সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে রেলওয়ের ১১ ক্যাটাগরির ৫১৬টি উপসহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দিনভর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিকেলে আন্দোলনকারীরা বলেন, রেলওয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ার পর পিএসসি এ পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেবে, সেই আশায় আন্দোলন আপাতত থামিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। প্রমাণ পাওয়ার পরও যদি পরীক্ষা বাতিল না কো হয়, তাহলে তাঁরা কঠোর আন্দোলন করবেন।
আজ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, রেলওয়ের দশম গ্রেডের উপসহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে এ পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের বিষয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কমিটির সুপারিশ পেলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
জানতে চাইলে আন্দোলনকারীদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গাজীপুর থেকে এসেছেন। রেলের যে পরীক্ষা তিনি দিয়েছেন, তার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা পিএসসিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। তিনি জানান, পিএসসি থেকে প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রতিনিধি আশ্বাস দিয়েছেন যে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রমাণিত হলে পরীক্ষাটি বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাই তাঁরা আজ ফিরে যাচ্ছেন।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুই উপপরিচালক, এক সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, কর্মচারী (ডেসপাস রাইডার) মো. খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম এবং সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তাঁর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান, সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশিদ, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী মো. শাহাদত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর মো. সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেন, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম এবং যুবক লিটন সরকার।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোর রোববার পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে পিএসসির কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, পিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই এই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অর্থ নিতেন। ৫ জুলাই (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন তাঁরা। চক্রের সদস্যরা ওই পরীক্ষার আগের রাতে তাঁদের চুক্তি করা শিক্ষার্থীদের অজ্ঞাতনামা স্থানে রেখে ওই প্রশ্নপত্র ও এর উত্তর দিয়ে দেন।