কোচিং বা প্রেস ব্যবসা থাকার প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেবে পিএসসি

সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) কর্মরত কেউ যদি কোচিং ব্যবসা চালান বা প্রেসের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অসদাচরণের অভিযোগ এনে বরখাস্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পিএসসি। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসে কারও নাম সন্দেহের তালিকায় এলেও তা তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে ছুটিতে পাঠিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে চায় পিএসসি। আজ মঙ্গলবার সকালে পিএসসির একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা পিএসসির এসব তৎপরতার কথা জানান।

আজ বুধবার সকালে পিএসসিতে গিয়ে দেখা গেছে, ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা চলছে। প্রার্থীরা ভাইভা দিতে এসেছেন। কেউ কেউ ভাইভা শেষে ফিরে যাচ্ছেন। গতকালের মতো পিএসসির সামনে কোনো বিক্ষোভ বা মানববন্ধন নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কোচিং বা প্রেস থাকলে চাকরি বিধিমালা অনুসারে তা প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হয়। কয়েকজনের নামে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের কারও কারও কোচিং ব্যবসা আছে। কারও প্রেস আছে। এগুলো থাকলে আর প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়ে থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তিদের বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হবে। এ ছাড়া সন্দেহের তালিকার বাইরে কাউকে রাখা হচ্ছে না। কোনোভাবে কারও নাম এলেই তাঁকে তাঁর দায়িত্ব থেকে নিষ্ক্রিয় রাখা হবে। প্রয়োজনে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে আর নির্দোষ প্রমাণিত না হলে পিএসসিতে তাঁকে ফেরানো হবে না। এ ছাড়া সরকারের কোনো সংস্থা প্রশ্ন ফাঁসের তদন্ত করতে এলে পিএসসি থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সঠিক তদন্তের জন্য ও সত্য বের হওয়ার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছি আমরা। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছি আমরা।’
 

দুজনের কোচিং ব্যবসা

উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির দুজনই চাকরির প্রস্তুতির কোচিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিষয়টি পিএসসির অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীই জানেন। ঢাকার মালিবাগের জ্যোতি কমার্শিয়াল চাকরির কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবু জাফর। কোচিং সেন্টারটি তাঁর স্ত্রী জ্যোতির নামে। পিএসসির প্রশাসন শাখা থেকে জানা গেছে, কয়েক বছর পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন আবু জাফর। তিনি কোচিং সেন্টারে যুক্ত আর নানা নেতিবাচক আলোচনায় ছিলেন বলে তিন বছর তাঁর পদোন্নতি আটকে ছিল। গোয়েন্দা প্রতিবেদন নেতিবাচক আসার কারণে পদোন্নতি আটকে ছিল বলে জানায় পিএসসির প্রশাসন শাখা।

এ ছাড়া মো. আলমগীর কবিরের কোচিং সেন্টার আছে ঢাকার মিরপুরে। পিএসসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলমগীর কবির আগে আজিমপুরে থাকতেন। কোচিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিরপুরে বাসা নেন। পিএসসিতে থাকার পরও এমন কোচিং সেন্টারে তাঁরা থাকলেও এ জন্য সরাসরি তাঁদের কোনো জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই দুজনের চাকরির প্রস্তুতির কোচিং ব্যবসা আছে, তা এবার অভিযোগ আসার পর জানতে পেরেছি। আগে জানতে পারলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

১৭ জন কারাগারে

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম। আরও আছেন সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, কর্মচারী (ডেসপাচ রাইডার) মো. খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। এ ছাড়া রয়েছেন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের বিষয়ে আদালতে জমা দেওয়া সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ৫ জুলাই পিএসসির অধীনে নেওয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (নন-ক্যাডার) পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। নিয়োগ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর বিতরণ করেছেন তাঁরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছেন, বিগত বছরগুলোতেও বিভিন্ন সময়ে বিসিএসসহ পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন। সিআইডি বলছে, ৫ জুলাইয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় অন্তত ৫০ জন জড়িত। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনকে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে।