৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ও ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী শানিরুল ইসলাম শাওন। আজ দ্বিতীয় পর্বে সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হলো।
৪৬তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতির ধারাবাহিক আলোচনায় আজ আলোচনা করা হবে সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের প্রস্তুতি নিয়ে। লিখিত পরীক্ষার এ অংশে ভালো প্রস্তুতি নিলে আপনি ৭৫ নম্বর পর্যন্ত পেতে পারেন। এমনকি যাঁরা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন না, তাঁরাও ভয় না পেয়ে প্রস্তুতি নিলে ৫৫-৬০ নম্বর পেতে পারেন।
লিখিত পরীক্ষার এ বিষয়ে ১০০ নম্বর বরাদ্দ। ১০০ নম্বরকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। সাধারণ বিজ্ঞানে ৬০ নম্বর, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ২৫ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে ১৫ নম্বর।
সাধারণ বিজ্ঞান
অধ্যায়ভিত্তিক ৩৫-৪৫তম বিসিএসে আসা ছোট-বড় প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো, আলো থেকে ২৪টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ৯.৪৪; শব্দ থেকে ১৫টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ৫.৯১; চুম্বকত্ব থেকে ১১টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ৪.৩৩; অম্ল, ক্ষারক ও লবণ থেকে ১১টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ১২.৬; পানি থেকে ২২টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ৮.৬৬; আমাদের সম্পদ থেকে ৩০টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ১১.৮১; পলিমার থেকে ৯টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ৩.৫৫; বায়ুমণ্ডল থেকে ১৫টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ৫.৯১; খাদ্য ও পুষ্টি থেকে ৩৮টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ১৪.৯৬; জৈব প্রযুক্তি থেকে ২৮টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ১১.০২; রোগ ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে ৩০টি প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন আসার হার ১১.৮১ শতাংশ।
পরিসংখ্যানটি পরীক্ষার্থীর পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতির জন্য। খেয়াল করে দেখুন, অধ্যায়ভিত্তিক গুরুত্ব কিন্তু ওঠানামা করছে। তাই এ ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনায় থাকতে পারে—প্রথমেই বিজ্ঞান অংশের আগের বিজ্ঞান প্রশ্ন (অন্তত ৩৫-৪৫তম বিসিএস) পড়ে ফেলা। এগুলো থেকে ৭০ শতাংশের বেশি প্রশ্ন কমন পেতে পারেন। উত্তর পড়ার সময় খাতায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ছোট ছোট করে নোট করে রাখতে পারেন; যেমন আলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন বর্ণের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য, বিভিন্ন পলিমারের মনোমার ইত্যাদি।
বিজ্ঞানে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করা জরুরি। বুঝে পড়ার বিষয়গুলো না বুঝে মুখস্থ করলে পরীক্ষায় লিখে কখনোই ভালো নম্বর পাবেন না। তাই কনসেপ্ট ক্লিয়ার করার জন্য প্রথমে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়তে হবে। অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইও সঙ্গে রাখতে পারেন। বইয়ের সরল ভাষা ও ব্যবহৃত চিত্র আপনার কাছে বিষয় স্পষ্ট করবে।
বিজ্ঞানে স্বাস্থ্যগত সাম্প্রতিক বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রশ্ন আসে; যেমন ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময় দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল বলে তখন পরীক্ষায় ডেঙ্গু বিষয়ে প্রশ্ন এসেছিল। তাই সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য বিষয় থেকে থাকলে সে সম্পর্কে পত্রিকা পড়ে আপডেট তথ্য জেনে রাখুন। বিজ্ঞান বইয়ের চিত্রগুলো ভালোভাবে দেখে দেখে পড়বেন। চিত্রগুলো বুঝলে তা কনসেপ্টও ক্লিয়ার করে, আবার পরীক্ষার খাতা সাজাতেও সাহায্য করে। বিজ্ঞানে প্রশ্ন আসে অনেক বেশি। ৭.৫ নম্বরের প্রতি সেট প্রশ্ন উত্তর করার জন্য সময় পাবেন ১৩-১৩.৫ মিনিট। প্রতি সেটে প্রশ্ন ২-৪/৫টি থাকতে পারে। তাই বিজ্ঞানে সরাসরি উত্তর লিখবেন। কোনো ভূমিকাসূচক কিছু লিখতে যাবেন না। সংজ্ঞা দেবেন। নিচে উদাহরণ দেবেন। নম্বর বুঝে চিত্র বা ডায়াগ্রাম যোগ করতে পারেন।
