ব্যবসায়িক সাফল্য ও গ্রাহক সম্পর্কের উন্নতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ব্র্যান্ডিংয়ের ভূমিকা

বর্তমান যুগে ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। এখন ব্র্যান্ডিং আর শুধু লোগো বা বিজ্ঞাপনের বিষয় নয়, বরং এটি বিশ্বাস তৈরি, সম্পর্ক গড়ার এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত, যেখানে ৬০টির বেশি ব্যাংক রয়েছে, সেখানে কার্যকর ব্র্যান্ডিং একটি ব্যবসায়িক কৌশল নয় বরং আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্র্যান্ডিং কেন ব্যাংকগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

ব্যাংকিং স্বভাবতই একটি বিশ্বাস যেকোনো পণ্য বা ব্যবসার ওপর। গ্রাহকেরা তাঁদের সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ব্যাংকের হাতে তুলে দেয়। এই বিশ্বাস অর্জন এবং প্রতিপালন করতে হবে শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং কৌশল দ্বারা।

বাংলাদেশে এই বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারি, অপব্যবহার ও ত্রুটি গ্রাহকদের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের (২০২৪) এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬৫ শতাংশ গ্রাহক তাঁদের ব্যাংক নির্বাচন করার সময় বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।

বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিংয়ের প্রভাব আর্থিক সফলতায় প্রতিফলিত হয় সব সময়। McKinsey–এর গবেষণায় জানা গেছে, ব্র্যান্ডিংয়ে শক্তিশালী ব্যাংকগুলো প্রতিযোগীদের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি গ্রাহক ধরে রাখতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও গ্রাহক-কেন্দ্রিক ব্যাংকগুলো গত তিন বছরে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ শতাংশ।

ব্যাংক ব্র্যান্ডিংয়ের মূল উপাদানগুলো কী কী?

১. বিশ্বাস এবং নির্ভরযোগ্যতা

বাংলাদেশে যেখানে আর্থিক সাক্ষরতার হার এখনো অনেক কম, সেখানে বিশ্বাস গড়তে সেবা এবং যোগাযোগের ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লিওনার্ড বেরির (২০০০) গবেষণা অনুযায়ী, যারা নির্ভরযোগ্য এবং আশা অনুযায়ী সেবা প্রদান করে, তাদের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বজায় থাকে। যেমন ব্র্যাক ব্যাংক ‘ছোট ও মাঝারি উদ্যোগক্তাদের ব্যাংক’ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং এটি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিশ্বস্ততার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

২. ডিজিটাল গ্রহণযোগ্যতা

আর্থিক খাতে ডিজিটাল রূপান্তরের পাশাপাশি ব্র্যান্ডিংকেও পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মগুলো, যেমন বিকাশ ও নগদ, ডিজিটাল গ্রহণযোগ্যতায় উদাহরণ তৈরি করেছে। সহজে ব্যবহারযোগ্য অ্যাপস, ব্যক্তিগতকৃত নোটিফিকেশন এবং সহজ লেনদেনের অভিজ্ঞতা একটি প্রতিষ্ঠানের আধুনিক এবং গ্রাহকবান্ধব চিত্র গড়ে তোলে।

৩. স্থানীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় দেশ। যে ব্যাংকগুলো তাদের ব্র্যান্ডিং স্থানীয় ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে পারে, সেগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে যুক্ত হতে পারে। যেমন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ইসলামিক ব্যাংকিং নীতির প্রতি তার আনুগত্য প্রদর্শন করে, যা দেশের বৃহত্তর মুসলিম জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে।

৪. দৃষ্টিনন্দন পরিচয় এবং ধারাবাহিকতা

একটি সহজে চেনা যায়, এমন লোগো, সামঞ্জস্যপূর্ণ রং এবং একটি ইউনিফাইড ডিজাইন একটি স্মরণীয় ব্র্যান্ড তৈরি করে। ডেভিড অ্যাকার (১৯৯৬) বলেন, একটি শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটি ব্র্যান্ড রিকল বাড়াতে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা করতে পারে। যেমন ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক তার নীল এবং সবুজ রঙের মাধ্যমে বিশ্বাস এবং উন্নতির বার্তা দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, যমুনা ব্যাংক সম্প্রতি তার লোগো পরিবর্তন করেছে আধুনিকতা এবং ভবিষ্যৎ চিন্তা করার প্রতীক হিসেবে। নতুন লোগোটি একটি পরিষ্কার, আধুনিক ডিজাইন, যা শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক। এটি যমুনা ব্যাংকের গ্রাহকদের প্রতি প্রতিশ্রুতির ও আস্থা বাড়াতে সাহায্য করবে, বিশেষত তরুণ ও প্রযুক্তিসচেতন গ্রাহকদের জন্য।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ব্র্যান্ডিংয়ের চর্চা কেমন হওয়া উচিত?

