বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদে প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন গত বছর প্রথম স্থান অধিকারী মো. মাজহারুল হাসান নাহিদ
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ায় এই পদে চাকরিপ্রার্থীদের আগ্রহ এখন বেশি। এ পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থেকে শুরু করে যোগদান পর্যন্ত সব কার্যক্রম মাত্র এক মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। গত নভেম্বরে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের এখন ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ, পরীক্ষার সূচি প্রকাশ হলে খুব কম সময়ের মধ্যে সব পরীক্ষা হবে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদে প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন গত বছর প্রথম স্থান অধিকারী মো. মাজহারুল হাসান নাহিদ।
সহকারী পরিচালক পদের চাকরি পেতে প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক—তিনটি ধাপ পাস করতে হবে। প্রতিটি ধাপেই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম। প্রস্তুতির তিন পর্বের পরামর্শের মধ্যে আজ প্রথম পর্বে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রিলিমিনারিতে মোট ৮০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এ জন্য নির্ধারিত সময় ৬০ মিনিট। পরীক্ষায় সাধারণত কোনো নেগেটিভ নম্বর থাকে না। তবে সব সময় যে নেগেটিভ নম্বর থাকবে না, বিষয়টি এমন নয়। তাই পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষার আগে ভালোভাবে পরীক্ষার নির্দেশনা পড়তে হবে। প্রিলিমিনারিতে সাতটি অংশ থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে; এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত প্রশ্ন। কোন বিষয়ে কত নম্বরের প্রশ্ন হয়, সেগুলোতে মাঝেমধ্যে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়।
বাংলা
সাধারণত ৮-১০টি প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাংলা সাহিত্য থেকে ১-২টি প্রশ্ন করা হয়। বাকি প্রশ্নগুলো বাংলা ব্যাকরণ থেকে করা হয়ে থাকে। বাংলা ব্যাকরণের মধ্যে এককথায় প্রকাশ, সমাস, উপসর্গ,বাক্য, শব্দার্থ, পরিভাষা—এসব বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া প্রয়োগ-অপ্রয়োগ, বাক্য শুদ্ধি, প্রত্যয়—এগুলোও পড়তে হবে। বাংলা সাহিত্য অংশ থেকে বিখ্যাত সাহিত্যিক যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও শামসুর রাহমান প্রমুখ সাহিত্যিক নিয়ে পড়তে হবে।
ইংরেজি
১০-১২টি প্রশ্ন হয়। এর মধ্যে একটি বা দুটি প্রশ্ন হয় ইংরেজি সাহিত্য থেকে এবং বাকি প্রশ্নগুলো ইংরেজি ব্যাকরণ থেকে হয়ে থাকে। ইংরেজি ব্যাকরণের মধ্যে টেন্স, ভোকাবুলারি, রাইট ফর্মস অব ভার্ব, পার্টস অব স্পিচ, ফ্রেজ, অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রিপজিশন ইত্যাদি অংশ থেকে প্রশ্ন হয়। আর সাহিত্য অংশ থেকে শেক্সপিয়ার ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা-সম্পর্কিত ইংরেজি সাহিত্য থেকে এক-দুটি প্রশ্ন হয়ে থাকে।
গণিত
গণিত অংশে সাধারণত ১২-১৪টি প্রশ্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। গণিত অংশের প্রশ্নগুলোর মধ্যে পাটিগণিত থেকেই অধিকাংশ প্রশ্ন হয়। বীজগণিত, পরিমিতি থেকে দু-তিনটি প্রশ্ন হয়ে থাকে। পাটিগণিতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয় ধারা, লাভ-ক্ষতি, সরল-যৌগিক মুনাফা, লসাগু, গসাগু ইত্যাদি। বীজগণিত থেকে মান নির্ণয়, সূত্র ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হয়। আর পরিমিতি অংশ থেকে এক-দুটি প্রশ্ন হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে। এ অংশে ১৮-২০টি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এসব প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয় বাংলার ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান এবং সাম্প্রতিক বিষয়াবলি থেকে। পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই জুলাই বিপ্লব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে বিস্তারিত, সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করে পরীক্ষার হলে যেতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্য, সরকারব্যবস্থা ও অর্থনীতি অংশও পড়তে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ৮-১০টি প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ অংশে আন্তর্জাতিক দিবস, এসডিজি, আন্তর্জাতিক আন্দোলন, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, পরিবেশগত ইস্যু ইত্যাদি বিষয় থেকেই প্রশ্ন হয়ে থাকে।
বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত প্রশ্ন
যেহেতু বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পরীক্ষা, সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত প্রশ্ন প্রতিবারই ১২-১৫টি পরীক্ষায় এসেছে। এ অংশে বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের সফলতা, এসডিজি, বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কার্যক্রম, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন বিতরণ সংস্থাসমূহ, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সেক্টরের ক্ষমতা—এসব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি
কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি থেকে ৬-৭ নম্বরের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে। অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, ইন্টারনেট ও প্রোগ্রামিং অংশ বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
বিজ্ঞান
প্রতিবছর বিজ্ঞান থেকে ৩-৪টি প্রশ্ন করা হয়। সাধারণত পদার্থ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের একদম বেসিক বিষয়গুলো ভালোভাবে জানলে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া যায়।