বেশি লেখার চেয়ে উত্তরে যদি চিত্র/ডায়াগ্রাম/টেবিল/ফ্লো-চার্ট/ইনফোগ্রাফ দেওয়ার সুযোগ থাকে, তবে কম লিখে সেগুলো প্রয়োগের চেষ্টা করবেন। খাতার একঘেয়েমি দূর করে ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হবে। চিত্র সব সময় পেনসিলে আঁকবেন। নিচে চিত্রের ক্যাপশন অবশ্যই দেবেন। সেটা যেন পেনসিল বা নীল কালিতে হয়। চিত্র এঁকে উপযুক্তভাবে চিহ্নিত (লেবেলিং) করবেন। মনে রাখবেন, লেবেলিং সব সময় ডান পাশে হয়। এক সমান্তরালে লেবেলিং করলে খাতার সৌন্দর্য বাড়বে। সব হেডলাইন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যা বা সমাপ্তিসূচক চিহ্নের বেলায় নীল কালি ব্যবহার করলে ভালো হবে। কিছু তুলনামূলক সহজ অধ্যায়; যেমন আলো, শব্দ, পানি, চুম্বকত্ব, আমাদের সম্পদ, অম্ল, ক্ষারক ও লবণ—এ অধ্যায়গুলো দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
এই অংশে ২৫ নম্বর। সাধারণত ২.৫ নম্বর করে একক প্রশ্ন থাকে। আগে ১২ বা ১৩টি প্রশ্ন থেকে ১০টির উত্তর করা লাগত। কিন্তু সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএসে কোনো বিকল্প ছিল না। অর্থাৎ ১০টির মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর করতে হয়েছিল। এ অংশের অধ্যায়গুলো হলো কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাস ও প্রজন্ম, পার্সোনাল কম্পিউটারের কার্যাবলি, সিপিইউ ও মাইক্রোপ্রসেসর, বাস আর্কিটেকচার, মাদারবোর্ড, সফটওয়্যার, ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস, অনুবাদক, সফটওয়্যার উন্নয়ন, বায়োস, অফিস অটোমেশন ইত্যাদি। তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলো হলো ডেটাবেজ সফটওয়্যার, তথ্য, উপাত্ত ও প্রসেসিং, সিস্টেম বিশ্লেষণ, মাল্টিমিডিয়া, টপোলজি, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, ইন্টারনেট প্রটোকল, স্যাটেলাইট, ট্রান্সমিশন সিস্টেম, টেলিকমিউনিকেশন, স্মার্টফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, জনপ্রিয় ওয়েবসাইট, টেক জায়ান্ট ও বিবিধ।
প্রস্তুতির জন্য প্রথমে এ অংশের আগের বিসিএসের প্রশ্ন পড়ে নিন। ৮০ শতাংশের বেশি প্রশ্ন কমন পেতে পারেন। এ অংশের প্রায় সব সিলেবাসই প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো। আগের প্রশ্ন দেখে যেসব আলোচ্যসূচি থেকে প্রশ্ন আসে না, যেমন কম্পিউটারের ইতিহাস ও বিবর্তন বাদ দিতে পারেন। প্রশ্নে যা চেয়েছে তা–ই দেবেন। অতিরিক্ত লেখার সময় পাবেন না। উত্তরে ফ্লো-চার্ট বা ডায়াগ্রাম আঁকার চেষ্টা করবেন পেনসিল দিয়ে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের বই পড়ে প্রথমে কনসেপ্ট স্পষ্ট করবেন। এরপর সহায়ক বই পড়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং চর্চা করবেন। না বুঝে মুখস্থ করবেন না। পত্রিকার প্রযুক্তি পাতা পড়বেন নিয়মিত। কারণ, সমসাময়িক বিশ্বের প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডায়াগ্রাম বা ফ্লো–চার্ট ছোট ছোট করে নোট করে নেবেন, যাতে সহজে রিভিশন দেওয়া যায়।
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি
এখানে ১৫ নম্বর বরাদ্দ। এ অংশে ২.৫ নম্বর করে ৬টি অথবা ৫ নম্বর করে ৩টি প্রশ্ন থাকবে। কোনো বিকল্প প্রশ্ন থাকে না। উত্তর করার জন্য সময় পাবেন ২৭ মিনিট। এ অংশের মোটাদাগে দুটি অধ্যায়। ইলেকট্রিক্যাল প্রযুক্তিতে রয়েছে বৈদ্যুতিক বিভব, বর্তনী ও এর উপাদান, কার্শফের সূত্র, অহমের সূত্র, বৈদ্যুতিক ক্ষমতা ও শক্তি, তড়িৎ চুম্বক ও চৌম্বক ক্ষেত্র, শ্রেণি ও সমান্তরাল সংযোগ, ট্রান্সফরমার, মোটর, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে রয়েছে ওয়েভফর্ম, রোধক ও প্রকারভেদ, ইলেকট্রনিকস উপাদান, এমপ্লিফায়ার ও অসিলেটর, জটিল সংখ্যা (বাদ দিতে পারেন), আরএলসি সার্কিট, বিদ্যুৎ জেনারেশন ও ট্রান্সমিশন, অ্যানালগ ও ডিজিটাল সংকেত, ডিজিটাল ডিভাইস ও বর্তনী এবং বিবিধ।
সত্যি কথা হলো, কোনো বোর্ড বই থেকে এ অংশের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি আপনি নিতে পারবেন না। তাই প্রথমে ভালো দেখে একটি সহায়ক বই সংগ্রহ করুন, যা সহজ ভাষায় লেখা। কঠিন ভাষায় লেখা বই পরিহার করা আবশ্যক। অবশ্যই বুঝে বুঝে পড়বেন। এ অংশ মুখস্থ করে উত্তর করা সম্ভব নয়। পড়ার পর বারবার লিখে চর্চা করবেন। প্রয়োজনে কাগজে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সংক্ষেপে লিখে বা চিত্র এঁকে দেয়ালে টানিয়ে রাখতে পারেন বারবার চোখ বুলানোর জন্য। প্রশ্নে যা চাইবে, যতটুকু চাইবে, ঠিক ততটুকুই উত্তর করবেন। উত্তরে চিত্র ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। ইউটিউব বা গুগলে সার্চ করে শিক্ষামূলক অনেক ভিডিও এবং আর্টিকেল পাবেন। যাঁরা বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলেন না, তাঁরা কঠিন মনে করলে এ অংশের শুধু আগের বিসিএসের প্রশ্নগুলো চর্চা করবেন। নতুন কিছু পড়ার দরকার নেই।