খাদ্য অধিদপ্তরে ১৩৭৭ পদের প্রস্তুতির জন্য যা করণীয়

খাদ্য অধিদপ্তর ১ হাজার ৩৭৭ পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আবেদন করা যাবে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন

আবেদন করে ঘরে বসে না থেকে চাকরির জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে
ছবি: প্রথম আলো

আবেদন

১৩ থেকে ১৯তম গ্রেডভুক্ত এসব পদের বিজ্ঞপ্তিতে একটির বেশি আবেদন করা যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা নেই। তাই কেউ চাইলে একাধিক পদে আবেদন করতে পারবেন। তবে প্রথমে আপনার পছন্দের পদে আবেদন করার পর অন্য পদে আবেদন করবেন। এ ক্ষেত্রে একই দিনে একাধিক পদের পরীক্ষা হওয়ার ঝুঁকি আপনাকে নিতে হবে। খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ নিয়োগ পরীক্ষাটি জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও এমনটাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শূন্য পদ খালি থাকা সাপেক্ষে পদায়ন নিজ জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে হতে পারে। পদ খালি না থাকলে দেশের যেকোনো জায়গায় পদায়ন হবে।

 

প্রস্তুতির জন্য করণীয়

খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষাগুলো অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে থাকে। এতে কয়েক লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন। ১৩তম গ্রেড থেকে ১৯তম গ্রেডের যেকোনো চাকরির পরীক্ষায় বেশির ভাগ প্রশ্নই আগের প্রশ্ন থেকে হয়ে থাকে। তাই জব সলিউশন পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বিসিএস প্রিলিমিনারি, নিবন্ধন, প্রাইমারি, পিএসসির অন্যান্য নিয়োগ এবং সাম্প্রতিক জব সলিউশন ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। এ ছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের আগের বছরের বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে পড়ুন। আগের বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোনো কোনো টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি হয়ে থাকে।

যেহেতু খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা, তাই খাদ্যসংশ্লিষ্ট সব তথ্য আয়ত্তে থাকা উচিত। খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্য উৎপাদনে শীর্ষ জেলা ও বিশ্বে অবস্থান, উন্নত জাতের বিভিন্ন বীজ, বিশ্বের প্রধান প্রধান খাদ্য উৎপাদক দেশ, খাদ্য ও পুষ্টি এবং বাংলাদেশের বন্দর সম্পর্কে জানবেন।

গণিত বিষয়ের প্রস্তুতি

গণিত অংশ নিজে নিজে সময় ধরে চর্চা করুন। গণিতের শর্ট টেকনিক ভালোভাবে রপ্ত করা উচিত। শর্ট টেকনিক না জানলে পরীক্ষার হলে অল্প সময়ে গণিতের সমাধান করা কঠিন হতে পারে। গণিতে

ভালো করার জন্য প্রতিদিন কিছু সময় গণিত চর্চা করা অপরিহার্য। যাঁরা গণিতে পারদর্শী, তাঁরা এ ধরনের পরীক্ষাগুলোয় এগিয়ে থাকে। সুদাসল, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, ঐকিক নিয়ম, গড়, সংখ্যা, ক্ষেত্রফল পরিমাপ, মান নির্ণয়, উৎপাদক, লসাগু-গসাগু, ভগ্নাংশ ও অনুপাত-সমানুপাত খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া জ্যামিতির মৌলিক ধারণাগুলো জেনে নিতে হবে।

ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি

ইংরেজির ভীতি দূর করার জন্য উচ্চমাধ্যমিক ইংরেজি গ্রামার বই অনুসরণ করতে পারেন। নিয়মিত ভোকাবুলারি পড়ার বিকল্প নেই। ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে পারলে আপনার মৌলিক ইংরেজি দক্ষতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি

বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই এবং বাগ্‌ধারা, বাক্য সংকোচন, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ পড়তে হবে। ধ্বনি ও বর্ণ, সন্ধি, সমাস, কারক-বিভক্তি, ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান, উপসর্গ, প্রকৃতি প্রত্যয়, বিভিন্ন সাহিত্যিকদের উপাধি, ছদ্মনাম, পত্রিকার সম্পাদক ও সাল এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য সম্পর্কে জানা খুব জরুরি।

 

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের প্রস্তুতি

সাধারণ জ্ঞানে সাম্প্রতিক প্রশ্ন খুবই কম আসে। মৌলিক সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন বেশি হয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি, সংবিধান, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, ছয় দফা, গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবেন। খেলাধুলা, পুরস্কার, শিল্প-বাণিজ্য, প্রাচীন সভ্যতা, ভৌগোলিক উপনাম এবং অন্য মৌলিক বিষয়গুলো পড়বেন।

কম্পিউটার দক্ষতা যাচাই

কয়েকটি পদের জন্য কম্পিউটার ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমান সময়ে প্রায়ই ব্যবহারিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার কারণে এ ধরনের পদগুলোয় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া যায় না। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং মাইক্রোসফট এক্সেলের নিয়মিত চর্চা আপনাকে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য করে তুলবে। বাংলা ও ইংরেজি টাইপে কাঙ্ক্ষিত গতি আনার জন্য নিয়মিত চর্চার গুরুত্ব অনেক।

দায়িত্ব ও কর্তব্য

খাদ্য অধিদপ্তরের দুটি আকর্ষণীয় পদ হলো উপখাদ্য পরিদর্শক এবং সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক। একজন উপখাদ্য পরিদর্শক সাধারণত যে এলাকায় কর্মরত থাকেন, সেখানকার খাদ্যদ্রব্যে কোনো ভেজাল আছে কি না, কী পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে, সেই এলাকায় কী ধরনের খাবার প্রবেশ করছে, জিনিসপত্র এবং মালামালের মূল্যে কোনো ত্রুটি আছে কি না ইত্যাদি দেখাশোনা করেন। মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচলিত খাবারের গুণগত মান নির্ধারণ করা  ও পণ্যের গায়ে লিখিত মূল্য যাচাই করা দায়িত্বের অংশ। সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক এই দায়িত্বগুলো পালনে উপখাদ্য পরিদর্শককে সহায়তা করে থাকেন।

সুযোগ-সুবিধা

একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, সেসব এখানেও পাওয়া যাবে। তবে একজন উপখাদ্য পরিদর্শক বা সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। ম্যাজিস্ট্রেট না হয়েও মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন-চারজন মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী দলের সদস্য হতে পারবেন। এই পদগুলোর কিছু পোস্টিং বন্দরগুলোয় হয়ে থাকে, যেখানে আমদানি-রপ্তানি করা বিভিন্ন দ্রব্যের ভেজাল নির্ণয় এবং গুণগত মান পরীক্ষা করতে হবে।