৫২ বছরে প্রথমবারের মতো কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন নিউইয়র্ক টাইমসের কর্মীরা

১৯৭০ সালের পর নিউইয়র্ক টাইমস এবারই প্রথম বড় আকারের কর্মবিরতির মুখোমুখি হচ্ছে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বেতন বাড়ানোসহ নানা সুযোগ-সুবিধার দাবিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের কর্মীরা ২৪ ঘণ্টার ওয়াকআউট কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার এই ওয়াকআউট কর্মসূচি পালন করা হবে। ১৯৭০ সালের পর নিউইয়র্ক টাইমস এবারই প্রথম বড় আকারের কর্মবিরতির মুখোমুখি হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির বরাত দিয়ে আজ বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের এমন সিদ্ধান্ত খুবই হতাশাজনক। তবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পাঠকদের জন্য পত্রিকা প্রকাশ করতে প্রস্তুত আছে নিউইয়র্ক টাইমস।

জীবনযাত্রার ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক অসন্তোষ বেড়ে চলছে। ঠিক এমন সময় নিউইয়র্ক টাইমসের ইউনিয়নভুক্ত কর্মীরা এই কর্মবিরতির ঘোষণা দিলেন।

ইউনিয়নের সদস্যরা বলছেন, গণমাধ্যম ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান তাঁদের দাবি পূরণ করতে সক্ষম।

নিউইয়র্ক টাইমসের ক্রীড়া প্রতিবেদক কেভিন ড্রাপার বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবান যে যেসব গণমাধ্যমের ব্যবসা লাভজনক, সেসব গণমাধ্যমের একটিতে কাজ করছি। প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য যে প্রস্তাব করেছে, তা গতবার যা পেয়েছি, তার চেয়ে একটু ভালো।’

নিউইয়র্ক নিউজ গিল্ডের প্রতিনিধিত্বকারী ইউনিয়নের ১ হাজার ১০০’র বেশি সদস্য স্থানীয় সময় আজ ২৪ ঘণ্টা ওয়াকআউট কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক এও স্কটের নামও আছে।

গত বছর আমার বাসাভাড়া বেড়েছে ৮ শতাংশ। তাহলে প্রতিষ্ঠান আমার জন্য ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেতন বাড়ালে কী লাভ হবে।
আন্দ্রেয়া জাগাতা, নিউইয়র্ক টাইমসের সিনিয়র স্টাফ এডিটর

গত বছরের শেষের দিকে নিউইয়র্ক টাইমস দুই হাজারের বেশি সাংবাদিকসহ প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।

কেভিন ড্রাপার বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের আন্তর্জাতিক কর্মীরা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নন। এই কর্মবিরতিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের নিউজ কাভার করা কর্মীরা থাকবেন না।

২০১৭ সালে গুগলের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ নিউইয়র্ক টাইমসের ডলার আয় কমে যায়। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গুগলের বিজ্ঞাপন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে পাঠকদের গ্রাহক (সাবস্ক্রিপশন) হওয়ার ওপর নির্ভর করতে থাকে।

গত বছরের শেষের দিকে নিউইয়র্ক টাইমস দুই হাজারের বেশি সাংবাদিকসহ প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।

২০২১ সালের মার্চে আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই বেতন, মজুরি বৃদ্ধি, অবসর গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যসেবা নীতি ও হোম অফিসের মতো কাজ নিয়ে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মতবিরোধ শুরু হয়।

গত মঙ্গলবার এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা আলোচনা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটি বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০২৩–২৪ সালে ৩ শতাংশ হারে নিশ্চিত বেতন বাড়বে। তবে পেনশন সুবিধার দাবি নাকচ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিউইয়র্ক টাইমসের উপব্যবস্থাপনা সম্পাদক ক্লিফ লেভি গত মঙ্গলবার কর্মীদের প্রতি এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবে ইউনিয়ন সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাই আমরা চাই এ বিষয়ের সমাধানে আমাদের সঙ্গে নিউজ গিল্ড যুক্ত হোক।’

ইউনিয়নের দাবি ছিল, চাকরির শুরুর বেতন হতে হবে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার। আর ২০২৩–২৪ সালে কর্মীদের বেতন ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। তবে নিউইয়র্ক টাইমস যে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, তা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ইউনিয়নের দাবি, চাকরির শুরুর বেতন হতে হবে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার। আর ২০২৩–২৪ সালে কর্মীদের বেতন ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের সিনিয়র স্টাফ এডিটর আন্দ্রেয়া জাগাতা বলেন, ‘গত বছর আমার বাসাভাড়া বেড়েছে ৮ শতাংশ। তাহলে প্রতিষ্ঠান আমার জন্য ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেতন বাড়ালে কী লাভ হবে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি অন্য নির্বাহীর বেতন, স্টক বাইব্যাক ও লভ্যাংশের জন্য বিপুল পরিমাণ ব্যয় করছে।’

নিউজ গিল্ড-সিডব্লিউএর প্রেসিডেন্ট জন শ্লেউস বলেন, গত ৫ বছর ইউনিয়নে ৬ হাজার ৫০০ জন গণমাধ্যমকর্মী সদস্য হয়েছেন। দুটি ছোট পরিসরের সংবাদপত্র দ্য ফোর্ট ওর্থ স্টার টেলিগ্রাম ও দ্য পিটসবার্গ পোস্ট গ্যাজেটের কর্মী সম্প্রতি অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন।

জন শ্লেউস আরও বলেন, তিনি আশাবাদী যে নিউইয়র্ক টাইমসের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থান কর্মীদের দাবি মেনে ভালো সুযোগ-সুবিধা দেবে।