বেসরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে যাঁরা নিতে চান, তাঁদের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে হয়। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তিন ধাপে এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ২০২০–এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ ডিসেম্বর স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা এবং ৩১ ডিসেম্বর কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রিলিমিনারিতে শতকরা ৪০ নম্বর পেলেই পরবর্তী ধাপের জন্য উত্তীর্ণ ধরা হয়। প্রিলিতে উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং লিখিত পরীক্ষায় নম্বরের ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও সহকারী মৌলভি, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রধান, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসার প্রদর্শক ও শরীরচর্চা শিক্ষক, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক ও সাধারণ বিষয় (ভাষা) পদে নিবন্ধনে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জন্য স্কুল পর্যায় প্রযোজ্য। তাঁদের বিষয় কোড ৩০০। পরীক্ষার সময় কোড নম্বর মনে রাখতে হবে।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভি, জুনিয়র শিক্ষক, মাধ্যমিক কারিগরি/দাখিল কারিগরি/ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর পদে নিবন্ধনে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জন্য স্কুল পর্যায়-২ প্রযোজ্য। তাঁদের বিষয় কোড নম্বর ২০০। পরীক্ষার সময় এই কোডটি দরকার হয়।
উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট ও কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক/ইনস্ট্রাক্টর (টেক) পদে নিবন্ধনে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জন্য। তাঁদের বিষয় কোড নম্বর ৪০০।
প্রার্থীদের এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার সময় থাকবে এক ঘণ্টা। বিষয় থাকবে মোট চারটি। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। প্রতিটি বিষয়ে ২৫টি করে মোট ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কাটা হবে।
স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ ও কলেজ পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে প্রায় একই সিলেবাস। ভাষারীতি ও বিরামচিহ্নের ব্যবহার, বাগ্ধারা ও বাগ্বিধি, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, যথার্থ অনুবাদ, সন্ধিবিচ্ছেদ, কারক–বিভক্তি, সমাস ও প্রত্যয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন ও লিঙ্গ পরিবর্তন পড়তে হবে। কলেজ পর্যায়ের জন্য প্রায়োগিক প্রয়োজনীয়তায় বিরামচিহ্ন, বাগ্ধারা, সন্ধি, কারক, সমাস, কারক–বিভক্তি ও প্রত্যয় অনুশীলন করতে হবে। প্রস্তুতির জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটি অনুশীলন করলেই যথেষ্ট।
ইংরেজি অংশে স্কুল পর্যায় এবং স্কুল পর্যায়-২–এর সিলেবাস একই রকম। এই অংশে গ্রামারের গুরুত্ব বেশি। গ্রামার থেকেই স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই প্রশ্ন আসে। বাক্য সম্পূর্ণ করা, বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ, পার্টস অব স্পিচ, রাইট ফর্ম অব ভার্ব, উপযুক্ত শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ, প্রতিশব্দ ও বিপরীত শব্দ, ভার্ব ও আর্টিকেলের ব্যবহার এবং কম্পোজিশন পড়তে হবে। সহায়ক বই হিসেবে ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি গ্রামার বোর্ড বই এবং যেকোনো লেখকের গ্রামার বই অনুশীলন করা যেতে পারে।
স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ এবং কলেজ পর্যায়ে গণিত বিষয়ে তিনটি অংশ থাকে। পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি।
পাটিগণিতে গড়, লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি ও অনুপাত-সমানুপাত থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতে উৎপাদক, বর্গ ও ঘনসংবলিত সূত্রাবলি ও প্রয়োগ, গসাগু, বাস্তব সমস্যা সমাধানে বীজগাণিতিক সূত্র প্রয়োগ, সূচক ও লগারিদমের সূত্র ও প্রয়োগ থেকে প্রশ্ন আসে।
জ্যামিতি অংশে রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা, নিয়ম ও প্রয়োগ থেকে প্রশ্ন আসে। কলেজ পর্যায়ের জন্য পরিমিতি ও ত্রিকোণমিতি সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা, নিয়ম ও প্রয়োগ একটু পড়তে হবে। এর প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ৭ম-৯ম শ্রেণির গণিত বই অনুশীলন করলে গণিতে ভীতি থাকবে না।
স্কুল পর্যায়, স্কুল পর্যায়-২ এবং কলেজ পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে প্রায় একই সিলেবাস। সাধারণ জ্ঞান তিনটি ভাগে বিভক্ত। বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়, আন্তর্জাতিক বিষয় ও চলতি ঘটনাবলি এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও রোগব্যাধি সম্পর্কিত মৌলিক জ্ঞান।
বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়ের জন্য বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সভ্যতা, সংস্কৃতি, বাংলাদেশের অর্থনীতি, যোগাযোগব্যবস্থা, বাংলাদেশের সমাজজীবন, সমস্যা, জনমিতিক পরিচয়, রাষ্ট্র, নাগরিকতা, সরকার ও রাজনীতি, সরকারি ও বেসরকারি লক্ষ্য, নীতি, পরিকল্পনা, কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মানবসম্পদ, উন্নয়ন, বিশ্ব ভৌগোলিক পরিচিতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ, নবায়নযোগ্য শক্তি, জাতিসংঘ, আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সংগঠন, পুরস্কার ও সম্মাননা পড়তে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আনুষঙ্গিক বিষয়াবলি, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান, সাধারণ রোগব্যাধি ও পরিবেশবিজ্ঞান–সংশ্লিষ্ট বিষয় পড়তে হবে। প্রস্তুতি বই হিসেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বইগুলো পড়তে হবে।
প্রিলিমিনারিতে পাস করতে ৯ম থেকে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার অনুশীলন করতে হবে। কারণ, আগের প্রশ্ন থেকে প্রশ্ন আসে। বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্নপত্র (৩৪-৪৪) অনুশীলন করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। যেহেতু প্রশ্নপত্রে ১০০টি প্রশ্ন থাকবে, তাই নিজের পছন্দের বিষয়গুলো আগে উত্তর দিতে হবে।