৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু ২৩ জানুয়ারি। পছন্দের ক্যাডার পেতে ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার বিকল্প নেই। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও পরীক্ষার হলে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এস এম খালেদ চৌধুরী।
শেষ মুহূর্তে নতুন বিষয় পড়ার দরকার নেই। টুকটাক ডেটা, চার্ট, সংবিধান, ম্যাপ, কোটেশন দেখার চেষ্টা করবেন। আপনার প্রস্তুতি যা নেওয়ার ইতিমধ্যে নিয়ে নিয়েছেন। এখন এটা পড়া হয়নি, ওটা পড়া হয়নি—এসব ভেবে হাহুতাশ করার দরকার নেই। এখন সুস্থভাবে পরীক্ষাগুলো শেষ করার কথাই মাথায় রাখবেন।
অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখুন। পড়াশোনার পাশাপাশি শরীরের যত্নও নিন। কারণ, লিখিত পরীক্ষা কয়েক দিন ধরে চলে। পরীক্ষায় মধ্যে নিজে সুস্থ থাকাও জরুরি। দীর্ঘ সময় পরীক্ষা দিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় না। পরীক্ষার দিনগুলোতে ভালো ঘুম জরুরি। কারণ, ঘুম ভালো না হলে চার ঘণ্টা, তিন ঘণ্টার পরীক্ষাগুলোতে ক্লান্তি লাগতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে প্রয়োজনীয় কলম, পেনসিল, স্কেল ও প্রবেশপত্র গুছিয়ে রাখবেন। শীতের সময় হওয়ায় যাঁদের ঠান্ডার সমস্যা আছে, তাঁরা পর্যাপ্ত ঠান্ডার কাপড় নেবেন। আর প্রথম পরীক্ষার দিন একটু তাড়াতাড়ি বের হবেন, সিট খুঁজতে সময় লাগতে পারে, যানজটও থাকতে পারে।
বাংলা পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে দেখা যায় ব্যাকরণ অংশের ৩০–এ ভালো নম্বর পাওয়া যায়, তাই গুরুত্ব দিয়ে অল্প সময়ে এগুলো শেষ করবেন। এখানে সাহিত্যের ১০টি প্রশ্নে সময় বেশি লাগে। চেষ্টা করবেন সব প্রশ্ন সমান গুরুত্ব দিয়ে শেষ করতে। আর রচনার জন্য অন্তত এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখবেন, না হয় কনটেন্ট ঠিক রেখে শেষ করা কষ্টকর।
ইংরেজি ২০০ নম্বরেও ব্যাকরণে ৩০–এ সবচেয়ে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। তাই এখানে ভুল করা যাবে না। মন দিয়ে প্যাসেজ পড়ে নেবেন আগে। তবে প্যাসেজ পড়ার আগে ১০টি প্রশ্ন পড়ে নিলে প্যাসেজ পড়ার সময় মার্ক করে নিতে পারবেন। এতে সময় বেঁচে যাবে। আর অনুবাদে কাটাকাটি পরিহার করবেন। কোনো লাইনের অর্থ তুলতে না পারলে কাটাকাটি না করে ভাবানুবাদ করবেন।
বাংলার মতো ইংরেজি রচনার জন্যও এক ঘণ্টা রাখার চেষ্টা করবেন। ২০০ নম্বরের বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে সময় ম্যানেজ করা সবচেয়ে কঠিন। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রেখে উত্তর করতে হবে। এখানে ৫ নম্বরের প্রশ্নের জন্য ৬ মিনিট আর ১০ নম্বরের প্রশ্নের জন্য ১২ মিনিট পাবেন। এভাবে হিসাব করে সময় বণ্টন করতে পারেন। আর উত্তর করার সময় প্রশ্ন সিকুয়েন্স অনুসরণ করা ভালো। আন্তর্জাতিকের ১০০ নম্বরে একটু সময় বেশি পাবেন, তবে কনসেপচুয়াল পার্ট ও এমপিরিক্যাল অংশে সময় বণ্টন করে নেবেন নিজের সুবিধামতো। এখানে প্রাসঙ্গিক ম্যাপ, কোটেশন ও ডেটা ব্যাবহার করতে পারেন। বিজ্ঞানে ১০০–তেও ভালো পরীক্ষার অন্যতম নির্ণায়ক সময়। তিনটি অংশই সময় বণ্টন ঠিকঠাকমতো করে নিয়ে তারপর লিখবেন। এখানে প্রাসঙ্গিক গ্রাফ নম্বর বাড়াতে সহায়ক হয়। এ ছাড়া গণিতে যা পারেন, তা আগে করে ফেলবেন। কোনোভাবে পারা প্রশ্ন মেলাতে না পারলে বেশি চিন্তিত না হয়ে অন্যটা করবেন। আটকে গেলে পরের প্রশ্ন মেলাতে ঝামেলা হয়ে যায় বা সময় চলে যায়। আর মানসিক দক্ষতাতে যেহেতু এমসিকিউ, সেহেতু হিসাব করে দাগাবেন। কারণ, মাইনাস মার্কিংয়ের ঝামেলা আছে।
প্রতিটি পরীক্ষায় প্রশ্ন নম্বর খেয়াল করে উত্তর করবেন। কোনোভাবেই যেন প্রশ্নে ১–এর ‘ক’ বা ‘খ’ লিখতে ভুল না হয়। তথ্য দিলে, তথ্যের সোর্স উল্লেখ করবেন এবং কোটেশন ব্যবহারে সতর্ক থাকবেন। বিশেষ করে কোটেশন ভুল করা যাবে না এবং একজনের কোটেশন অন্যের নামে চালিয়ে দেওয়া বিপদ। কারণ, কোনোভাবে পরীক্ষক বুঝতে পারলে আপনার বাকি উত্তরগুলোতেও নাম্বারিংয়ে প্রভাব ফেলবে।
খাতায় কাটাকাটি যেন কম হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিচ্ছন্ন ও স্পষ্ট লেখা পরীক্ষকেরা পছন্দ করেন। আর কাটার প্রয়োজন হলে একটানে কেটে দেবেন। সঙ্গে এক্সট্রা খাতার ক্রমিক নম্বর ঠিক রেখে সেলাই করবেন, ওপরে বৃত্ত ভরাট করবেন। আর পরীক্ষার হলে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঠান্ডা মাথায় ভরাট করবেন। কোনোভাবে ভুল হয়ে গেলে অধৈর্য না হয়ে পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষককে জানাবেন।
পরীক্ষার মধ্যে কোনো পরীক্ষা কেমন হয়েছে, তা নিয়ে টেনশন করতে যাবেন না বা পরীক্ষা শেষে বাসায় এসে প্রশ্ন ব্যাখ্যা করতে বসে যাবেন না। সব পরীক্ষা শেষ করে প্রশ্ন নিয়ে বসবেন। কারণ, মাঝে কোনো পরীক্ষা আশানুরূপ না হলে পরের পরীক্ষায় প্রভাব পড়ে। মনে রাখবেন, বিসিএস লিখিত পরীক্ষা একটি ম্যারাথন। এখানে কোনোটি ভালো কোনোটি খারাপ হতেই পারে। তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা মাথায় আনবেন না। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সব পরীক্ষা শেষ করতে হবে।