৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতিতে করণীয়

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন। আজ পঞ্চম পর্বে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হলো।

বিসিএস প্রিলিমিনারিতে মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। প্রস্তুতির জন্য শুরুতেই পিএসসির সিলেবাস দেখে নিতে হবে। এরপর ১০ম থেকে ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারির আগের সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়তে হবে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে অন্তত ১৫-১৬ নম্বর পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সে জন্য যেসব বিষয় বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে, সেগুলো এখানে আলোচনা করা হলো।

বৈশ্বিক ইতিহাস ও ভূরাজনীতি

বৈশ্বিক ইতিহাস, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং ভূরাজনীতি থেকে প্রতি বিসিএসেই ৪ থেকে ৮ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। প্রথমেই বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা ও ক্ষুদ্রজাতীগোষ্ঠী সম্পর্কে জানতে হবে। এই অংশ থেকে একটি প্রশ্ন প্রায়ই আসে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল পরিচিতি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ও দেশ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। ইতিহাস, বাণিজ্য ও কূটনীতির কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দেশগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা আবশ্যক। যেমন ভারত, চীন, মিয়ানমার ও যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলো, রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, কোরিয়া উপদ্বীপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিভিন্ন মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন

শুধু জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠন থেকেই প্রতিবার ৩ থেকে ৫ নম্বরের প্রশ্ন আসে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, পরিচিতি, বিভিন্ন পরিষদ, মহাসচিব, শান্তিরক্ষা মিশন, বিশেষায়িত সংস্থা, বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ, এলডিসি, এসডিজিসহ অন্য তথ্যগুলো শিখে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে হবে। যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সার্ক, আসিয়ান, বিমসটেক, ব্রিকস, ওআইসি, কমনওয়েলথ, ন্যাম, আরব লিগ, অ্যামনেস্টি, জিসিসি, জি-২০, জি-৭ এবং ওপেক খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব সংস্থার প্রতিষ্ঠাকাল, সদর দপ্তর, মহাসচিব, সদস্যসংখ্যা, সর্বশেষ সম্মেলন এবং আলোচিত অন্য তথ্যগুলো পড়তে হবে।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা 

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আন্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্পর্ক থেকে ২ থেকে ৪ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ এবং ইতিহাসের সব গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, শিল্পবিপ্লব, অরেঞ্জ বিপ্লব, চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, আরব বসন্ত এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। বিরোধপূর্ণ সীমান্তবর্তী অঞ্চল, বিভিন্ন দেশের গেরিলা সংস্থা ও সামরিক ঘাঁটি সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সনদ—ম্যাগনাকার্টা, বিল অব রাইটস, ভার্সাই চুক্তি, জেনেভা কনভেনশন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল, অসলো চুক্তি, শেনজেন চুক্তি, অটোয়া চুক্তি, এনপিটি, সিটিবিটি এবং টিকফা সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন সামরিক জোট ও সংস্থা—ন্যাটো, কোয়াড, অকাস, ইন্টারপোল ও অন্যান্য প্রসিদ্ধ জোট সম্পর্কে পড়তে হবে। এ ছাড়া বিশ্বের আলোচিত অপারেশন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিখ্যাত সীমারেখা সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। 

পরিবেশ ও কূটনীতি

আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ইস্যু ও কূটনীতি থেকে তিন-চারটি প্রশ্ন থাকতে পারে। বর্তমান সময়ে পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু কূটনীতি অন্যতম আলোচিত বিষয়। তাই পরিবেশসংক্রান্ত সব তথ্য ভালোভাবে পড়তে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস, ওজোনস্তর, সবুজ জলবায়ু তহবিল ও পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস সম্পর্কে জানতে হবে। পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা—গ্রিনপিস, আইপিসিসি, ইউএনএফসিসি, আইউসিএন, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। পরিবেশবিষয়ক চুক্তি ও সনদ—কিয়োটো প্রটোকল, মন্ট্রিল প্রটোকল, কার্টাগেনা প্রটোকল, ভিয়েনা কনভেনশন, রামসার কনভেনশন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন এবং পরিবেশবিষয়ক জাতিসংঘের বিভিন্ন সম্মেলন সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত।

অন্যান্য

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, বিভিন্ন দেশের আইনসভা, ভৌগোলিক উপনাম, জাতীয় প্রতীক, উপনিবেশ, রাজধানী ও মুদ্রা, সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, বিখ্যাত গ্রন্থ, পুরস্কার ও সম্মাননা, বিখ্যাত উক্তি এবং বিভিন্ন স্থানের বর্তমান ও পূর্ববর্তী নাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। পরীক্ষায় এসব বিষয় থেকেও কিছু প্রশ্ন আসতে পারে।

সাম্প্রতিকের জন্য সময়ের আলোচিত ঘটনাপ্রবাহ, চুক্তি, জোট, সম্মেলন, সূচক, পদক-পুরস্কার এবং সিলেবাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো পড়ে নিলেই যথেষ্ট। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে খুব কম প্রশ্নই আসে। তাই সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানে বেশি সময় না দিয়ে মৌলিক বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।