চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন সালাহ্ উদ্দিন কাদের
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন সালাহ্ উদ্দিন কাদের

পছন্দক্রমে পুলিশ ক্যাডার প্রথমে আর শিক্ষা শেষে কেন

৪৪তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ নবম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সালাহ্ উদ্দিন কাদের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন সালাহ্ উদ্দিন কাদের। ৪৩তম বিসিএসে অ্যাপিয়ার্ড প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। এই বিসিএসে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল পুলিশ ক্যাডার। চূড়ান্ত ফলেও পেয়েছেন পছন্দের পুলিশ ক্যাডার।

গত বছরের ৬ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা দেন সালাহ্ উদ্দিন কাদের। ভাইভায় ২৮-২৯টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সালাহ্ উদ্দিন কাদের বলেন, পিএসসিতে ভাইভা দিতে যাওয়ার সময় আমি খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। ভাইভা বোর্ডে আমার সিরিয়াল ছিল ১৪তম। বোর্ডে গিয়ে পারসোনাল কিছু জিজ্ঞেস করলে কী কী উত্তর দেওয়া যায়, তা ভাবছিলাম। আর কোনো ক্যান্ডিডেট ভাইভা শেষে বেরিয়ে এলে তার এক্সপ্রেশন দেখতাম এবং তাকে কী কী প্রশ্ন করা হয়েছে, বোর্ড কেমন ব্যবহার করেছে, সেটা জানতে চাইতাম। এভাবে একটা উৎকণ্ঠা ও রোমাঞ্চের মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করছিলাম।

ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের পরপর জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি চয়েস লিস্টে পুলিশ ক্যাডার প্রথমে দিয়েছেন, শিক্ষা ক্যাডার শেষে দিয়েছেন। কেন? কারণটা ব্যাখ্যা করবেন?’

সালাহ্ উদ্দিন উত্তরে বলেন, ‘পুলিশ ক্যাডার প্রথমে দিয়েছি। কারণ, এটা আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম, তখন থেকে পুলিশ হতে চাই।’

‘ঠিক কী দেখে আপনি পুলিশ হতে চান?’ উত্তরে সালাহ্ উদ্দিন বলেন, ‘আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রত্যন্ত দ্বীপ মহেশখালীতে। এটি একসময় বাংলাদেশের অন্যতম অপরাধপ্রবণ অঞ্চল ছিল। তখন প্রায়ই দেখতাম, অপরাধ দমন ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সদস্যরা অনেক সিনসিয়ারলি কাজ করতেন। তদন্তের কাজে পুলিশ অফিসাররা আমাদের গ্রামে এলে তাঁরা যে সম্মানটা পেতেন, সেটা আমাকে অনেক আকৃষ্ট করত। পাশাপাশি পুলিশের ইউনিফর্মের প্রতিও আমার তীব্র আকর্ষণ কাজ করত।’

সালাহ্ উদ্দিন কাদের

পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ‘তাহলে শিক্ষকেরা সম্মান পান না, তাই আপনি শিক্ষকতাকে সবার শেষে রেখেছেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘ঠিক সে রকম না স্যার। শিক্ষকেরা সমাজের আইকন। তাঁরা সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু স্যার শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি ধীরগতিতে হয়, মন্ত্রণালয়ে সহজে পোস্টিং পাওয়া যায় না। ফলে প্রশাসনিক লেভেলে কাজ করার সুযোগ খুব একটা হয় না।’

ভাইভা বোর্ড বলে এটাই বাস্তবতা। আচ্ছা ধরুন, ‘আপনি ৪৩তম বিসিএসে অ্যাডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন, ৫৩তম বিসিএসেও কি একই পরিস্থিতি দেখতে চান?’ সালাহ্ উদ্দিন উত্তর দেন, ‘নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সুযোগ পেলে আমি শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করব। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রশাসনিক পদগুলোয় যাতে শিক্ষকেরাই পদায়ন পান। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা যাতে বৃদ্ধি পায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করব।’

