পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা

‘একটি নিয়োগ হাজারো নারীকে মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করছে’

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০ পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সাড়ে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে। এ পদটি শুধু নারীদের জন্য। ৭ হাজার ৬২১ জন নারী প্রার্থী চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষায়, যাঁদের অধিকাংশই বিবাহিত।

এ পদের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক শারীরিক সুস্থতা ও অন্তঃসত্ত্বা নয় মর্মে সনদ জমা দিতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল হবে।

চূড়ান্ত ফলের অপেক্ষায় থাকা নারী প্রার্থীরা বলছেন, এ পদে ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। যখন আবেদন করা হয়েছে, তখন অনেক প্রার্থী বিয়ে না করলেও গত সাড়ে তিন বছরে প্রায় সব প্রার্থীর বিয়ে হয়েছে। কারও কারও বিয়ের তিন থেকে চার বছরও হয়েছে। যেকোনো সময় চূড়ান্ত ফল হতে পারে। তাই নারী প্রার্থীরা গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায় যেতে পারছেন না। কারণ, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, চাকরিতে যোগদানের সময় অন্তঃসত্ত্বা থাকা যাবে না। শর্তের জালে আটকে আছে তাঁদের মাতৃত্ব।

এ নিয়ে গতকাল রোববার প্রথম আলো অনলাইনে ‘পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চূড়ান্ত ফল হয়নি, চাকরির শর্তে মা হতে পারছেন না প্রার্থীরা’ প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেক পাঠক ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আল আমিন নামে একজন পাঠক লিখেছেন, সাড়ে তিন বছরে একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না করতে পারাটা আসলেই দুঃখজনক। এ একটি নিয়োগ হাজারো নারীকে মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করছে, কর্তৃপক্ষের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা।

শাহাদাত হোসেন নামে আরেকজন পাঠকের মন্তব্য, ‘এ চাকরির বেশ কিছু শর্ত অমানবিক। যা অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক প্রশাসনেও পালন করা হয় না। চাকরি প্রার্থীদের নিজেদের জীবনকে তারা চাকরির দেওয়ার বা পাওয়ার আগেই বিধিনিষেধ জালে আটকে দিয়েছে। তাই দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করে যাঁদের চাকরি হবে না তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’

জয় চক্রবর্তী নামে একজন মন্তব্য, ‘বিবাহিত, অবিবাহিত বা বাচ্চা থাকা না থাকার এ ধরনের মানবাধিকার পরিপন্থী শর্তগুলো বাতিল করা উচিত। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে প্রার্থীর আবেদনের যোগ্যতা থাকলে চাকরি পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হলে তাঁকে চাকরিতে নেওয়া উচিত।’

মাহফুজ রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘মা হওয়া যাবে না, বিবাহিত হওয়া যাবে না। এসব উদ্ভট শর্ত শুধুমাত্র এ দেশেই সম্ভব।’

দীপ্ত রায় নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘শুধু  পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর না, আরও অনেক দপ্তর আছে যেমন সমাজসেবা অধিদপ্তর। এসব অধিদপ্তর বেকারদের মানুষ মনে করে না। নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, অন্যের কথা চিন্তা করার সময় নেই তাদের।’