৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর শুরু। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ ষষ্ঠ পর্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গণিতের মতোই পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান ও গণিতের দক্ষতা ক্যাডার প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১০০ নম্বর। এর মধ্যে সাধারণ বিজ্ঞানে ৬০, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ২৫ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে ১৫ নম্বর। পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা।
প্রশ্ন বিশ্লেষণ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভালো করতে প্রথমে আগের বছরের সব প্রশ্ন পড়তে হবে। বিশেষ করে ৩০ থেকে ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞান অংশের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে পড়ে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ, লিখিত পরীক্ষার অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি আগের প্রশ্ন রিপিট হয়। এ ছাড়া প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নপদ্ধতি ও উত্তর করার কৌশল সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া যাবে।
সাধারণ বিজ্ঞান
এই অংশে ৯ সেট প্রশ্ন থাকে। যেকোনো আট সেটের উত্তর করতে হয়। প্রশ্নের মান সাধারণত এক, দুই বা আড়াই করে থাকে। যেহেতু বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের সব প্রার্থীই অংশগ্রহণ করেন, তাই এখানে দৈনন্দিন বিজ্ঞানের খুব সাধারণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। পদার্থের অঙ্ক, রসায়নের বিক্রিয়া কিংবা জটিল পরীক্ষণ–সংশ্লিষ্ট কোনো প্রশ্ন করা হয় না। এই অংশের যেকোনো বিষয় পড়ার শুরুতেই নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই থেকে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টি পড়ে নিতে হবে। যখন এই বিষয়ের মৌলিক ধারণা হবে, তখন অন্য যেকোনো বই থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলো বুঝতে পারবেন। ইউটিউবে লিখিত বিজ্ঞানের ভালো কিছু টিউটোরিয়াল আছে, সেগুলো দেখে নিলে বিজ্ঞানের কঠিন টপিকগুলোও খুব সহজ মনে হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বোর্ড বই থেকে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো পড়তে পারেন।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশে সাধারণত ১২টি প্রশ্নের মধ্যে ১০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের মান থাকে ২.৫ নম্বর। আবার কখনো সাত থেকে আটটি প্রশ্নের মধ্যে যেকোনো পাঁচটির উত্তর করতে হয়। প্রতি প্রশ্নের নম্বর ৫। মোট ২৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এই অংশে ভালো করার জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বইটি অনুসরণ করতে পারেন। প্রিলিমিনারিতে যে বইটি পড়েছেন, সেটি অবশ্যই একবার রিভিশন দেবেন। কারণ, এই অংশের প্রিলিমিনারি ও লিখিত সিলেবাসের মধ্যে অনেক মিল আছে। এর মধ্যে যে টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে, সেই টপিকের বিষয়গুলো ভালো করে পড়বেন। কম্পিউটারের গঠন ও এর বিভিন্ন প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য, মেমোরি প্রকারভেদ, ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস এবং এগুলোর কাজ, কম্পিউটারের সফটওয়্যার সিস্টেম, কম্পিউটার ভাইরাস, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক পদ্ধতি ও নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম, ইন্টারনেট প্রটোকল, ল্যান, ম্যান ও ওয়ান (LAN, MAN, WAN) নেটওয়ার্ক, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল, ই-কমার্স, বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সমিশন মিডিয়া, দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে।
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি
