জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

বিসিএস ছাড়াই ক্যাডারভুক্ত ও জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার অভিযোগ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ২৫ জন ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি না দিয়েই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, নন–ক্যাডার এবং পিএসসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত ও জ্যেষ্ঠতা প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আইন সংশোধন করে তাঁদের ক্যাডারভুক্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আগের ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই।

১৫ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে জনস্বাস্থ্যে ক্যাডার পদ সৃষ্টির পূর্বেই ওই পদে ভূতাপেক্ষভাবে কর্মকর্তাদের পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতি প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, এটি পুরোপুরি অবৈধ। শুধু তাই নয়, রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ হতে উক্ত ৯০ জনকে ক্যাডারভুক্ত করায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, পদোন্নতিপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা উক্ত ৯০ জন কর্মকর্তার তুলনায় জ্যেষ্ঠতায় পিছিয়ে পড়েছেন। এতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাঁরা সবাই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৮তম, ৩০তম, ৩১তম, ও ৩২তম বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা কর্মরত আছেন।

জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিভিন্ন সময়ে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত ৩২ জন ও বিভিন্ন সময়ে নন-ক্যাডার ও পিএসসি হতে নিয়োগকৃত ৫৮ জনসহ মোট ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্তির উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৩০ মে বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করেছে। উক্ত বিধিমালায় ক্যাডারভুক্তির সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না করে ‘অবিলম্বে কার্যকর’ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয় অর্থাৎ তাঁদেরকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) ক্যাডারের উক্ত সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালার অপব্যাখ্যা করে পূর্বের তারিখে ৯০ জন কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

ক্যাডারভুক্তির উক্ত প্রজ্ঞাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, উক্ত ক্যাডার পদগুলো সৃষ্টি হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু তাঁদের ক্যাডারভুক্ত দেখানো হয়েছে বহু আগে ১ জুলাই ২০০৪ সাল থেকে।

সূত্র জানায়, একই বিষয়ে ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন ব্যতিরেকেই রাজস্ব বাজেটে পদায়নের তারিখ দেখিয়ে ৯৫ জন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। উক্ত প্রজ্ঞাপনে ক্যাডারভুক্তির বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় প্রেরিত সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হলেও ৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে কর্ম কমিশন সচিবালয় ‘আলোচ্য কর্মকর্তাদের সুপারিশসংক্রান্ত কোনো রেকর্ড কর্ম কমিশনে খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না’ মর্মে জানায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখে শুনেই নেবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রনালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা তা বাস্তবায়ন করব।
মো. সাইফুর রহমান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী

ক্যাডার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মূলত অবৈধভাবে বিপুল অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে একটি প্রভাবশালী মহল এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল মর্মে জানা যায়। রুলস অব বিজনেসকে পাশ কাটিয়ে নিয়োগবিধি সংশোধন ব্যতিরেকে উক্ত প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে প্রজ্ঞাপন বাতিলের জন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। পরবর্তীকালে ৯ জুন ২০১৯ স্থানীয় সরকার বিভাগ উক্ত কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্তির আদেশ যথাযথভাবে জারির সুবিধার্থে প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে।

জানা যায়, ২০১৯ সালে ৯৫ জনের ক্যাডারভুক্তির প্রজ্ঞাপনটি নিয়োগবিধি সংশোধন ব্যতিরেকেই করা হয় আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংশোধিত নিয়োগবিধি অনুসরণ না করে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ বছরের ১৫ জুন পূর্বের ন্যায় কর্মকর্তাদের রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ দেখিয়ে ৯০ জনের প্রজ্ঞাপনটি অনৈতিক ও নিয়মবহির্ভূতভাবে জারি করে।

এদিকে উক্ত কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হলে এ বছরের ১০ জানুয়ারি সরকারি কর্ম কমিশন সহকারী প্রকৌশলীর সরাসরি নিয়োগযোগ্য ১৫৬টি পদে প্রস্তাবিত ৯০ জন কর্মকর্তাকে ক্যাডার পদে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কর্মরতদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিধিসম্মতভাবে পদোন্নতিসহ অবশিষ্ট পদের জন্য ইতিপূর্বে পাঠানো ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে পূরণযোগ্য শূন্য পদের সংশোধিত চাহিদা প্রেরণের জন্য অনুরোধ করে। সে অনুযায়ী সরাসরি ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৫ জন ক্যাডার কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী (ক্যাডার) পদে পদোন্নতির সব শর্তাবলি ও মেয়াদকাল পূরণ করেছেন ও অচিরেই তাঁরা পদোন্নতি পাবেন এবং তাঁদের পদ শূন্য হবে দেখিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ৪৩তম বিসিএসের চাহিদাপত্র পাঠায়। কিন্তু বাস্তবে উক্ত ২৫ জন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, কয়েকটি ক্যাডার বাদে অন্য ক্যাডার সার্ভিসে যোগ্যতা থাকলেও পদ শূন্য না থাকায় পদোন্নতি দেওয়া যায় না। কিন্তু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে কর্মরত ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতির সব শর্তাবলি ও যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও তাঁরা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। বরং ওই অবৈধ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এখন তাঁদের সিনিয়রিটির দিক থেকে পিছিয়ে দিয়ে পদোন্নতির দরজা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হলো—বিষয়টি যেন দেখার কেউই নেই। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আসা কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তির নিয়ম থাকলেও তা কীভাবে রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ৯০ কর্মকর্তা ক্যাডারভুক্ত করা হলো, তা সত্যিই বিস্ময়কর ও নিবিড় তদন্তের দাবি রাখে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখে শুনেই নেবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রনালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা তা বাস্তবায়ন করব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনক্যাডারমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ও এই পদোন্নতিসংক্রান্ত কাজে যুক্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প, নন ক্যাডার এবং পিএসসি হতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছিলেন। আইন সংশোধন করে তাঁদের ক্যাডারভুক্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আগের ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই।