প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন ধরনের নিয়োগসংক্রান্ত দাবি করা অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহিল আজম। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে এনটিআরসিএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলেনে এ মন্তব্য করেন তিনি। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরুর পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করল।
সংবাদ সম্মেলেনে লিখিত বক্তব্যে মো. সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের এনটিআরসিএ থেকে শুধু প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হতো। প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হতো না। সেই সময়ে নিয়োগের দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির। তাই প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের এ কার্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগসংক্রান্ত দাবি করা অযৌক্তিক। কারণ, তখন এনটিআরসিএর নিয়োগ কার্যক্রমসংক্রান্ত কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না।
চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০০৫–এর ১০(২) অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত শিক্ষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, নিবন্ধিত ও প্রত্যয়নকৃত না হলে কোনো ব্যক্তি কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এ কার্যালয় থেকে ১ম–১২তম প্রার্থীদের অনুকূলে সরবরাহ করা সনদপত্র শুধু প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে আবেদন করার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। এই সনদপত্র কোনোভাবে চাকুরির নিশ্চয়তা প্রদান করে না। এ বিষয়ে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ও পেশাজীবী অসৎ উদ্দেশ্যে নিবন্ধিত প্রার্থীদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কার্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।
মো. সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীরা পঞ্চম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছিলেন। হাইকোর্ট পঞ্চম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পিটিশনারদের আবেদনপত্র গ্রহণের জন্য এ কার্যালয়কে নির্দেশ দেয়। পরে আপিল করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর এ বছরের ৩ এপ্রিল স্থগিতাদেশ দেন। সে আদেশ অনুযায়ী এনটিআরসিএর কার্যক্রম চলমান আছে। এখানে ১ম থেকে ১২তম এবং ১৩তম ও ১৪তম ব্যাচের যেসব প্রার্থী বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে আন্দোলন করছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বিভিন্ন ধরনের কমিটি প্রকাশ করছেন; আমাদের কাছে অনেকে অভিযোগ করেছেন, উক্ত কমিটির মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করে এনটিআরসিএ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এর ফলে এনটিআরসিএ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কিছুসংখ্যক ব্যক্তি প্রার্থীদের মামলায় জিতিয়ে দেবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং সে জন্য মামলা পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের নামে চাঁদা সংগ্রহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করছেন এবং জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছেন। তাঁদের এমন কার্যক্রমের ফলে এ কার্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মো. সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, ১৩তম ও ১৪তম ব্যাচের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বলা হয়, এই দুই ব্যাচের নিবন্ধনধারী প্রার্থীরা নিয়োগের দাবি করে অনেকগুলো রিট মামলা করেন। মামলায় প্রার্থীদের সনদপত্রের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে তিন বছর বহাল থাকবে মর্মে রায় দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী, নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে তিন বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং প্রার্থীদের বয়স নিয়োগ সুপারিশের জন্য ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে প্রার্থীর ক্ষেত্রে যেটি আগে ঘটবে, সেটি কার্যকর হবে। বিদ্যমান রায়ের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। এনটিআরসিএ আপিল বিভাগের এই রায় অনুসরণ করে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনটিআরসিএর সদস্য (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী (যুগ্মসচিব) ও সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এনটিআরসিএ ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারটি গণবিজ্ঞপ্তি এবং একটি বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৩১ প্রার্থীকে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে।