বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ‘নতুন নিয়ম’ বাদ দিয়ে আগের পদ্ধতিতেই নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অপেক্ষমাণ নন-ক্যাডার প্রার্থীরা।
তাঁরা নতুন নিয়মকে ‘বেকার বিরুদ্ধ ও অযৌক্তিক’ বলে পিএসসির কড়া সমালোচনা করেছেন ছয় দফা দাবিও জানিয়েছেন।
আজ রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ‘বিসিএস উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার ও চাকরিপ্রার্থী ছাত্রসমাজের’ ব্যানারে ডাকা এই মানববন্ধনে কয়েক শ ব্যক্তি অংশ নেন। অবিলম্বে ছয় দফা দাবি মেনে নিতে তাঁরা সরকার ও পিএসসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো, বিজ্ঞপ্তির পরে ৪০-৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির তারিখওয়ারি নন-ক্যাডার পদ বিভাজনের মাধ্যমে পদসংখ্যা নির্ধারণের বেকার বিরুদ্ধ ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল, ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের পদ ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসকে দেওয়ার অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ইতিহাসের দীর্ঘকালীন ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা, যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিএসসি ৩৪-৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই একই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, ‘যার যা প্রাপ্য, তাকে তা-ই দেওয়া হবে’—পিএসসির এমন বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও বেকারত্ব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করে বেকার বান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং গত এক যুগে পিএসসি যে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও বেকারবান্ধব প্রতিষ্ঠান ছিল, সেই ধারা অব্যাহত রাখা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করে মানববন্ধনের আয়োজকদের পক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিএসসি কর্তৃক বিধি প্রত্যাবর্তনের কারণে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের জন্য অমানবিক ও রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্কজনক পিএসসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এমনটা আমরা কখনোই প্রত্যাশা করি না। কার ইঙ্গিতে জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে তারা (পিএসসি) ছাত্রসমাজকে উসকে দিল?’
ওই আয়োজক আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময় বিসিএসকে বেকারবন্ধব করে মানুষের আস্থার জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর পর থেকে বিসিএসে নিয়োগ হচ্ছে খুব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনা বেকারবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশ ও জনগণের আস্থা এবং বেকারদের সর্বশেষ ঠিকানা।’
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০তম, ৪১তম, ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।
এরপর নতুন নিয়ম বাদ দিয়ে আগের পদ্ধতিতে চাকরি পাওয়ার দাবি জানিয়ে ৬ অক্টোবর পিএসসির সামনে মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রার্থীরা সেদিন তাঁদের প্রতিনিধিদল পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গেও দেখা করে দাবির বিষয়ে কথা বলেন।
এ বিষয়ে গত সপ্তাহে পিএসসি বলেছে, নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য নতুন কোনো নিয়ম করা হয়নি। নন-ক্যাডার নিয়োগের পদ উল্লেখ করার বিধিটি সরকার ২০১০ সালে করে। সেটি ২০১৪ সালে সরকারই সংশোধন করে। পিএসসি সরকারের সেই বিধি অনুসরণ করে। এ নিয়োগবিধি আগে যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে৷ বর্তমান কমিশন নন-ক্যাডার নিয়োগবিধিতে কোনো পরিবর্তন করেনি৷ কমিশন নিজেদের কোনো সিদ্ধান্ত চাকরিপ্রার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে না, বরং সরকারের বিধিতে যা বলা আছে, সেটিই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে তারা। যার যেটুকু প্রাপ্য, তা যাতে নিশ্চিত হয়, সেই চেষ্টাই করছে পিএসসি।