সাধারণত চার-পাঁচটি প্রশ্নের মধ্য থেকে তিনটির উত্তর করতে হয়। প্রতি প্রশ্ন ৫ করে মোট ১৫ নম্বর থাকে। এই অংশের সিলেবাস বেশ বড়। তবে গুরুত্বপূর্ণ টপিক বাছাই করে পরিকল্পনামাফিক পড়লে সহজেই ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে। ওহমের সূত্র, কার্শফের ভোল্টেজ সূত্র, কার্শফের তড়িৎ প্রবাহের সূত্র—এ সূত্রগুলো খাতায় একসঙ্গে লিখে শিখে ফেলবেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইস, রোধ, ক্যাপাসিটর, আইসি, সেমিকন্ডাক্টর, টেলিভিশন, রাডার—এ ধরনের জিনিসের একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক রয়েছে। এগুলো একসঙ্গে পড়বেন এবং কাজ, গুরুত্ব ইত্যাদি পয়েন্ট আকারে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সার্কিটের প্রকারভেদ, এসি ও ডিসি ভোল্টেজ উৎপাদন, ট্রান্সফরমার, নিউক্লিয়ার শক্তি, ডিজিটাল ডিভাইস, বৈদ্যুতিক মোটর ও তার ব্যবহার সম্পর্কেও জানতে হবে। এই অংশে কিছু জটিল বিষয়ও আছে। যদি সেগুলো খুব দুর্বোধ্য মনে হয়, তাহলে বাদ দিতে পারেন।
সংক্ষিপ্ত ও পয়েন্ট আকারে লেখা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তাই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খুব সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য হওয়া উচিত। প্রশ্নে যতটুকু চেয়েছে, কেবল ততটুকুই লিখতে হবে। ভূমিকা, উপসংহার কিংবা অপ্রাসঙ্গিক কোনো তথ্য দেওয়া ঠিক নয়। বিজ্ঞানে সব প্রশ্নের উত্তর করে আসতে পারা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন যদি প্রশ্নে আসে দুর্বল ও শক্তিশালী অ্যাসিডের তিনটি করে নাম লিখুন, তাহলে এক, দুই, তিন দিয়ে শুধু অ্যাসিডের নামগুলোই লিখে দেবেন। অতিরঞ্জিত কিছু লেখার চেষ্টা করবেন না। উত্তরগুলো বর্ণনামূলক না লিখে পয়েন্ট আকারে লিখতে হবে। পয়েন্ট আকারে লিখলে পরীক্ষককে খুব সহজেই সন্তুষ্ট করা যাবে। যেমন মাটির অম্লত্ব সৃষ্টির কারণগুলো আলোচনা করুন, এই প্রশ্নের উত্তরে প্যারাগ্রাফ আকারে না লিখে পয়েন্ট আকারে চার-পাঁচটি কারণ লিখলে বেশি নম্বর ওঠানো সহজ হবে।
গ্রাফ, চার্ট, ডায়াগ্রাম ও সংকেতের ব্যবহার
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে প্রয়োজনীয় তথ্য, চিত্র, সারণি ও সংকেতের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াগ্রাম, গ্রাফ ও চার্টের ব্যবহার উত্তরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় এবং বেশি নম্বর প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। আপনি যদি একটি সুন্দর চিত্রের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গগুলো দেখান, তাহলে তা সহজেই পরীক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। এই একটি চিত্র দিয়েই আলোর বিভিন্ন রং, আলোর বর্ণালি, তড়িৎ চুম্বক বর্ণালিসহ আরও অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা যাবে। চিত্রের সাহায্যে অনেক দীর্ঘ কথাকে খুব সংক্ষেপে প্রকাশ করা যায়।
উপযুক্ত উদাহরণ সংযোজন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক প্রশ্নে সংজ্ঞা ও ধারণাগত বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সংজ্ঞার সঙ্গে কিছু উদাহরণ যুক্ত করে দিতে পারেন। খাদ্য ও পুষ্টি–সংক্রান্ত টপিকগুলোতেও যতটা সম্ভব উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে খাতার সৌন্দর্য ও উত্তরের মান বেড়ে যাবে। ডিএনএ, আরএনএ ভাইরাসগুলোর নাম, কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে কোন কোন রোগ হয়—এগুলোও উদাহরণসহ লিখতে হবে।
পেনসিল দিয়ে চিত্র আঁকা
যেকোনো চিত্র আঁকার ক্ষেত্রে পেনসিল ব্যবহার করতে হবে। চিত্রের নিচে চিত্রের নাম-পরিচয় বা কিসের চিত্র আঁকা হয়েছে, সেটা কলম দিয়ে লিখে দিতে হবে। কম্পিউটারেও পেনসিল দিয়ে ছক আকারে তথ্য দেবেন। ধরুন, ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসের শ্রেণিবিভাগ এল, আপনি সুন্দর করে ছক আকারে দিলে নম্বর বেশি পাবেন। পরীক্ষক প্যারাগ্রাফ পড়ার চেয়ে ছক পড়তে ভালোবাসেন। আপনার উপস্থাপন যত সুন্দর হবে, নম্বর তত বেশি পাবেন।