৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। চলবে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নেবে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ পঞ্চম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মঈনুল হাসান।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন মঈনুল হাসান। ৪১তম বিসিএস প্রথম বিসিএস হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তিনি বলেন, এ কারণে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের আগেই ভাইভার প্রস্তুতি শুরু করি। আগের বিসিএসের ভাইভা অভিজ্ঞতা পড়ে বুঝতে পারি, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে ভাইভা বোর্ডে গেলে অসুবিধায় পড়তে হবে। তবে ভালো প্রস্তুতির পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী থাকা এবং যেকোনো প্রশ্নে গোছানো উত্তর দেওয়ার সক্ষমতা ভাইভায় ভালো করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভালো প্রস্তুতি ধীরে ধীরে আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। ভাইভার আগে যথাসম্ভব নিজেকে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি।
৪১তম বিসিএসে মঈনুল হাসানের প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, দ্বিতীয় পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার। পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম পছন্দ হওয়ায় তাঁকে বেশির ভাগ প্রশ্ন ইংরেজিতে করা হয়েছে। মোট ১০ থেকে ১২ মিনিট ভাইভা হয়েছিল তাঁর।
বর্তমানে বিশ্বরাজনীতিতে আলোচিত বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয় মঈনুল হাসানের কাছে। উত্তরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলেন তিনি। বলার মধ্যেই থামিয়ে দিয়ে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের আলোচিত রাজনৈতিক ইস্যুগুলো জিজ্ঞেস করা হয়। চীন নিয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোও জিজ্ঞেস করা হয়।
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি কী, তা জিজ্ঞেস করা হয়। এর উত্তরে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ আছে। এ ছাড়া আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সংসদে বলেছিলেন যে ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বিদ্বেষ নয়’, যা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির পথপ্রদর্শক।
মঈনুল হাসানকে জিজ্ঞেস করা হয়, আন্তর্জাতিক আদালতে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্র অঞ্চলের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো মন্ত্রণালয় কাজ করেছে? তিনি উত্তর দেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট এবং আইন মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কাজ করছে। একটি প্রশ্নের উত্তরে ‘মার্কিন’ শব্দ বলেছিলেন মঈনুল হাসান। এই বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে মার্কিন কেন বলা হয়? তিনি উত্তর দেন, আমি গুগলে সার্চ করে বিষয়টি দেখেছি। আমার যতটুকু মনে পড়ছে, এটি বলার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ নেই। ‘আমেরিকা’ শব্দটি থেকে উচ্চারণগতভাবে পরিবর্তন হয়ে এটি ‘মার্কিন’ হয়েছে।
মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড থেকে বের হয়ে মিশ্র অনুভূতি কাজ করছিল মঈনুল হাসানের। তিনি বলেন, একদিকে মনে হচ্ছিল প্রশ্নগুলোর উত্তর ভালো দিয়েছি। প্রেজেন্টেশন ও স্পিকিং খারাপ হয়নি। কিন্তু আবার মনে হচ্ছিল, এত অল্প সময় রাখলেন নিশ্চয়ই ভালো হয়নি। মনে হচ্ছিল যেহেতু বেশি সময় ভাইভা বোর্ডে রাখেনি, তাই চান্স অনেক কম। আমিও অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, কারণ আমার আগে সাতজনকে কমপক্ষে ২০ মিনিট করে ভাইভা বোর্ডে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তবে সিনিয়ররা বলেছিলেন, সময় কোনো ব্যাপার নয়। দিন শেষে অসাধারণ এক অনুভূতি। ভাইভা বোর্ডে প্রস্তুতি থেকে প্রশ্ন কমন পড়বে না, এটা মাথায় রেখেই আমি ভাইভা বোর্ডে যাই। কিন্তু কোনো ঘটনা বা প্রশ্নের বিষয়ে আমি একদমই অজ্ঞ, এটি যাতে না হয়, সে বিষয়ে সচেতন ছিলাম।