আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা, বাইদুর রবিন লি, শাওমির লিই জুন, আবাসন ব্যবসায়ী ইয়াং হুইয়ান এবং জেডি ডটকমের কিয়াংডং। এঁরা সবাই চীনের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী। কিন্তু পরিচিত বিশ্বেও। এঁরা সবাই পড়াশোনার পরই আবার কেউ কেউ পড়াশোনার মাঝেই নতুন নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করেন। কেউ কেউ পারিবারিকভাবে কিছু পেলেও নিজেই গড়েছেন নিজের ভবিষ্যৎ।
‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ চীনের কয়েকজন কোটিপতি কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন, তাঁরা কোন বিষয়ে শিক্ষা অর্জন কীভাবে করেছেন, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদনে ছাপিয়েছে, তা-ই জানব আজ।
বিশ্বের অন্য দেশের চেয়ে ধনকুবেরদের ক্লাবে দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে চীনাদের। চায়না ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ‘বিলিয়নিয়ার র্যাঙ্কিং’য়ের তালিকা দেখলে বোঝা যায় ধনকুবেরদের সংখ্যায় দেশটি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে।
উদীয়মান চীনে দ্রুতগতিতে বাজার অর্থনীতির প্রসারের ফলে রেকর্ডসংখ্যক ধনী ব্যক্তি ছড়িয়ে পড়েছেন বিশ্বে। বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে চীনে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। চীনের অনেক মা-বাবা বাচ্চাদের চায়না ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ‘বিলিয়নিয়ার র্যাঙ্কিং’য়ে ওঠানামাগুলো পড়ে শোনান। তাঁদের ধারণা, এতে শিশুরা বিলিয়নিয়ারদের জীবন থেকে শিক্ষা নেবেন। মা-বাবার লক্ষ্য, সন্তানেরা সফল ওই ব্যক্তিদের সফলতার গল্পগুলো জেনে নিজের জীবনকে সাজিয়ে নেবে নিজের মতো করে।
চীনের দুই মা-র মধ্যে মাঝেমধ্যে নানা বিষয়ে তুলনা করা হয়। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা বিষয়ে দুজনই সফল। তবে ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে দুজনই আলাদা। জ্যাক মা একটু বহির্মুখী আর মা হুয়াটেং লো প্রোফাইল বজায় রেখে চলা ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কম্পিউটার বিজ্ঞানের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
চীনের ধনকুবেরদের নাম নিতে গেলে জ্যাক মার নাম নিতেই হবে অন্য সবার আগে। বিশ্বের অন্যতম পরিচিত এই ব্যক্তি আলিবাবা গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বের অন্যতম সেরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার মালিক জ্যাক মা ছিলেন স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক।
ঝিজিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাঙঝুর হাঙঝু টিচার্স কলেজে (বর্তমান নাম হাঙজু নর্মাল ইউনিভার্সিটি) শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। পরে হাঙজু নর্মাল ইউনিভার্সিটি থেকে জ্যাক মা ১৯৮৮ সালে ইংরেজি থেকে স্নাতক করেছেন।
২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারের মা জানান, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে তিনি আবেদন করেও ভর্তির সুযোগ পাননি। একবার-দুবার নয়, পরপর ১০ বার আবেদন করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন।
বাইদু চীনের একটি সার্চইঞ্জিন। এটি বিশ্বে জনপ্রিয়ও বটে। বাইদুর সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরিন লি। চীনের মর্যাদাপূর্ণ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
১৯৯১ সালে লি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডক্টরেট করেন। পরে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। আবার পিএইচডি শুরু করেন। কিন্তু তিন বছর পর সেই ডিগ্রি আর শেষ করেননি। এর পরের পথচলা বাইদু নিয়েই।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্মার্টফোন এবং লাইফস্টাইল পণ্যের ব্র্যান্ড শাওমি। এর অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লেই জুন। যেকোনো ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে, আপনি সম্ভবত লেই জুনের করপোরেশন থেকে কোনো না কোনো সময় কোনো পণ্য ব্যবহার করেছেন। সেটা হয়তো ফোন বা জীবনযাপন সম্পর্কিত যেকোনো পণ্য।
