বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা মোটর করপোরেশন গত ২০ বছরের মধ্যে কর্মীদের মূল বেতন ও বোনাস সবচেয়ে বেশি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বেতন-বোনাস বাড়ানোর জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের এ দাবি মেনে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি বিশ্বের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেছে। এর মধ্যে টয়োটার এ ঘোষণা কর্মীদের জন্য একটি বড় সুখবর হয়েই এসেছে।
গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, শ্রমিক ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বেতন-বোনাস বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে। এ কারণে জাপান ব্যবসায়ীদের মজুরি বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে টয়োটা মোটর ইউনিয়নের এ দাবি মেনে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতির এ সময় ভোক্তাদের ওপর বোঝা কমানোর জন্য সরকার মজুরি বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। শিগগির একটা সমাধান আসবে বলে প্রত্যাশা করেন তাঁরা।
টয়োটার পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন কোজি সাতো। তিনি বলেন, প্রথম দফা আলোচনায় ইউনিয়নের সব দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কেবল টয়োটার জন্য নয়, বরং সামগ্রিকভাবে শিল্পের জন্যও ভালো। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে উভয় প্রতিষ্ঠানের শ্রম ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে খোলামেলা আলোচনার পথ সুগম হবে।
টয়োটার বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডও কর্মীদের ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছে। হোন্ডা কর্মীদের মাসিক মূল বেতন প্রায় ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর বিষয়ে রাজি হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে ১৯৯০ সালের পর এটাই হবে এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় অঙ্কের বেতন বৃদ্ধির ঘটনা।
টয়োটা ও ৩ লাখ ৫৭ হাজার টয়োটা গ্রুপ কর্মীর প্রতিনিধিত্বকারী ইউনিয়ন ফেডারেশন বলেছে, টয়োটায় দুই দশকের মধ্যে মূল বেতন সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাবে।
গত ৪০ বছরের মধ্যে জাপানে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৪। এ কারণে মজুরি বাড়ানো নিয়ে জাপান খুব চাপে আছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে বেতন বৃদ্ধি টয়োটার মতো বড় সংস্থাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের কোম্পানি, যেখানে অধিকাংশ জাপানি শ্রমিক কাজ করেন, তাঁরা এ সুবিধা পাবেন না। বেতন বাড়ানোর জন্য তাঁদের সংগ্রাম করে যেতেই হবে।
টয়োটা বলছে, মজুরি বৃদ্ধি খণ্ডকালীন শ্রমিক এবং চুক্তিভিত্তিক জ্যেষ্ঠ কর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া ৬ দশমিক ৭ মাসের মজুরি মূল্যের এককালীন বোনাস দিতে ইউনিয়নের অনুরোধে সম্মত হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান।
ফেডারেশন অব অল টয়োটা ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল তাকাকি সাকাগামি বলেন, কোম্পানির সঙ্গে দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছাতে পারায় ইউনিয়ন সন্তুষ্ট।
সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা কর্মীদের বেতন বাড়াতে ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে কর্মীদের বেতন না বাড়ালে স্থবিরতা আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছিলেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে টয়োটা কর্মীদের বেতন বাড়ানোর চুক্তি করেছে।
গত বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বাজেট কমিটির অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বলেন, ‘কাঠামোগত মজুরি বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে প্রচার করে আমরা অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্প্রসারিত করব।’
এদিকে পোশাক খাতের বড় প্রতিষ্ঠান ইউনিক্লোর মূল কোম্পানি ফাস্ট রিটেইলিং কোম্পানি লিমিটেডও গত মাসে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের বেতন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াবে। ভিডিও গেম নির্মাতা নিনতেন্দো কোম্পানি লিমিটেডও চলতি মাসের শুরুতে বলেছে, তাঁরা কর্মীদের মূল বেতন ১০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।