৪৩তম বিসিএস: সুপারিশপ্রাপ্তরা ৮ মাসেও নিয়োগ পাননি

৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের জন্য ৮ মাস আগে সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কিন্তু এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় নিয়োগের আশায় বসে থেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। দ্রুত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা।

সাধারণত পিএসসি থেকে নিয়োগের সুপারিশের তালিকা জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়। এরপর এই তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের নানা ধরনের তথ্য যাচাই করা হয়। সব তথ্য পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় তাঁদের নিয়োগের সুপারিশ করে।

২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে এবং ৬৪২ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরে। সেই হিসাবে সাড়ে তিন বছর পার হয়ে গেলেও চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি।

৪৩তম বিসিএসে ২ হাজার ১৬৩ জন ক্যাডার পদের মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষা ক্যাডারে ৮০৩ জন, প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫ জন, পুলিশ ক্যাডারে ১০০ জন, কর ক্যাডারে ১০১ জন, তথ্য ক্যাডারে ৪৩ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জনে ৭৫ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে।

২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর দেশের সব বিভাগীয় শহরে একযোগে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রিলিমিনারির ফলাফল প্রকাশিত হয়, যাতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থী। ২০২২ সালের জুলাইয়ে পিএসসি লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে, এতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৪১ জন।

৪৩তম বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষোভ আর হতাশা দিন দিন বাড়ছে। চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন অনেকে। বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চাকরিতে যোগদান করা নিয়ে নানা ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশে দেরি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নানা কথা হচ্ছে। অনেকে না জেনেই অনুমাননির্ভর তথ্য শেয়ার করছেন গেজেটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে, যা উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে। কেননা গেজেটের সম্ভাব্য সময়ের ওপর ভিত্তি করে অনেকের বর্তমান চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়টি জড়িত।

নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা বলছেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আট মাস হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের গেজেট এখনো হচ্ছে না, কবে হবে সেটাও আমরা জানি না। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছি। কবে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিতে পারব, কেউ কিছুই বলছে না।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেজেট প্রকাশের পূর্বে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশের অনিশ্চয়তা প্রার্থীদের হতাশার অন্যতম কারণ। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় তাঁদের মানসিক চাপ আরও বেড়েছে। এমতাবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন প্রার্থীদের দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে তাঁদের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করলে শুধু প্রার্থীদের হতাশা দূর হবে না, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমেও নতুন উদ্যম যোগ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশ কিছু আটকে থাকা পদোন্নতি, নতুন নিয়োগ আমাদের কাজের তালিকায় ছিল। সেগুলোর কাজ করছি।’ জনপ্রশাসনে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে পেয়েছি। এখন দ্রুতই তাঁর সঙ্গে কথা বলে ৪৩তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের কাজ চূড়ান্ত করা হবে।