চাকরির পরীক্ষায় স্মারকলিপি লিখবেন কীভাবে

বিসিএস ও বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় স্মারকলিপি লিখতে বলা হয়
ছবি: প্রথম আলো

চাকরির লিখিত পরীক্ষায় অনেক সময় স্মারকলিপি লিখতে দেওয়া হয়। গঠন ও বক্তব্য যথাযথ থাকলে স্মারকলিপিতে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। কিন্তু এর গঠন ঠিকমতো না বোঝার কারণে এবং কিছু বিষয়ে অসতর্কতার দরুন অনেকেই এ প্রশ্নে কম নম্বর পেয়ে থাকেন। এখানে দেখানো হলো পরীক্ষার খাতায় কীভাবে স্মারকলিপি লিখতে হবে।

প্রশ্নের নমুনা

শুরুতে কিছু পুরোনো প্রশ্নের নমুনা দেখা যাক:

* স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতিগত ত্রুটি সংশোধন ও সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণে কতিপয় কার্যকর প্রস্তাব জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি রচনা করুন।

* পল্লী অঞ্চলের গণমানুষের চিকিৎসাসেবার অন্তরায়সমূহ চিহ্নিত করে সে সম্পর্কে কার্যকর প্রস্তাব পাঠিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনামন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি রচনা করুন।

* শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের কতিপয় প্রস্তাব সম্পর্কে মতামত জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি লিখুন।

* ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরের সড়ক ব্যবহারের অনুমতি প্রার্থনা করে প্রতিরক্ষা সচিবের কাছে একটি স্মারকলিপি রচনা করুন।

* আপনার এলাকায় শিক্ষামন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে এলাকার শিক্ষার সম্ভাব্য উন্নতির আবেদনসংবলিত একটি স্মারকপত্র রচনা করুন।

সময় ও আয়তন

পরীক্ষার প্রতিটি প্রশ্নের জন্য মান বা নম্বর অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখা উচিত। যেমন, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় একটি স্মারকলিপির জন্য নম্বর ১৫। এটি লেখার জন্য সর্বোচ্চ ১৮ মিনিট নেওয়া যায়। সাধারণ আবেদনপত্রের চেয়ে স্মারকলিপির আয়তন একটু বেশি হয়। তবে এর আয়তন দুই পৃষ্ঠার বেশি না হওয়াই ভালো হবে।

স্মারকলিপি কী

স্মারকলিপি হলো সম্মিলিত আবেদন। কোনো একটি দাবি নিয়ে সাধারণত স্মারকলিপি লেখা হয়। স্মারকলিপির আবেদন করা হয় কোনো মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান বরাবর কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বরাবর। স্মারকলিপি লিখতে পারে কোনো গোষ্ঠী, পক্ষ, সমিতি বা একদল মানুষ। যেমন, শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি লিখতে পারে শিক্ষক সমিতি, আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি লিখতে পারে ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন।

স্মারকলিপির গঠন

স্মারকলিপির শুরুতে তারিখ দিতে হয়। এর নিচে যাঁর বরাবর স্মারকলিপি লেখা হচ্ছে, তাঁর পদ ও পরিচয় লিখতে হয়। তারপর দাবির বিষয়টি উল্লেখ করতে হয়। স্মারকলিপির সম্বোধন ‘জনাব’ দিয়ে করা যায়। আবার মানপত্রের মতো করে ‘হে জনদরদী’ বা এ–জাতীয় অন্য কিছুও লেখা যায়। ‘জনাব’ দিয়ে শুরু করলে প্রতি অনুচ্ছেদে নতুন করে সম্বোধন করার দরকার নেই। তবে ‘হে জনদরদী’জাতীয় কিছু দিয়ে শুরু করলে প্রত্যেক অনুচ্ছেদে মানপত্রের মতো করে ‘হে প্রজ্ঞাবান’, ‘হে সংগ্রামী বন্ধু’—এ রকম সম্বোধন করতে হয়। স্মারকলিপির প্রথম অনুচ্ছেদে প্রশংসা করে কিছু কথা লিখতে হয়। এর পরের দুটি অনুচ্ছেদে সমস্যা বা দাবির ব্যাপারটি তুলে ধরতে হয়। সমস্যার পরের একটি অনুচ্ছেদে সমাধানের উপায় বা চাওয়া তুলে ধরতে হয়। শেষ অনুচ্ছেদে প্রতিকারের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সবশেষে স্বাক্ষর অংশে ‘বিনীত’ বা ‘দাবির পক্ষে’ কয়েকজনের নাম লিখতে হয়।

আবেদনপত্রের সঙ্গে মিল-অমিল

স্মারকলিপি সাধারণভাবে দেখতে আবেদনপত্রের মতোই হয়। তবে আবেদনপত্রের চেয়ে কোনো কোনো জায়গায় খানিক ভিন্নতা আছে। আবেদনপত্রের মতো স্মারকলিপিরও শুরুতে তারিখ দিতে হয় এবং এরপর যাঁর বরাবর লেখা হয়, তাঁর পদ-পরিচয় উল্লেখ করতে হয়। তবে আবেদনপত্রের মতো এখানে ‘বিষয়’ লিখতে হয় না। বরং বিষয়ের জায়গায় দাবি জানিয়ে শিরোনামের মতো করে একটি লাইন লিখতে হয়। যেমন, ‘রাস্তা সংস্কারের আবেদন জানিয়ে স্মারকলিপি’। দরখাস্তের ‘বিষয়’ মার্জিনের বাঁ দিকে চাপিয়ে লিখতে হয়। আর স্মারকলিপির দাবির লাইনটি শিরোনামের মতো করে মাঝখানে লিখতে হয়। স্মারকলিপিতে অনেকগুলো অনুচ্ছেদ থাকে; অনুচ্ছেদের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। দরখাস্তের শেষে বা স্বাক্ষর অংশে সাধারণত একজনের নাম থাকে। কিন্তু স্মারকলিপি যেহেতু সম্মিলিত দাবি, তাই কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতে হয়।

