রূপালী ব্যাংকের নিয়োগপত্র পেলাম ১১ মাস পর, দেখতে পেলেন না বাবা

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত রূপালী ব্যাংকে অফিসার (সাধারণ) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে নিয়োগপত্র পাওয়া শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি প্রার্থী নিয়োগপত্র পেয়েছেন, তবে দীর্ঘ ১১ মাস পর নিয়োগপত্র পেয়ে প্রার্থীরা বলছেন, তাঁরা চাকরি পাওয়ার আনন্দই ভুলে গিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগপত্র পাওয়া একজন প্রার্থী বলেন, ‘দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের। তা ছাড়া বয়স শেষের দিকে চাকরি পাওয়ায় এটা বাড়তি খুশি। আমার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, ত্যাগের ফলাফল হাতে পেলাম। পরিবারের সবাই এতে খুশি হয়েছে।

আমার বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলে অফিসার হবে। কিন্তু আমার সফলতা বাবা দেখে যেতে পারেননি, এটাই আফসোস।’

আরেকজন প্রার্থী বলেন, ‘দীর্ঘ ১১ মাস পর আমরা নিয়োগপত্র পেলাম। আসলে এই দীর্ঘ সময়ে আমরা চাকরি পাওয়ার আনন্দ ভুলে গিয়েছিলাম। কারণ, আমাদের অসংখ্যবার শুনতে হয়েছে আমরা আসলে চাকরি পেয়েছি কি না। যা–ই হোক, ১১ মাস পর হলেও নির্বাচনের আগে ম্যানেজমেন্ট আমাদের নিয়োগপত্র দিয়েছে, এ জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা ম্যানেজমেন্টের কাছে প্রত্যাশা করব পরবর্তী নিয়োগগুলো যেন তারা দ্রুততার সঙ্গে করে। চাকরিপ্রাপ্ত বেকার যেন কারও পরিচয় না হয়। সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার তিন থেকে চার মাসের মধ্যে যেন নিয়োগপত্র দেয়, সে আশা করছি।’

রূপালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত অন্য ব্যাংকগুলোয় নিয়োগ দেওয়ার পর প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়।

আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর নিয়োগপত্র দিই। এ জন্য আমাদের একটু বেশি সময় লাগে।

অফিসার পদের প্রার্থীদের নিয়োগপত্র ৫ ডিসেম্বর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধেক প্রার্থী নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন, বাকিরাও পর্যায়ক্রমে পেয়ে যাবেন।’

নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে প্রার্থীরা আগামী ১১ জানুয়ারি যোগদান করতে পারবেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

নিয়োগপত্র পাওয়া আরেকজন প্রার্থী বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর যখন দিশাহীন ছিলাম, নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রথম আলোতে খবর প্রকাশের পর আমাদের মনে আশার সঞ্চার করত। ভাবতাম রিপোর্ট যেহেতু হয়েছে, নিয়োগ খুব দ্রুত হবে। নিয়োগপত্র সত্যি সত্যি পেয়ে গেলাম। অনেক ভালো লাগছে।’

আরেকজন প্রার্থী বলেন, ‘আমি ১০ম গ্রেডে ২০১৯ সালভিত্তিক চাকরির লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভাইভা দেইনি। পরবর্তীকালে দেখি ২০১৯ সালের ভিত্তিতে অনেক ব্যাংকের যোগদান হয়ে গেছে, খুবই আফসোস লাগছিল কেন ভাইভা দিলাম না। অনেকে মনে করেছে, আমার চাকরি হওয়ার বিষয়টাই মিথ্যা। এই ১১টা মাস অসহায়ের মতো কেটেছে। নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে সব হতাশা কেটে গেছে।’

সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত ৯ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার (সাধারণ) পদে জনবল নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই বছর পর গত বছরের ৭ জানুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রিলিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১৮ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল দেওয়া হয় গত বছরের ৫ মে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা শেষে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি নিয়োগের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়। অন্যান্য ব্যাংকে যাঁরা সুপারিশ পেয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু রূপালী ব্যাংকের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা ১১ মাস পর নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া শুরু করেছেন।

দীর্ঘদিনেও নিয়োগপত্র না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়েছে। আবার অনেকে এই চাকরি পাওয়ার কারণে নিচের গ্রেডের অন্য চাকরি পেয়েও যোগদান করেননি। এ কারণে এই চাকরির আশায় বেকার থাকতে হয়েছে তাঁদের। সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের ভোগান্তি নিয়ে গত ১০ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘সুপারিশের ১০ মাসেও নিয়োগপত্র দিচ্ছে না রূপালী ব্যাংক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।