৪১তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন পল্লব বসু। কিন্তু সে সময় নিজের প্রথম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সামনে অনেক কান্না করেছিলেন। পরের বিসিএসেই পেলেন নিজের পছন্দের প্রশাসন ক্যাডার। কিন্তু দুভার্গ্য; এই ফল দেখে যেতে পারলেন না। ৪৩তম বিসিএসের ফল প্রকাশের ছয় দিন আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পল্লব বসু।
গত ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএসের প্রকাশিত ফলে প্রশাসনে ক্যাডারে ২৮তম হয়েছেন পল্লব বসু। এর মাত্র ছয় দিন আগে ২০ ডিসেম্বর স্থানীয় মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলার পর চায়ের দোকানে বসে পানি খাওয়ার সময় হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
পল্লব বসুর ভগ্নিপতি গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের পর ৪১তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডার পেয়েছিল পল্লব। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেওয়ার। খাদ্য ক্যাডার পাওয়ার পর অনেক কান্না করেছিল। তখন আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। এবার ঠিকই প্রশাসন ক্যাডার পেল, কিন্তু দেখে যেতে পারল না।’
পল্লব বসুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পল্লব বসু এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন। এরপর ভর্তি হয়েছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় বাড়ি পল্লব বসুর। ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে ভোলার সরকারি শাহবাজপুরে কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদেও চাকরি পেয়েছিলেন।
পল্লব বসুর ভগ্নিপতি দোলন চন্দ্র রায় জানান, ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে স্থানীয় মাঠে কিছুক্ষণ ব্যাডমিন্টন খেলেন পল্লব। এরপর একটি চায়ের দোকানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেখানে পানি খাওয়ার পর কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বেঞ্চ থেকে মাটিতে পড়ে যান। তাঁকে দ্রুত কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে সিভিয়ার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
দোলন চন্দ্র রায় জানান, পল্লবের আগে থেকে কোনো সমস্যা ছিল না। তবে তিন মাস আগে তাঁকে একবার চিকিৎসক দেখানো হয়েছিল। সে সময় ইসিজি ও লিপিড প্রোপাইল করা হয়েছিল। তখন কিছু ধরা পড়েনি।
পল্লব বসুর মা কল্পনা রাণী ঘোষ ছেলের অকালমৃত্যুতে পাগলপ্রায়। এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি বলে জানান দোলন চন্দ্র রায়।
৪১তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডারে সুপারিশ পাওয়ার পর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন পল্লব বসু। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ৪১তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডারে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। আমি মানুষটা সর্বদা পছন্দের খাবার খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসি। সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে এখন দেশের হাজারো সাধারণ মানুষের জন্য সুষ্ঠুভাবে খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব মাথায় এল। এই সামান্য অর্জনের পুরো কৃতিত্ব আমার পরিবার, আত্মীয়জন ও বন্ধুমহলের, যারা সর্বদা আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। আশীর্বাদ করবেন যেন এই চলার পথের সর্বশেষ গন্তব্য এটাই না হয়।’
৪০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পল্লব বসু আমাদের ব্যাচমেট। অনেকবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। তিনি খুবই আন্তরিক ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যা নিয়ে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তাঁর। তিনি চাইতেন প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিতে। সেই ক্যাডারও পেলেন, কিন্তু দেখে যেতে পারলেন না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’