২৭ বছর আগে বাড়ির গ্যারেজে আমাজন চালু করা জেফ বেজোস গতকাল সোমবার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ ছেড়ে দেন। পদত্যাগের জন্য দিনটি বেছে নেওয়ার পেছনে আবেগের কথা বলেছেন বেজোস। তাঁর জায়গায় আমাজনের নতুন সিইও প্রতিষ্ঠানটির ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ আমাজন ওয়েব সার্ভিসেসের প্রধান অ্যান্ডি জ্যাসি। জেনে নেওয়া যাক অ্যান্ডি জ্যাসির আমাজনে চাকরি পাওয়া থেকে বিস্তারিত।
জেফ বেজোস এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমাজনের কর্মীদের একটি চিঠিতে বলেছিলেন, তিনি আমাজন বোর্ডের এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসবেন। এর পাশাপাশি বেজোস নতুন প্রোডাক্ট ও প্রাথমিক উদ্যোগের ওপর মনোনিবেশ চালিয়ে যাবেন। আর জ্যাসি আমাজনের সব দেখাশোনা করবেন। বেজোসের এ বিশ্বাস ও গুরুদায়িত্ব অর্পণ করার কারণ ও আগ্রহের জন্য অনেকের জিজ্ঞাসা, কে এই জ্যাসি। বিশ্বের অন্যতম ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসার নতুন সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা।
আমাজনের কনজিউমার চিফ জেফ উইলকের অবসরের কথা ঘোষণা করার পরেই ধরে নেওয়া হয়েছিল জ্যাসিই হচ্ছেন পরবর্তী সিইও। উইলকে ছিলেন আমাজনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
জ্যাসি মনে করেন, জীবনে সফল হওয়ার চাবিকাঠি উদ্ভাবন। জ্যাসি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য পেতে হলে পুনর্বিন্যাস একান্ত প্রয়োজন। তাঁর মতে, এ জন্য প্রথমে সত্যের কাছাকাছি পৌঁছোনোর তাগিদ থাকতে হবে। আর এ সত্যটা কী, তা জানার জন্য থাকতে হবে দৃঢ় আর করতে হবে নিরলস পরিশ্রম।
অ্যান্ডি জ্যাসি ১৯৯৭ সালে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে আমাজনে তাঁর চাকরিজীবন শুরু করেন। তিনি কর্মজীবনের শুরুতে এমবিআই নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৯ সালে যাত্রা শুরু করে।
জ্যাসির জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৩ জানুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের স্কার্সডেল শহরে বেড়ে উঠেছেন। শৈশবে সেখানেই এক স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৯০ সালে স্নাতক করেন। সেখানে পড়াশোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রিকা ‘দ্য হার্ভার্ড ক্রিমসন’-এর বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করে তিনি আমাজনে চাকরি পান। ২০-এর দশকের শুরুতে জ্যাসি বেজোসের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। প্রযুক্তি দুনিয়ায় আমাজনকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাঁর অবদানও কম নয়।
অ্যান্ডি জ্যাসি আমাজন ওয়েব সার্ভিসের (Amazon Web Services বা AWS) প্রতিষ্ঠাতা। এ হিসেবে তাঁর পরিচিতি অনেক। তিনি ৫৭ জনের একটি দল নিয়ে এডব্লিউএস সেবাটি শুরু করেছিলেন। ১৩ বছর পর তিনি এর সিইও পদে উন্নীত হন। জ্যাসির নতুন সিইও হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এডব্লিউএসে তাঁর অসামান্য সাফল্য, যা আমাজনকে কেবল একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং সংস্থায় রূপান্তরিত করেছিল।
২০০৬ সালে সেবা দেওয়া শুরু করে এডব্লিউএস। প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ছোট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং সফটওয়্যার নির্মাতাদের ক্লাউড ডেটা স্টোরেজ এবং ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা দেওয়া। এরপর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও দেখল নিজস্ব সার্ভারে বিনিয়োগের চেয়ে আমাজনের সেবা নেওয়া সাশ্রয়ী। এরপর সম্ভাবনাময় খাত বুঝতে পেড়ে মাইক্রোসফট ও গুগল যখন ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগে বিনিয়োগ শুরু করে, জ্যাসি তত দিনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাড়িয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছেন।
৫৩ বছর বয়সী অ্যান্ডি জ্যাসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটেলের বাসিন্দা। বিয়ে করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার এলানা রোশেল ক্যাপলানকে। এই দম্পতির আছে দুই সন্তান। জ্যাসি পছন্দ করেন খেলাধুলা। তিনি নিউ সিয়াটেল ন্যাশনাল হকি লিগ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রাকেনের পার্টনার।
জ্যাসি মনে করেন, জীবনে সফল হওয়ার চাবিকাঠি হলো উদ্ভাবন। গত ডিসেম্বরে কোম্পানির ফোরামে জ্যাসি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য পেতে হলে পুনর্বিন্যাস একান্ত প্রয়োজন। তাঁর মতে, এ জন্য প্রথমে সত্যের কাছাকাছি পৌঁছোনোর তাগিদ থাকতে হবে। আর এ সত্যটা কী, তা জানার জন্য থাকতে হবে দৃঢ় আর করতে হবে নিরলস পরিশ্রম।
আমাজনে জ্যাসির ৩০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি শেয়ার রয়েছে। তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও গ্যাজেটস নাউ