বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা-৬

চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে কীভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে

৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

৪৪তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এখন প্রতিদিন ৯০ জনের ভাইভা হচ্ছে। ৯ জুলাই থেকে প্রতিদিন ১৮০ জন প্রার্থীর ভাইভা নেবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ ষষ্ঠ পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন মো. শরীফুল ইসলাম। ৪৩তম বিসিএস ছিল তৃতীয় বিসিএস। তিনি বলেন, ৪০তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। ৪১তম বিসিএসে ভাইভা দিয়ে নন–ক্যাডার থেকে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। কিছুটা হতাশা নিয়েই ৪৩তম বিসিএসের ভাইভার প্রস্তুতি নিতে থাকি।

শরীফুল ইসলাম বলেন, ৪১তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারের প্রার্থী হলেও ৪৩তম বিসিএসে উভয় (সাধারণ ক্যাডার ও শিক্ষা ক্যাডার ) ক্যাডারের প্রার্থী ছিলাম। আগের ভাইভায় যে বোর্ডে ভাইভা দিয়েছিলাম, ৪৩তম বিসিএসেও একই বোর্ড পড়ে। এ কারণে কিছুটা হতাশ ছিলাম। মনে হচ্ছিল এ বোর্ডের কারণে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাইনি। ভাইভার জন্য নির্ধারিত দিনে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, শুল্ক ও আবগারি, কর, নিরীক্ষা ও হিসাব, পুলিশ—এই পছন্দক্রম নিয়ে ভাইভা দিতে যাই।

মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের পর শরীফুলকে বলা হয়, আপনি পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম পছন্দ দিয়েছেন, ধরে নিলাম আপনি অনেক জানেন, অনেক পড়াশোনা করেন।  নিয়মিত পত্রিকা পড়েন কি না? তিনি উত্তরে বলেন, জি স্যার, চেষ্টা করি।

আপনি ফিন্যান্স বিষয়ে স্নাতক করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক নামের শেষে পিএলসি যোগ করছে কেন? শরীফুল বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ব্যাংক কোম্পানির নাম পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়েছে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন দ্বিতীয়বারের মতো ২০২০ সালে সংশোধন করে কয়েকটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সেটার আলোকে  প্রজ্ঞাপন জারি করে সব তফসিলি ব্যাংককে পাঠিয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোম্পানি আইনের ধারা ১১–এর ‘ক’ অনুযায়ী সীমিত দায় পাবলিক কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের শেষে পাবলিক সীমিত দায় কোম্পানি বা সংক্ষেপে পিএলসি লিখতে হবে। আর কোম্পানি আইনের ধারা ১১–এর ‘খ’ অনুযায়ী সীমিত দায় প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানির নামের শেষে ‘সীমিত দায়’ বা সংক্ষেপে এলটিডি লিখতে হবে। এ নির্দেশনা পরিপালন করার ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানির নাম ও মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন বা সংঘস্মারকও পরিবর্তন করতে হবে।

আরব লিগের যাত্রা কেন শুরু হয়েছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে শরীফুল বলেন, নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারস্পরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৪৫ সালে আরব লিগ গঠিত হয়। আরব লিগের বর্তমান সদস্যসংখ্যা জানতে চাইলে উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র কাকে বলে? আরব লিগের একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের নাম বলুন?  শরীফুল ইসলাম উত্তর দেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নয়, তবে সদস্য হতে আগ্রহী সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন স্বীকৃত কিছু দেশকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র বলে। আরব লিগের একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ভারত।

ভারত কেন আরব লিগের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র? নিদিষ্ট কারণ বলতে বলায় উত্তর দেন, ভারত আরব সাগরের তীরবর্তী একটি দেশ। ভারতের প্রচুর জনশক্তি আরব দেশগুলোতে কাজ করে, কৃষ্টি–কালচারের অনেক ক্ষেত্রে মিল আছে। তাই ভারতকে আরব লিগের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশ কীভাবে সমাধান করবে? এটি জানতে চাইলে শরীফুল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যমান বড় সমস্যাগুলোর একটি। আর্থসামাজিক সব ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যু নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, কূটনৈতিক বহুমুখী উদ্যোগ, ভারত, চীন, জাপানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। জাতিসংঘ ও পরাশক্তির দেশগুলোরও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে এ ক্ষেত্রে।

চীন কীভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে? শরীফুল উত্তর দেন, চীন বাংলাদেশের অদূরবর্তী দেশ এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশেই চীনের বিনিয়োগ রয়েছে এবং চীনের প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীনকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে মিয়ানমারে চীনের প্রভাব কাজে লাগানো যেতে পারে স্যার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন মো. শরীফুল ইসলাম

মুহিবুল্লাহর নাম শুনেছেন?  তিনি কে? তাকে হত্যাকারী সন্ত্রাসী দলের নাম কী? মো. শরীফুল ইসলাম উত্তর দেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা মুহিবুল্লাহ। তাঁকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। তাঁকে হত্যাকারী দলের নাম আরসা। আরসার বিপক্ষ গ্রুপের নাম জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু বলতে পারিনি।

শরীফুল ইসলাম যেহেতু ফিন্যান্স বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাই তাঁকে তাঁর পঠিত বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে ছিল অগ্রাধিকার শেয়ার কী, অগ্রাধিকার স্টোক ও কমন স্টোকের মধ্যে পার্থক্য কী, এজেন্সি কনফ্লিক্ট কী, এজেন্সি ব্যয় বাড়ে কেন এবং প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন ও ওয়েলথ ম্যাক্সিমাইজেশনের মধ্যে পার্থক্য কী? নিজের পঠিত বিষয় হওয়ায় সহজেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের আগের বিভিন্ন ঘটনাগুলো জানতে চাওয়ায় শরীফুল বলেন, ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশ হয়। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে বিভক্ত হয়। এরপর থামিয়ে দেওয়া হয়।

পাকিস্তান অংশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাল এবং ঘটনা জানতে চাইলে শরীফুল ইসলাম উত্তর দেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

যুক্তফ্রন্টের দলগুলোর নাম জিজ্ঞেস করলে শরীফুল বলেন, মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ,  শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক-শ্রমিক পার্টি, মওলানা আতাহার আলীর নেজাম-ই-ইসলামী, হাজি দানেশের বামপন্থী গণতন্ত্রী দল।
৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি কবে পাওয়া যায়? এমন প্রশ্নে শরীফুল উত্তর দেন, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি দেয়। ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ঠিক কোন সময়ে দেওয়া হয়? তিনি উত্তর দেন, ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২টার অল্প কিছুক্ষণ পর। ঠিক সময়টা জানতে চাইলে আমি বলি, সরি স্যার, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চাইলে শরীফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১১৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য । তা ছাড়া সরকারের ধারাবাহিক পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বিবিএস সমীক্ষা অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার মাত্র ১৮.৭ এবং চরম দারিদ্র্যের হার মাত্র ৫.৬। এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে, যেখানে আইসিটি খাতকে দারিদ্র্য বিমোচনের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভিশন-২০৪১ এমনভাবে নেওয়া হচ্ছে, যেখানে দরিদ্রতা হবে সুদূর অতীতের কল্পনা এবং বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সরকারের অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্থনীতিতে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।