১. গ্রাহকচাহিদা বোঝা

বাংলাদেশের জনসংখ্যা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। শহরাঞ্চলের গ্রাহকেরা ডিজিটাল সুবিধাকে গুরুত্ব দেয়, আর গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকেরা ব্যাংক কর্মীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনকে প্রাধান্য দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত একটি গবেষণায় জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকেরা ২০ শতাংশ বেশি ব্যাংক পছন্দ করেন, যারা ব্যক্তিগত সেবা প্রদান করে।

২. কর্মীদের আত্মতুষ্টি

কর্মীরা ব্যাংকের ব্র্যান্ডের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতিনিধি। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাংকের মূলবোধ ধারণ করানো জরুরি, যাতে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা একরকম থাকে। ডোব্রি এবং পেজ (১৯৯০) জানিয়েছেন, কর্মীদের আত্মতুষ্টি গ্রাহকের আস্থাকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলাদেশে সিটি ব্যাংক তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করছে।

৩. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যাংক ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য একটি সাশ্রয়ী উপায়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে খুব সহজেই যুক্ত থাকতে পারে, আর্থিক সাক্ষরতা প্রচার করতে পারে এবং তাদের সাফল্যগাথা শেয়ার করতে পারে। ২০২৩ সালে একটি মেটা গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ বাংলাদেশি গ্রাহক ব্যাংকগুলোকে পছন্দ করেন, যারা ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে সক্রিয়ভাবে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

৪. কমিউনিটি সম্পৃক্ততা

সিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে কমিউনিটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন গ্রাহকদের কাছে ব্যাংকের ইমোশনাল সংযোগ বৃদ্ধি করে।

বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিংয়ের উদাহরণ

বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সফল উদাহরণ স্থাপন করেছে:

জেপি মরগ্যান চেজ (যুক্তরাষ্ট্র): ব্যাংকটি প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শক্তিশালী বিশ্বাসের ওপর মনোযোগ দিয়ে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করেছে।

ডিবিএস ব্যাংক (সিঙ্গাপুর): ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে, যা ‘বিশ্বের সেরা ডিজিটাল ব্যাংক’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

সান্তান্ডার (স্পেন): ব্যাংকটি ক্রীড়া স্পনসরশিপ ব্যবহার করে তরুণ গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ব্র্যান্ডিংয়ের জোড় প্রয়োগ করেছে।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এসব কৌশল গ্রহণ করে গ্রাহককেন্দ্রিক উদ্ভাবনে মনোযোগ দিয়ে এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে মেনে নিজেদের ব্র্যান্ড শক্তিশালী করতে পারে।

চ্যালেঞ্জ

বিশ্বাসের অভাব: গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোর ওপর জনগণের বিশ্বাস কমেছে নানা আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার হ্যাকিং কেলেঙ্কারিতে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। এমন ঘটনাগুলো মানুষকে চিন্তিত করে তোলে, তারা ভাবতে শুরু করে তাদের টাকা নিরাপদ আছে কি না। এ ছাড়া কিছু ব্যাংকের খারাপ ঋণ এবং দুর্নীতির রিপোর্টও গ্রাহকদের মনে ব্যাংকের সততা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। যখন মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়, তখন তারা ব্যাংকে টাকা জমা বা বিনিয়োগ করতে ভয় পায়, যা পুরো আর্থিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সীমিত আর্থিক সাক্ষরতা: বাংলাদেশের অনেক মানুষ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আধুনিক ব্যাংকিং সেবাগুলো, যেমন অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ বা এটিএম ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়েন। উদাহরণস্বরূপ, কিছু গ্রাহক এখনো ক্যাশ ট্রানজেকশন বা অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণদাতাদের পছন্দ করেন। কারণ, তাঁরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে বিভ্রান্তিকর মনে করেন। এতে ব্যাংকগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। কারণ, গ্রাহকেরা ব্যাংকের সেবাগুলো ব্যবহার করতে আগ্রহী হন না। সোজা ভাষায়, ক্যাম্পেইন ও কর্মশালার মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষিত করলে এই সমস্যা দূর করা যেতে পারে, যাতে তাঁরা আধুনিক ব্যাংকিং টুলস ব্যবহার করতে পারেন এবং উপকৃত হতে পারেন।

