরও সহজে ক্লাইম্ব করতে পারবেন। ক্লাইম্বিংয়ের সময় গ্রিপ বা হাতের পেশি শক্তিশালী হওয়া জরুরি, যাতে ধরে রাখা সহজ হয়। পায়ের পেশিও শক্তিশালী করুন। ক্লাইম্বিংয়ের সময় পায়ের শক্তিও প্রয়োজন। তাই এ দিকেও নজর দিন।
যদি কোনো ক্লাইম্বিং ওয়াল বা রোপ ক্লাইম্বিংয়ের সুবিধা থাকে, তবে সেখানে নিয়মিত অনুশীলন করুন। মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। ক্লাইম্বিংয়ের সময় মানসিক দৃঢ়তা ও সাহস অপরিহার্য। প্রথম দিকে উচ্চতাভীতি অনুভব হতে পারে, তবে নিয়মিত অনুশীলন ও মানসিক প্রস্তুতির মাধ্যমে এটি কাটিয়ে উঠুন।
সব ধাপেই নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের প্রস্তুতি ভালো রাখাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। খাদ্যাভ্যাসও সঠিক রাখতে হবে যেন ফিটনেস বজায় থাকে।