৪৪তম বিসিএসে দ্বিতীয় পরীক্ষকের লিখিত খাতা জমার জন্য বারবার সময় বেঁধে দেওয়া হলেও কিছু পরীক্ষক তা শুনছেন না। দিচ্ছি, দেব বলেও খাতা জমা না দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এখন সেই পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় এক বছর আগে ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পরীক্ষকদের সব সময় সময় অনুসারে খাতা দেখতে বলার পরও অনেক পরীক্ষক তা করছেন না। এই দিচ্ছি, দেব বলে সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা যেহেতু সম্মানীয় ব্যক্তি, তাঁদের কড়াভাবে কিছু বলাও যাচ্ছে না। এই কিছু পরীক্ষকের কারণে সবার মানসম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ৪৪তম বিসিএসে প্রথম পরীক্ষকের খাতা দেখা শেষ, এখন দ্বিতীয় পরীক্ষকের খাতা দেখা শেষ পর্যায়ে। সব খাতা পেলে জানা যাবে কতটি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যাবে। সাধারণত প্রথম পরীক্ষক ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরের পার্থক্য ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে সেই খাতা পাঠানো হয়। তৃতীয় পরীক্ষক নম্বর চূড়ান্ত করেন।’
ওই সমস্যা সম্পর্কে পিএসসির সদস্য আরও বলেন, ‘সেমিনার করে বারবার খাতা সময়মতো দেওয়ার কথা বলা হলেও কিছু পরীক্ষক তা শুনছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। তালিকাটি আমরা প্রস্তুত করছি। এই পরীক্ষকদের কারণেই পিএসসি বিপাকে পড়েছে। অন্যদিকে যাঁরা সময়মতো খাতা দেখছেন, জমা দিচ্ছেন, তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যাঁদের খাতা কম যায়, তাঁদের আমরা আরও বেশি খাতা দিচ্ছি। এতে তিনিও লাভবান হচ্ছেন। একদিকে তাঁর সুনাম হচ্ছে আরেক দিকে সম্মানী পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই পরীক্ষকেরাই পিএসসির সাড়া পাবেন। অন্যদের গাফিলতির কারণে বাদ পড়তে হবে। আমার শিগগিরই দেরি করা পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হচ্ছি।’
৪৪তম বিসিএসে অংশ নেওয়া এক প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেরি করছেন পরীক্ষকেরা আর আমরা তার মাশুল দিচ্ছি। এক বছর আগে লিখিত শেষ। এখনো তৃতীয় পরীক্ষকেরাও দেখতে শুরু করেননি। এটিতে আবার কত দিন সময় লাগে কে জানে। এই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পিএসসির প্রতি অনুরোধ, এই পরীক্ষকদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পিএসসির প্রতি আমাদের আনুগত্য আছে। কিছু পরীক্ষকের কারণে এই সুনাম নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক নয়।’
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৪তম বিসিএসের অনলাইন আবেদন শুরু হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি। পরে তা বাড়িয়ে ২ মার্চ নির্ধারণ করে পিএসসি। এরপর গত বছরের ২৭ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ২৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে রেকর্ড করে পিএসসি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৭০৮ পরীক্ষার্থী পাস করেন।
৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৭১০ জন কর্মকর্তা নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০ জন, পুলিশ ক্যাডারে ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ১০, আনসার ক্যাডারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, কর ক্যাডারে ১১, সমবায়ে ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকে ৭, তথ্যে ১০, ডাকে ২৩, বাণিজ্যে ৬, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭, খাদ্যে ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডারে ৭৭৬ জন নেওয়া হবে।