সিচুয়ান প্রদেশের মিয়ানিয়াং মিডল স্কুল থেকে স্নাতক শেষে একই বছর উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন লেই জুন। দুই বছরের সব ক্রেডিট পাস করে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর পড়াশোনার শেষ বছরে নিজের প্রথম কোম্পানি খুলেছিলেন, নাম গুন্ডুগমস।
মা হুয়াটেং, বিশ্বে পরিচিত ‘পনি মা’ নামেও। মা হুয়াটেং চীনের ইন্টারনেট জায়ান্ট টেনসেন্ট হোল্ডিংসের প্রধান। চীনে ব্যবসা ও আয়ের ক্ষেত্রে টেনসেন্টের অবস্থান শীর্ষে। ফোর্বসের মতে, এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তিনিই চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর সম্পদের মোট পরিমাণ ৪৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মা হুয়াটেং ১৯৯৩ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক করেছেন শেনজেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
চীনের দুই মা-র মধ্যে মাঝেমধ্যে নানা বিষয়ে তুলনা করা হয়। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা বিষয়ে দুজনই সফল। তবে ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে দুজনই আলাদা। জ্যাক মা একটু বহির্মুখী আর মা হুয়াটেং লো প্রোফাইল বজায় রেখে চলা ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কম্পিউটার বিজ্ঞানের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
লেনোভো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ৭৫ বছর বয়সী লিউ চুয়ানঝি। বয়সের কারণে সম্প্রতি অবসরের যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এখন থেকে কোম্পানির সাম্মানিক চেয়ারম্যান, সিনিয়র উপদেষ্টা এবং পরিচালনা পর্ষদের কৌশল কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করে যাবেন। লিজেন্ড হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান চুয়ানঝি।
১৯৬২ সালে চুয়ানঝি পিপলস লিবারেশন আর্মি ইনস্টিটিউট অব টেলিকমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। এটি বর্তমানে জিডিয়ান ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত। জিডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব জিয়ানের অধীনে একটি ইনস্টিটিউট। এটি চীনের পাবলিক রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সায়েন্স প্রোগ্রামটি ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের (২০২০) করা তালিকায় জাতীয়ভাবে অষ্টম এবং বিশ্বব্যাপী ২২তম স্থানে আছে।
চীনের ইন্টারনেটের উদ্যোক্তা লিউ কিয়াংডং। তাঁকে চীনের ‘জেফ বেজোস’ বলা হয়। চীনের ই-কমার্স সংস্থা জেডি ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হলেন লিউ কিয়াংডং। রাজনীতির প্রতি বিশেষ আগ্রহ আছে তাঁর। পড়াশোনা করেছেন সমাজবিজ্ঞানে চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সমাজবিজ্ঞানে ভর্তি হলেও ভালো ক্যারিয়ারের সুযোগকে এবং সুরক্ষিত ভবিষ্যতের আশায় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখতে বেশি সময় ব্যয় করতেন। ১৯৯৬ সালে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখানে ক্ষান্ত দেননি পড়াশোনায়, আবার পড়তে শুরু করেন, বিষয় বিবিএ। চায়না ইউরোপ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে এক্সিকিউটিভ মাস্টার করেন।
ফোর্বসের মতে, এশিয়ার সবচেয়ে ধনকুবের নারী হলেন ইয়াং হুইয়ান (এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত)। ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট সম্পদের পরিমাণ ২০ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইয়াং চীনের ধনকুবেরদের তালিকায় পঞ্চম ধনী। তিনি মার্কিন ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৩ সালে সেখান থেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। চীনের আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গার্ডেন হোল্ডিংয়ের মালিক তাঁর বাবা ইয়েং কোক কেউং।
এই আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বড় অংশ, অর্থাৎ কোম্পানির ৫৭ শতাংশের মালিকানা ইয়াংয়ের। তিনি এই আবাসন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে গেছেন চীনের অন্যতম আবাসন প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এর পাশাপাশি নিজেই গড়ে তুলেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাইট স্কলার এডুকেশন হোল্ডিংস। এটির প্রধান ইয়াং। তাঁর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি।