৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রিয়াজ উদ্দিন। আজ শুক্রবার তৃতীয় পর্বে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হলো।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা থেকে ১৫ নম্বর করে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতায় যাঁদের ভালো দখল আছে, তাঁদের জন্য প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হওয়া অনেক সহজ।
গাণিতিক যুক্তি নিয়ে অনেক চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে অহেতুক ভীতি কাজ করে। এই ভয়কে জয় করতে হলে গণিতের মৌলিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে হবে। আর তাই গণিতের প্রস্তুতি হতে হবে বোর্ড বইভিত্তিক। শুরুতেই পিএসসি গাণিতিক যুক্তির সিলেবাস দেখে নিতে হবে। সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো মাধ্যমিক পর্যায়ের বোর্ড বইগুলো থেকে অনুশীলন করতে হবে। সপ্তম, অষ্টম শ্রেণির গণিত বোর্ড বই এবং নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিত বোর্ড বই থেকে সিলেবাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো খুব ভালোভাবে চর্চা করতে হবে। এতে সময় কিছুটা বেশি লাগলেও ফল খুব ভালো পাওয়া যাবে। কারণ, বিসিএস লিখিততেও ৫০ নম্বরের গণিত পরীক্ষা আছে। লিখিতের বেশির ভাগ প্রশ্নই বোর্ড বইভিত্তিক থাকবে। তাই বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় গাণিতিক যুক্তিতে ভালো নম্বর পেতে বোর্ড বইগুলো চর্চা করার কোনো বিকল্প নেই।
প্রিলিমিনারির গণিতে ভালো করতে হলে প্রতিটি অঙ্কের শর্ট টেকনিক জানতে হবে। এতে খুব অল্প সময়ে গণিতের সমাধান করা যাবে। পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ও উচ্চতর গণিতের সব সূত্র নোট করে বারবার পড়তে হবে। সূত্র মুখস্থ করা ছাড়া কম সময়ে গণিতের সমাধান করা বেশ কঠিন।
গণিতে ভালো করার আরেকটি অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে নিয়মিত অনুশীলন করা। প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা হাতে-কলমে গণিত অনুশীলন করতে হবে। গণিত যত বেশি অনুশীলন করবেন, পরীক্ষায় তত বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন। বোর্ড বই থেকে অনুশীলন করার পাশাপাশি আগের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো নিজে নিজে সমাধান করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত দুটি আগের চাকরির পরীক্ষার গণিত প্রশ্নের সমাধান অনুশীলন করতে হবে।
গাণিতিক যুক্তির অধ্যায়গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পাটিগণিতের লসাগু ও গসাগু, শতকরা এবং সরল ও যৌগিক মুনাফা থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে। এ ছাড়া বাস্তব সংখ্যা, অনুপাত-সমানুপাত ও লাভ-ক্ষতি থেকেও কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে। বীজগণিতের অধ্যায়গুলোর মধ্যে বীজগাণিতিক সূত্রাবলি, সূচক ও লগারিদম, সমান্তর ও গুণোত্তর ধারা এবং সরল ও দ্বিপদী অসমতা থেকে প্রতি বিসিএসেই প্রশ্ন আসে। তবে বীজগণিতের বহুপদী উৎপাদক, সরল ও দ্বিপদী সমীকরণ ও সরলসহ সমীকরণ থেকে খুব কম প্রশ্ন আসে। জ্যামিতির রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজসংক্রান্ত উপপাদ্য থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া সেট, সমাবেশ ও সম্ভাব্যতা থেকে প্রচুর প্রশ্ন আসে। অসমতা, ত্রিকোণমিতি, বিন্যাস, জটিল সংখ্যা, পরিসংখ্যান ও পরিমিতি থেকে তুলনামূলক কম প্রশ্ন আসে।
পরীক্ষার কক্ষে ক্যালকুলেটরের সাহায্য ছাড়াই গণিতের সমাধান বের করতে হবে। তাই আগে থেকে ক্যালকুলেটর ছাড়া গণিত সমাধান করার অনুশীলন করুন। যেহেতু গণিতের উত্তর করা কিছুটা সময়সাপেক্ষ, তাই বিসিএস প্রিলিমিনারিতে সবশেষে গণিত উত্তর করা উচিত। গণিতে দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে। এতে নিজের সবলতা-দুর্বলতা শনাক্ত করা যাবে এবং দ্রুত সমাধান করার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
গণিতে দুর্বল এমন অনেক প্রার্থী গণিতকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নেন, যা একেবারেই কাম্য নয়। গণিত বাদ দিয়ে প্রিলিমিনারি বা লিখিত কোনোমতে পাস করা গেলেও চূড়ান্ত ফলাফলে শূন্য হাতে ফেরার সম্ভাবনা বেশি। বিসিএস ক্যাডার বা নন-ক্যাডার থেকে ভালো একটি চাকরি পেতে হলে গণিতে পারদর্শী হওয়া অপরিহার্য। তাই গণিতকে ভয় নয়, বরং উপভোগ করে নিয়মিত অনুশীলন করুন।
ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, সমস্যা সমাধান, বানান ও ভাষা, যান্ত্রিক দক্ষতা, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক এবং সংখ্যাগত ক্ষমতা—এই ছয় বিষয় থেকে মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন করা হয়। বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিতের জন্য মানসিক দক্ষতার সিলেবাস প্রায় একই। তাই প্রথমেই আগের প্রিলিমিনারি ও লিখিতের সব প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়তে হবে। মানসিক দক্ষতাও গণিতের মতোই নিয়মিত অনুশীলনের বিষয়। যেকোনো সহায়ক বই কিংবা অনলাইনভিত্তিক কিছু ওয়েবসাইট থেকেও মানসিক দক্ষতার চর্চা করা যায়।
মানসিক দক্ষতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে সব সময়ই প্রশ্ন আসে। সেগুলো হচ্ছে—রক্তের সম্পর্ক নির্ণয়, সাদৃশ্য, কোডিং–ডিকোডিং, শূন্যস্থান পূরণ, ভিন্ন শব্দ শনাক্ত করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য, বর্ণের ক্রম, সিরিজ সম্পন্নকরণ, চিত্রে যৌক্তিক সংখ্যা বসানো, দিক নির্ণয়, সম্পর্ক নির্ণয়, সঠিক চিত্র শনাক্তকরণ, সংখ্যার ওপর বিভিন্ন ধাঁধা, আয়নায় শব্দের প্রতিফলন, বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার, ভারসাম্য রক্ষা, শুদ্ধ বানান, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, ঘড়ি, দিন, ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজ গণনা, স্থানাঙ্ক উপলব্ধি ও জটিল যন্ত্রের পরিচালনা। এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। মানসিক দক্ষতায় ভালো করার জন্য উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপস্থিত বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানসিক দক্ষতার অনেক প্রশ্ন সহজেই উত্তর করা যাবে।