‘বাংলাদেশ পুলিশ কোন আইন অনুসারে পরিচালিত হয়?’ উত্তরে বলেন, ‘পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ অনুসারে।’ সম্পূরক প্রশ্ন করা হয়, ‘১৯৪৩ নাকি ১৮৬১?’ তিনি বলেন, ‘১৮৬১ সালে দ্য ইন্ডিয়ার পুলিশ অ্যাক্ট অনুসারে উপমহাদেশে পুলিশ বাহিনী গঠিত হয়েছিল।’

‘আমাদের যে অ্যাটমোস্পিয়ারের স্তরগুলো আছেন সেগুলো ক্রমিক অনুসারে বলুন? ওজোন মণ্ডল কোন স্তরে থাকে?’ তিনি ক্রমিক অনুসারে বলেন, ‘আমাদের বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ার, এরপর স্ট্রাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, আয়নোস্ফিয়ার ও এক্সোস্ফিয়ার। আর ওজোন মণ্ডল স্ট্রাটোস্ফিয়ারে থাকে।’

‘ওজোনের সংকেত কী? ওজোন কেন গুরুত্বপূর্ণ?’ উত্তর দেন, ‘ওজোনের সংকেত O3। সূর্য থেকে যে অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত হয়, সেগুলো ওজোনস্তরে এসে বাধা পায়। ওজোনস্তর না থাকলে অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসবে, ফলে গ্রিনহাউস ইফেক্টের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটবে এবং ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে।’

গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নাম জানতে চাইলে সালাহ্‌ উদ্দিন বলেন, ‘গ্রিনহাউস গ্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিথেন, কার্বন ডাই–অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি।’

‘আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ওপরে না গিয়ে নিচে কেন নেমে আসে?’ উত্তরে বলেন, ‘গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স বা মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে।’ এরপর প্রশ্ন করা হয়, ‘ধরুন, আপনাকে পুলিশ হিসেবে যেখানে পদায়ন করা হলো, সেখানে আপনি একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করলেন। কিন্তু এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এসে আপনাকে জোর করছেন, আসামিকে ছেড়ে দিতে। তখন আপনি কী করবেন?’ উত্তরে সালাহ্ উদ্দিন বলেন, ‘ব্যাপারটা যে বেআইনি এবং একজন অপরাধীকে এভাবে ছেড়ে দিতে আমি যে অপারগ, তা বুঝিয়ে বলব। তবু তিনি জোর করলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বিষয়টি জানাব।’

‘আপনি পাঠ্যবইয়ের বাইরে কার কার বই পড়েছেন?’ তিনি বলেন, ‘আমি কাজী নজরুলের ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসটা পড়েছি। তাঁর কবিতা পড়েছি। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ও ছোটগল্প পড়েছি।’

‘হুমায়ূন আহমেদের লেখা ভালো লাগে? তাঁর কোন বইটা পড়েছেন?’ সালাহ্‌ উদ্দিন ‘দেয়াল’ উপন্যাস পড়ার কথা বললে তখন জিজ্ঞেস করা হয়, ‘এটা কিসের ভিত্তিতে লেখা?’ তিনি উত্তর দেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে লেখা।’

‘এ উপন্যাস কীভাবে শেষ হয়েছে? কোন সময় পর্যন্ত বর্ণনা আছে?’ সালাহ্‌ উদ্দিন বলেন, ‘পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, অভ্যুত্থান, পাল্টা–অভ্যুত্থান, জিয়াউর রহমানের শাসনামল ও তাঁর হত্যাকাণ্ডের বর্ণনার মধ্য দিয়ে উপন্যাসটি শেষ হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কয়েকটা চলচ্চিত্রের নাম জানতে চাইলে সালাহ্‌ উদ্দিন উত্তর দেন, ‘“ওরা এগারো জন”, “গেরিলা”।’ ‘হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কিছু উপন্যাস ও চলচ্চিত্র আছে। সেগুলোর নাম বলুন?’ সালাহ্‌ উদ্দিন বলেন, ‘“জোছনা ও জননীর গল্প”, “আগুনের পরশমণি”।’