প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সামাদের পদত্যাগের দাবিতে চার দিন ধরে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন অধিদপ্তরের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত মঙ্গলবার থেকে কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। আজ রোববার অধিদপ্তরের সামনে সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, গত জুলাই মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই মো. আব্দুস সামাদের কর্তৃত্ববাদী আচরণ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অধিদপ্তরের সম্মানহানি হচ্ছে। তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং কক্ষ থেকে বের করে দেন। এ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্থায়ী পদ থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত দুজন পরিচালক, তিনজন উপপরিচালকসহ ২০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি খারাপ ব্যবহার করেছেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা আরও বলেন, মহাপরিচালক মো. আব্দুস সামাদের কক্ষে পরিচালক পদমর্যাদার নিচের কোনো কর্মকর্তা প্রবেশ করতে পারেন না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের ৯টি পদের মধ্যে সাতটিতেই বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রেষণে পদায়িত আছেন। তিনি প্রশাসন ক্যাডারের এসব কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার স্থায়ী ও নিজস্ব পদধারী কর্মকর্তাদের নিপীড়ন করছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপবৃত্তি বিভাগ) নাছিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বর্তমানে প্রায় চার লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষক। তাঁরা বিভিন্ন কাজে অধিদপ্তরে আসেন। শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো আচরণের জন্য মহাপরিচালক হিসেবে সহনশীল মানুষ দরকার। কিন্তু বর্তমান মহাপরিচালক একজন অসহনশীল মানুষ। তিনি সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁর কক্ষে কাউকে প্রবেশ করতে দেন না। তিনি কাউকে কক্ষে ডাকলে অনুমতি ছাড়া বসলে চেয়ার থেকে তুলে দেন। তাই আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, বর্তমান মহাপরিচালককে অপসারণ করে শিক্ষাবান্ধব ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা অধিদপ্তরে নিয়োগ দেওয়া হোক।’
বক্তারা আরও বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২০ আগস্ট প্রথমবারের মতো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যান। সেখানে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় মহাপরিচালকের নির্বাচিত কিছু চিহ্নিত ব্যক্তিকে নিয়ে গোপনে সব আয়োজন সম্পন্ন করেন। সভায় মাত্র চারজন কর্মচারী প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। ওই সভায় তিনি তাঁর পছন্দের মাত্র ছয়জন ব্যক্তিকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেন, যাঁদের সবার কাছ থেকে সভার দিন সকালবেলা বক্তব্যের স্ক্রিপ্ট আগে জমা নেন। এ ছাড়া উপদেষ্টার সামনে কোনো দাবিদাওয়া ও সমস্যার উল্লেখ না করার নির্দেশ দেন। ফলে উক্ত অনুষ্ঠানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে আগ্রহী হননি। সারা দেশের মাঠ প্রশাসনে যেখানে সংস্কারের দাবি উঠেছে, সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে উপদেষ্টার উপস্থিতিতে কোনো সমস্যা বা সংস্কারের কথা না বলতে দেওয়া বাকস্বাধীনতা রোধের শামিল। মহাপরিচালকের এমন কর্মকাণ্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত।