রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪০তম ব্যাচে প্রথম বর্ষ থেকেই ফলাফলে প্রথম নুসরাত জেরিন জেনী। টানা চার বছর প্রথম স্থান ধরে রেখে স্নাতক শেষ করেন। স্নাতকোত্তরে থাকা অবস্থায় ষোড়শ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) সহকারী জজ নিয়োগের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানেও পেয়েছেন সফলতা। সারা দেশে হয়েছেন প্রথম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী নুসরাত জেরিন স্নাতকে ৩ দশমিক ৮৩ সিজিপিএ অর্জন করেছেন। স্নাতকোত্তরেও সর্বোচ্চ সিজিপিএ আশা করছেন তিনি। স্নাতকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গোল্ড মেডেলের জন্য নমিনেটেড হয়েছেন। বর্তমানে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন।
সহকারী জজ নিয়োগের যে সিলেবাস তার ৬০ শতাংশ অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার মধ্যে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এ পড়াগুলো বারবার পড়েছিনুসরাত জেরিন
নুসরাতের জন্ম গাইবান্ধায়। বেড়ে উঠেছেন বগুড়ায়। বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া থেকে জিপিএ–৫ নিয়ে এসএসসি পাস করেন এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া থেকে জিপিএ–৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। সহকারী জজ নিয়োগের এটি দ্বিতীয় পরীক্ষা তাঁর। এর আগে ১৫তম বিজিএস পরীক্ষা দেন। নুসরাত জেরিন বলেন, স্নাতকের যেদিন ভাইভা শেষ হয়, তারপরই একটা সার্কুলার পাই। সেটাতে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি।
সহকারী জজ হওয়ার স্বপ্ন আগে থেকে ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নুসরাত জেরিন বলেন, ‘আমি এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়ে মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হওয়ার। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। আইনে ভর্তি হওয়ার সময় সহকারী জজ নিয়োগসংক্রান্ত জ্ঞান খুবই কম ছিল। ভর্তির পরপরই সহকারী জজ নিয়োগের একটা ব্যাচের ফল হয়। অনেক সিনিয়র আপু চাকরির সুযোগ পান। এরপর ধীরে ধীরে সহকারী জজ নিয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি।’
নুসরাত জেরিন বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল বিভাগে প্রথম হওয়ায়। এ জন্য শুরু থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। স্নাতকের চার বছরেই প্রথম স্থান ধরে রাখতে পেরেছি। আমার ধ্যান-জ্ঞান ছিল অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায়। সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় যেহেতু অ্যাকাডেমিক থেকে ৬০০ নম্বর কাভার করে তাই আগে থেকেই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় ভালো থাকায় সুবিধা পেয়েছিলাম। পরীক্ষার জন্য সাধারণ অংশের চেয়ে আইন অংশে আমার প্রস্তুতি ভালো ছিল। আমার মনে হয় এজন্য আমি ভালো ফলাফল করতে পেরেছি।’
সহকারী জজ নিয়োগের প্রস্তুতির বিষয়ে নুসরাত বলেন, ‘যেহেতু স্নাতকে ভালো ফল আছে। তাই স্নাতকোত্তরেও ভালো ফলাফল করার জন্য মনোযোগী হই। এর মাঝেই সহকারী জজ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আসে। সেখানে আবেদন করি। যেহেতু আবেদন করেছি, তাই ইচ্ছে ছিল যেন কোয়ালিফাই করতে পারি। অ্যাকাডেমিক অংশের প্রস্তুতি আগে থেকে থাকলেও সাধারণ অংশের প্রস্তুতি তেমন ছিল না। আবেদনের পরপর সাধারণ অংশের জন্য জোরালো প্রস্তুতি শুরু করি। সিনিয়ার আপুদের পরামর্শ আমার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে আগের বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত সাদিয়া হক আপুর দিকনির্দেশনা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।’
নুসরাত জেরিনের মতে, প্রথম বর্ষ থেকেই যেহেতু তিনি পড়াশোনা করেছিলেন, এর সুবিধা পেয়েছেন সহকারী জজ নিয়োগের পরীক্ষায়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়া বিষয়গুলো চাকরির পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ‘সহকারী জজ নিয়োগের যে সিলেবাস তার মধ্যে ৬০ শতাংশ অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার মধ্যে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এ পড়াগুলো বারবার পড়েছি।’ আজকের সফলতার জন্য মা–বাবা, শিক্ষক ও বন্ধু সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।