চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে এখন অন্যতম আকর্ষণের নাম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস। চার বছরের স্নাতক ডিগ্রিধারীরা ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। ক্ষেত্রবিশেষে এই বয়স ৩২ বছর। কিন্তু এই পরীক্ষায় কোন বয়সের প্রার্থীরা বেশি পাস করে চাকরির সুপারিশপ্রাপ্ত হচ্ছেন?
গত বৃহস্পতিবার (২ মে) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পিএসসির মাধ্যমেই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (বর্তমানে চাকরির পরিচয় শ্রেণিপ্রথার পরিবর্তে গ্রেডভিত্তিক) নিয়োগগুলো হয়ে থাকে।
পিএসসির ওই প্রতিবেদনে ৪১তম ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার নানা তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, ৪১তম বিসিএসে ২৩–২৫ বছর বয়সের প্রার্থীরা সবেচেয়ে বেশি চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপ—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা পাস করেছেন।
৪১তম বিসিএসে পিএসসি যাঁদের চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিল তাঁদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৯০ শতাংশের বয়স ছিল ২৩–২৫ বছর। এরপর আছেন ২৫–২৭ বছর বয়সীরা। ওই বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশের বয়স ছিল ২৫–২৭ বছর। এ ছাড়া ২১–২৩ বছর বয়সী ছিলেন ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ওই পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত বয়স্ক প্রার্থীরা তুলনামূলক কম সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৭–২৯ বছর বয়সী ছিলেন ১১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম সুপারিশ পেয়েছেন ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীরা (১ দশমিক ৬৭ শতাংশ)।
অবশ্য ওই পরীক্ষায় আবেদনকারীদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ছিলেন ২৩–২৫ বছর বয়সী (৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর আবেদনকারীদের মধ্যে ২৯ বছরের বেশি বয়সীরা ছিলেন সবচেয়ে কম, ৫ দশমিক ২০ শতাংশ।
৪৩তম বিসিএসেও একই চিত্র দেখা গেছে। ওই বিসিএসে মোট যোগ্য আবেদনকারী ছিলেন ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮১৩ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ২৩–২৫ বছর বসয়ী (মোট আবেদনকারীর ৩২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ)। আর সবচেয়ে কম ছিলেন ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থী (৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ)।
৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্তভাবে যাঁরা চাকরির জন্য সুপারিশ পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ২৩–২৫ বছর বয়সী। সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছিলেন এই বয়সসীমার প্রার্থী। অন্যদিকে সবচেয়ে কম সুপারিশ পেয়েছেন ২৯ বছরের বেশি বয়সী প্রার্থীরা (১ দশমিক ৭১ শতাংশ)। এর বাইরে সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ২১–২৩ বছর বয়সীরা ছিলেন ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ২৫–২৭ বছর বয়সী ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ২৭–২৯ বছর বয়সী ছিলেন ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এই দুটি বিসিএসের মাঝখানে ৪২তম বিসিএস ছিল বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য)। সেবার পিএসসি যাঁদের চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিল, তাঁদের মধ্যে ২৫–২৭ বছর বয়সী প্রার্থী বেশি ছিলেন (৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ)। সেবার সুপারিশ পাওয়াদের ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশের বয়স ছিল ২৩ থেকে ২৫ বছর।
পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে মানবিক বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তবে পিএসসি যাঁদের চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেছিল, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ৪১তম বিসিএসে সুপারিশ করা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ৪৩তম বিসিএসে সেটি ছিল ৩৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। অবশ্য পিএসসির প্রতিবেদনে প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানকে আলাদা বিভাগ দেখানো হয়েছে। এই দুটি বিভাগকে বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে যোগ করলে দেখা যায়, ওই দুই বিসিএসে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পাওয়াদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের বেশি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যখন আইসিএস ছিল তখন ১৭–১৯ বছরে চাকরিতে ঢুকতেন। পাকিস্তান আমলে সিএসপি পরীক্ষায় ২১–২৫ বছর বয়স পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়া যেতো। কারণ, তখন সেশন জট ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে বিসিএস পরীক্ষার জন্য বয়স ছিল ২১–২৭ বছর। এইচ এম এরশাদের আমলে তা ২১–৩০ বছর করা হয়। এখন ২৩–২৫ বছর বয়সীরা বেশি পাস করছেন, তার কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট কমেছে। আরেকটি কারণ হতে পারে এখন মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিসিএসের প্রতি ঝুঁকছেন, তাঁদের অনেকে প্রথম বারেই পাস করছেন।
সাবেক এই সচিব বলেন, পাকিস্তান আমলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বেশি সিএসপি পাস করতেন। বাংলাদেশ আমলে একটা সময় পর্যন্ত মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার ছিল। এখন ক্রমে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বাড়ছে। তার কারণ এখন বুয়েট, মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ভাল ভাল বিষয়ের শিক্ষার্থীরা বিসিএসের প্রতি আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।