একটি নমুনা

প্রশ্ন: আপনার এলাকায় পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপনের প্রয়োজনের কথা জানিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের উদ্দেশে একটি স্মারকলিপি রচনা করুন।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

বরাবর

সচিব

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ সচিবালয়

ঢাকা।

পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপনের দাবিতে স্মারকলিপি

জনাব,

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত পরিচালনায় দেশের সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গতি এসেছে। সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আপনি নিজেও সরাসরি বেশ কিছু প্রকল্প ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সংস্কৃতিচর্চা ও একই সঙ্গে জ্ঞানচর্চার পথ সুগম হয়েছে। আমরাও আশা করি, এভাবে উাদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেশের মানুষ যখন শিক্ষায় এগিয়ে চলেছে, যখন দেশে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে জ্ঞানসাধনায় অন্যান্য বই পড়ার ব্যাপারে মানুষকে অনুপ্রেরণা দেওয়া হচ্ছে, তখন আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, মাগুরা জেলার বালিরহাট উপজেলায় আজ পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে কোনো পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়নি। এমনকি এখানকার কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও বড় পাঠাগার গড়ে তোলা হয়নি। দু-একটি যা আছে, তা নামেমাত্র এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

আপনি জেনে খুশি হবেন, আমাদের উপজেলার প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। এর মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ লোক স্নাতক উত্তীর্ণ। এখানকার দুই লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে তিন শতাধিক সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া আছে তিনটি সরকারি মহাবিদ্যালয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও আমরা অনেক দিন ধরে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সেটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার বলে এলাকাবাসী ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষা করছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সুষ্ঠু বিকাশের কথা মাথায় রেখে একটি পাবলিক লাইব্রেরি গড়ে তোলার জন্য আপনার মাধ্যমে সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

আপনিও নিশ্চয় স্বীকার করবেন, জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে পাঠাগারের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া পাবলিক লাইব্রেরি সম্পর্কে জনমত সংগ্রহ করতে গিয়ে আমরা লক্ষ করেছি, এলাকার জনসাধারণের মধ্যে এ সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। পাঠাগারের মাধ্যমে সমাজের মানুষ যে নানাভাবে উপকৃত হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিন দেশ-বিদেশে হাজার হাজার নতুন গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে, যা একক কোনো মানুষের পক্ষে কেনা বা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। এটি অনেক পীড়াদায়ক যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে হলে অথবা ভালো বইয়ের খোঁজ করতে হলে আমাদের জেলা সদরের পাবলিক লাইব্রেরিতে যেতে হয়, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ অবস্থায় আমাদের উপজেলায় একটি পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপনের গুরুত্ব অপরিসীম।

উপজেলা সদরের একটি উপযুক্ত স্থানে পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপনের মাধ্যমে এলাকার জ্ঞানপিপাসু মানুষের প্রাণের দাবি মেটানো সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। শুধু লাইব্রেরি স্থাপনের মধ্যেই এ কর্মকাণ্ড সীমিত রাখলে চলবে না। বই পড়ার পাশাপাশি এখান থেকে বই তোলার সুযোগও রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর প্রকাশিত দেশ-বিদেশের নতুন নতুন প্রয়োজনীয় বই লাইব্রেরিতে তুলতে হবে। আপনি নিশ্চয় মানবেন, ইন্টারনেটের এ যুগেও কাগজের বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।

আপনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও যুগোপযোগী পরিকল্পনার কারণে দেশের সংস্কৃতিচর্চায় দৃষ্টিগ্রাহ্য কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমরা মনে করি, বালিরহাট উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ এলাকার মানুষের মনোজগতেও পরিবর্তন আসবে।

বিনয়াবনত,

মাগুরা জেলার বালিরহাট উপজেলার সাধারণ জনগণের পক্ষে

‘ক’ হোসেন

‘খ’ মজুমদার

‘গ’ বেগম 

সতর্কতা

* স্মারকলিপির উত্তরটি নতুন পৃষ্ঠায় লেখা শুরু করতে হয়।

* অন্যান্য পত্রের মতো এখানেও নিজের নাম-ঠিকানা আড়াল করতে হয়।

* স্মারকলিপির আয়তন বা অনুচ্ছেদসংখ্যা নির্দিষ্ট নয়।

* পরীক্ষায় খাতায় স্মারকলিপির আয়তন নির্ভর করছে বরাদ্দ করা সময়ের ওপর।

* স্মারকলিপির প্রথম দিকে দাবির কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।

* শেষ দিকে যথাসম্ভব সমস্যার সমাধানও তুলে ধরতে হয়।


শিক্ষক, বাংলা বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়