নতুনত্ব ও ঐতিহ্যের মধ্যে সমন্বয়: মোবাইল অ্যাপ এবং অনলাইন লেনদেনের মতো ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা তরুণ ও প্রযুক্তিপ্রিয় গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে অপরিহার্য। তবে অনেক মানুষ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বা প্রবীণ জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংক কর্মীদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে করতে পছন্দ করেন এবং তাঁরা প্রায়ই শাখায় গিয়ে তাঁদের প্রয়োজন সম্পর্কে কথা বলতে চান। ব্যাংকগুলোকে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, তবে একে অপরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সেবাও রাখতে হবে। এর মাধ্যমে সবাই, তাঁদের পছন্দ যা–ই হোক না কেন, সঠিক সহায়তা পাবেন।

সুযোগ

যুবসমাজের সম্পৃক্ততা: বাংলাদেশে তরুণ, প্রযুক্তিপ্রিয় জনগণের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে, যাঁরা ডিজিটাল সেবাগুলো দ্রুত গ্রহণ করতে পারেন। ব্যাংকগুলো এই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সেবা আকর্ষণীয় করে তুলে তরুণদের কাছে পৌঁছাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এমন গেমিফাইড অ্যাপ তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে ব্যবহারকারীরা আর্থিক শিক্ষা এবং সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হবেন। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মিডিয়া চ্যানেলে তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে ব্যাংকগুলো ডিজিটাল ক্যাম্পেইন চালাতে পারে। এসব ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তরুণদের মধ্যে তাদের সেবা–সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হবে।

ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি: বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে, বিশেষ করে সাশ্রয়ী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, অনলাইনে প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন। ফলে অনলাইন ব্র্যান্ডিং এবং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সুযোগ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো এই প্রবণতা ব্যবহার করে সহজলভ্য অ্যাপস, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারে।

সরকারি সহায়তা: ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’–এর মতো প্রোগ্রাম ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন সেবা উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত করে, ফলে ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন ডিজিটাল সেবা তৈরি এবং তাদের কাছে সহজেই পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।

একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং কৌশলের রোডম্যাপ

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য ব্র্যান্ডিং শুধু সৌন্দর্যগত বিষয় নয়, এটি বিশ্বাস তৈরি, সম্পর্ক স্থাপন এবং ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ঘটানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। গ্রাহকচাহিদা, ডিজিটাল টুলস ব্যবহার এবং বৈশ্বিক নেতাদের কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো তাদের ব্র্যান্ড শক্তিশালী করতে পারে, যা শুধু ব্যাংকগুলোর সাফল্যই নিশ্চিত করবে না, বরং জাতির আর্থিক ক্ষমতায়নেও অবদান রাখবে। তাদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা যেতে পারে, যা নিম্নলিখিতভাবে হতে পারে—

ক. গ্রাহক-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ

১. গ্রাহকদের চাহিদা বুঝে ব্যাংকের সেবা এবং ব্র্যান্ডিং কৌশল তৈরি করা।

২.শহর এবং গ্রামাঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য বুঝে পৃথক কৌশল গ্রহণ।

খ. ডিজিটাল ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্প্রসারণ

১. মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন এবং ব্যবহারবান্ধব ডিজাইন তৈরি করা।

২. ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, অ্যাপস এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

গ. বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সততার ওপর জোর দেওয়া

১. গ্রাহকদের কাছে একটি ব্যাংককে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পরিষ্কার এবং সহজ যোগাযোগ তৈরি করা।

২. ব্যাংকিং ফি, শর্তাবলি এবং অন্যান্য নীতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং যোগাযোগে স্বচ্ছতা আনা।

ঘ. কমিউনিটি ও সামাজিক দায়িত্ব (CSR) কার্যক্রমে অংশগ্রহণ

১. সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং আর্থিক শিক্ষাসম্পর্কিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা।

২. সমাজের বিভিন্ন প্রান্তে সহায়তার জন্য সিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্র্যান্ড ইকুইটি শক্তিশালী করা।

ঙ. কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন

১. কর্মচারীদের ব্যাংকের ব্র্যান্ডের প্রতি আনুগত্য এবং গ্রাহকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য প্রশিক্ষিত করা

২. গ্রাহকদের সন্তুষ্টি এবং আস্থার মান বাড়ানোর জন্য একে অপরের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব গড়ে তোলা।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ব্র্যান্ডিং এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তিশালী ব্র্যান্ড গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে বিশ্বাস এবং সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হবে, যা তাদের বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সহায়ক হবে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, গ্রাহক-কেন্দ্রিক কৌশল এবং কার্যকর সিএসআর কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো একটি শক্তিশালী ও লাভজনক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

এমন একটি ব্র্যান্ডিং কৌশল কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি শুধু ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়াবে না, বরং দেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করবে।