দেশে সরকারি চাকরি পাওয়া অনেকের জন্য একটি স্বপ্নের মতো। সরকারি চাকরি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও সামাজিক মর্যাদা হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সরকারি চাকরির জন্য আবেদন প্রক্রিয়ায় উচ্চ আবেদন ফি বর্তমানে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের প্রার্থীদের জন্য এই ফি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে, যা তাদের জন্য চাকরির আবেদনপ্রক্রিয়াকে সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছে। এ কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থী শুধু অর্থনৈতিক কারণেই আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অনেক প্রার্থী একাধিক পদে আবেদন করার যোগ্যতা থাকলেও অতিরিক্ত ফি দিতে না পারায় আবেদন করতে ব্যর্থ বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি চাকরির আবেদন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। অনেক প্রার্থী মনে করেন যে এ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না বা এর ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছতা কম। তাই সরকারি চাকরির আবেদন ফি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আবেদন ফি কমানোর মাধ্যমে সরকার আরও অধিকসংখ্যক যোগ্য প্রার্থীকে চাকরির সুযোগ প্রদান করতে পারে এবং দেশের মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
আবেদন ফি কমানোর জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত, আবেদন ফি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কমানো যেতে পারে, যাতে এটি সাধারণ প্রার্থীদের জন্য আরও প্রাপ্তিযোগ্য হয়। দ্বিতীয়ত, নিম্ন আয়ের প্রার্থীদের জন্য ফিতে বিশেষ ছাড় প্রদান করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের সদস্যদের চাকরি আবেদন করা সহজ হবে। তৃতীয়ত, অনলাইন আবেদনব্যবস্থার উন্নয়ন করে খরচ কমানো যেতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে আবেদনপ্রক্রিয়া সহজ এবং সাশ্রয়ী করা সম্ভব। চতুর্থত, আবেদন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ব্যবহারের হিসাব রাখা এবং তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা উচিত। এতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রার্থীদের আস্থার উন্নতি হবে।
আবেদন ফি সম্পর্কিত সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ এবং সমাধানের জন্য একটি বিশেষ পরামর্শ কমিটি গঠন করা উচিত। এই কমিটি প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ফি নির্ধারণ করবে এবং ফি ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য নিয়মিত পর্যালোচনা ও নজরদারির ব্যবস্থা করবে। প্রতিটি একক আবেদন আবেদন ফি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা করা যেতে পারে। ফি কমানোর মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের আর্থিক চাপ কমানো সম্ভব হবে এবং একই সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ন্যায্যতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করবে। এটি শুধু প্রার্থীদের জন্য নয়, বরং সার্বিকভাবে দেশের চাকরিবাজারে প্রতিযোগিতা ও উন্নতি সাধনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
লেখক: এম নাহিদুল ইসলাম নাহিদ, অফিসার, রূপালী ব্যাংক পিএলসি