বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে পেরিয়ে গেছে দেড় বছর। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর। পরীক্ষার্থীদের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।
লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দেরি মূলত পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ার কারণে।
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী ২১ হাজার ৫৬, যা গত কয়েকটি বিসিএসের প্রায় দ্বিগুণ।
৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। এরপর পেরিয়ে যাচ্ছে এক বছর আট মাস। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। মৌখিক পরীক্ষা শেষে কবে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। অনিশ্চয়তায় মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি তাঁরা ঠিকমতো নিতে পারছেন না।
তবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, তারা সব পরীক্ষারই ফলাফল দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করে। ৪১তম বিসিএসের ক্ষেত্রেও তাদের সেই চেষ্টা রয়েছে। এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় বেশিসংখ্যক প্রার্থী অংশ নেওয়ায় খাতা দেখতে একটু বেশি সময় লাগছে। আগামী মাসের যেকোনো সময় ফলাফল প্রকাশ করা হতে পারে।
‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফলাফল দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলাফল প্রকাশের কাজ দ্রুত করতে ছুটির দিনেও পিএসসি কাজ করছে। আশা করি, সামনের মাসেই ফলাফল প্রকাশ করতে পারব।’সোহরাব হোসাইন, পিএসসির চেয়ারম্যান
এই বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা গত বছরের ২৯ নভেম্বর শুরু হয়েছিল, শেষ হয় ৭ ডিসেম্বর।
একজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘দেড় বছর আগে আমরা ৪১তম বিসিএসের আবেদন করেছিলাম। এখনো লিখিত পরীক্ষার ফলাফলই প্রকাশিত হয়নি। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা। সেটি নিতেও পিএসসির অনেক সময় লেগে যাবে। এরপর আবার চূড়ান্ত ফলাফল। সেখানেও সময় চলে যাবে। সব মিলিয়ে যদি একটি বিসিএসে এত সময় লাগে, তাহলে আমাদের হতাশা বাড়তেই থাকে।’
বয়স বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আরেক প্রার্থী বলেন, ‘সবারই কিছু প্রত্যাশা থাকে। বেশি বয়সে চাকরিতে যোগ দিলে সেই প্রত্যাশায় অনেকটাই ভাটা পড়ে যায়। আশা করব, পিএসসি দ্রুত এই বিসিএসের কার্যক্রম শেষ করবে।’
পিএসসির একাধিক সূত্র জানায়, ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। লিখিত পরীক্ষায় ২১ হাজার ৫৬ জন অংশ নেন। আগের কয়েকটি বিসিএসের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এত প্রার্থীর খাতা দেখতে সময় বেশি লাগছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৬তম বিএসসিতে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১২ হাজার ৪৬৮ জন। ৩৭তম বিসিএসে ৮ হাজার ৫২৩ জন। ৩৮ ও ৪০তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন যথাক্রমে ৯ হাজার ৮৬২ ও ১০ হাজার ৯৬৪ জন। ৩৯তম ছিল চিকিৎসকদের বিশেষ বিসিএস।
পিএসসির সূত্রগুলো বলছে, কোনো কোনো পরীক্ষক সময়মতো খাতা দেন না। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার বেশ কিছু খাতা তৃতীয় পরীক্ষক দেখছেন। সে জন্যও সময় বেশি লাগছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ৬ মাসে ১০০ খাতার মধ্যে মাত্র ১৫টি দেখেছেন দাবি করে পিএসসির একজন সদস্য বলেন, পরীক্ষক খাতা দেখতে বেশি সময় নিলে পিএসসি বারবার তাগাদা দেয়। কিন্তু তাতেও অনেক পরীক্ষক খাতা সময়মতো দেন না। তবে এখন পিএসসি এ ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে। কোনো পরীক্ষক খাতা দেখতে বেশি সময় নিলে ভবিষ্যতে পিএসসির কোনো খাতা আর তাঁকে দেখতে দেওয়া হবে না।
পিএসসির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত সময় লেগেছিল ৩ বছর ১১ মাস, ৩৮তম বিসিএসে তা ছিল ৩ বছর ৭ মাস ও ৩৭তম বিসিএসে লেগেছিল ৩ বছর ৮ মাস।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফলাফল দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলাফল প্রকাশের কাজ দ্রুত করতে ছুটির দিনেও পিএসসি কাজ করছে। আশা করি, সামনের মাসেই ফলাফল প্রকাশ করতে পারব।’
২০২০ সালের ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত আগস্টের শুরুতে প্রিলিমিনারির ফলাফল প্রকাশ করে পিএসসি।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই বিসিএসে বিভিন্ন পদে ২ হাজার ১৩৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কথা। সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। এ ক্যাডারে ৯১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে বিসিএস শিক্ষায় ৯০৫ জন ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগে ১০ জন প্রভাষক নেওয়া হবে। শিক্ষার পর বেশি নিয়োগ হবে প্রশাসন ক্যাডারে। প্রশাসনে ৩২৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।