হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়

স্বেচ্ছায় পদত্যাগে পেনশন সুবিধা পেতে বাধা হবে না

হাইকোর্ট ভবন
ফাইল ছবি

সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে পেনশন সুবিধা না পাওয়াসংক্রান্ত বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের অংশবিশেষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৮ মার্চ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। ২৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের বিধি-৩০০(এ) অনুযায়ী, সরকারি চাকরি থেকে কেউ পদত্যাগ করলে অথবা অসদাচরণ, দেউলিয়া, অদক্ষতা অথবা নির্ধারিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারিত হলে তাঁর চাকরি বাজেয়াপ্ত বলে বিবেচিত হয়। তবে বিধির ৩০০(বি) বলছে, অন্য কোনো পেনশনযোগ্য চাকরিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে কেউ পদত্যাগ করলে তা সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ হিসেবে গণ্য হবে না। হাইকোর্ট চাকরি থেকে পদত্যাগের কারণে পেনশন না পাওয়াসংক্রান্ত বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের (বিএসআর) প্রথম খণ্ডের বিধি-৩০০(এ) অংশটুকু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছেন।

রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, অতিরিক্ত জেলা জজ মাহবুব মোরশেদ ২০১১ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দেন। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁর পদত্যাগপত্র কার্যকর হয়। পরবর্তী সময়ে এককালীন পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তিনি। আবেদন মঞ্জুরের কথা জানিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৫ সালে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। ওই বছরের ২৫ মার্চ প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মাহবুব মোরশেদের পেনশনসংক্রান্ত কেসটি (বিষয়) ফেরত দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে আগের চাকরিকাল বাজেয়াপ্ত (যত দিন চাকরিতে ছিলেন) হবে অর্থাৎ পেনশনের জন্য তা গণনাযোগ্য হবে না (বিএসআর প্রথম খণ্ডের বিধি-৩০০ সেকশন-৩)। পেনশনারের (মাহবুব মোরশেদ) চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি। তিনি ২৫ বছর পূর্তি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে পেনশনের জন্য কোনো আবেদন করেননি বলে পেনশনপ্রাপ্ত নন (১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী অবসর আইনের ৯ ধারা)।

এ অবস্থায় বিধি-৩০০ এবং ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জে করে মাহবুব মোরশেদ ২০১৬ সালে রিট করেন। শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৮ মে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১৮ মার্চ রায় দেন। হাইকোর্ট ২০১৫ সালের ২৫ মার্চের ওই চিঠি আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বাতিল ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে চাকরির মেয়াদ অনুসারে মাহবুব মোরশেদের পেনশন ও অন্যান্য বকেয়া সুবিধা গণনা এবং মঞ্জুর করতে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

মাহবুব মোরশেদ বর্তমানে পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। গতকাল শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পেনশন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ৩০০(এ) বিধির অংশবিশেষ অন্তরায় ছিল। হাইকোর্টের রায়ের ফলে স্বেচ্ছায় কেউ পদত্যাগ করলে চাকরিরর মেয়াদ অনুযায়ী পেনশনসহ চাকরির অন্যান্য সুবিধাদি পেতে আর বাধা থাকল না।